• ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

টেকনাফে ৩৮ জন নিহত, তবু থেমে নেই ইয়াবা পাচার

শাহীন শাহ, টেকনাফ

  ২৭ জানুয়ারি ২০১৯, ১৫:৪৭

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটা অংশ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। এখনও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ফাঁকি দিয়ে বাড়ছে ইয়াবার লেনদেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, ইয়াবা আসছে মিয়ানমার থেকে। টেকনাফ রুটটিকে ইয়াবা পাচারের জন্য অন্যতম পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করে থাকে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে ২০১৮ সালের মে মাসের শুরুতে সারাদেশে মাদক বিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ অংশ হিসেবে সীমান্তে উপজেলা টেকনাফেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এখন পর্যন্ত ৩৮ জন কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন। এর মাঝেও ইয়াবা পাচার থেমে নেই। স্থল পথ, নৌ পথ এবং মাঝে মধ্যে আকাশ পথেও প্রতিদিন কোনও না কোনও পয়েন্টে ইয়াবাসহ পাচারকারী আটক হচ্ছে। আবার মাঝে মধ্যে পাচারকারীরা পালিয়ে যাওয়ায় পরিত্যক্ত ইয়াবা উদ্ধার করে টেকনাফে দায়িত্বরত বর্ডার গার্ড (বিজিবি) ও কোস্টগার্ড।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মূলত টেকনাফ উপজেলা মিয়ানমারের সঙ্গে লাগোয়া হওয়ায় ইয়াবাসহ অনেক মাদক সহজেই আদান-প্রদান করা যায়। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যাপারী ও পাচারকারী রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছে। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন রিকশাচালক, দিন মজুর, জেলে, কাঠুরিয়া, জিপ চালক, হেলপারসহ (চান্দের গাড়ি) আরও অনেক পেশাজীবীর মানুষ। হঠাৎ করে তাদের প্রাসাদ অট্টালিকা গড়ে তোলায় এসব শ্রেণির লোকজনের নাম মানুষের মুখে মুখে।

এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক মাদকের ব্যাপারে জিরো টলারেন্স ঘোষণার পর গত মে মাস থেকে দেশব্যাপী একযোগে মাদক বিরোধী সাঁড়াশী অভিযান শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এতে সারাদেশে মাদক ব্যবসায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অথবা নিজেদের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় নিহত হন অনেকে।

এরই ধারাবাহিকতায় ইয়াবার প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত টেকনাফেও শুরু হয় মাদক বিরোধী এ বিশেষ অভিযান। শুরুতে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা এ অভিযানকে তেমন একটা পাত্তা না দিলেও পরবর্তীতে একের পর এক মাদক ব্যবসায়ীর গ্রেপ্তার ও বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটতে থাকলে নড়েচড়ে বসে সীমান্তের শীর্ষ ইয়াবা কারবারিরা। এরপর চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা গা ঢাকা দিতে শুরু করে। খা খা করতে থাকে তাদের প্রাসাদগুলো। একপর্যায়ে গত অক্টোবর মাসে প্রদীপ কুমার দাস টেকনাফ থানায় ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন। এরপর অভিযানের তীব্রতা বেড়ে যায় বহুগুণে। বাড়তে থাকে কথিত বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা। শুধু বন্দুকযুদ্ধই নয় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অট্টালিকাগুলোতে আঘাত হেনে তাদের দুর্বল করা হয়।

অভিযানের তীব্রতায় দিশেহারা হয়ে পড়ে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। একদিকে বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক প্রাণহানি, অপরদিকে সুরম্য ইয়াবা প্রাসাদগুলো ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে বুলডোজারের আঘাতে। এ থেকে বাঁচার উপায় খুঁজতে থাকে তারা। জানা যায়, মহেশখালী দ্বীপের জলদস্যুদের মতো আত্মসমর্পণের মাধ্যমে রক্ষা পাওয়া যায় কিনা তা নিয়ে দফায় দফায় গোপন বৈঠক বসে শীর্ষ ইয়াবা গডফাদাররা।

বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় মিডিয়ার মাধ্যমে জনমত তৈরি করে সরকারের নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা গেলে হয়তো আত্মসমর্পণ করে অভিযান থেকে বেঁচে যেতে পারবে তারা। ইতোমধ্যে সেভাবেই প্রস্তুতি গ্রহণ করে আত্মসমর্পণের তালিকা প্রস্তুত করে তারা। আর এর খরচ যোগাতে আত্মসমর্পণে ইচ্ছুক ইয়াবা কারবারিদের কাছ থেকে জনপ্রতি টাকা আদায়ের অভিযোগ রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই এগুচ্ছিল। এরকম আত্মসমর্পণকে অনেকে সাধুবাদও জানিয়েছেন।

কিন্তু এর মাঝে সচেতন মহলে আত্মসমর্পণ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাস দিয়েছে আবার অনেকে সরাসরি তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।

টেকনাফ সরকারি কলেজের সামাজিক বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আবু তাহের জানান, আত্মসমর্পণ করে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মূল ধারায় ফিরে আসুক সমস্যা নেই। তবে ইয়াবা সেবন করে দেশের যুবসমাজ যতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ঠিক তেমনি ইয়াবা ব্যবসায়ীদের রাতারাতি অর্জিত অবৈধ অর্থের কারণে সামাজিক ভারসাম্য-স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়েছে। তাই জলদস্যুদের অস্ত্র সমর্পণের মতো ইয়াবা ব্যবসায়ীদের অর্থসমর্পণ অত্যন্ত জরুরি।

টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গুরা মিয়া গত বুধবার তার ফেসবুকে টাইমলাইনে লিখেছেন- জলদস্যু আর ইয়াবা বিয়ারি এক না। টেকনাফে কিছু সংবাদকর্মী ইদানিং ইয়াবা ব্যবসায়ীর পক্ষে সাফাই গাইতে শুরু করছে। যা প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত মাদকের জিরো টলারেন্স নীতির সঙ্গে অনেকটা সাংঘর্ষিক। তাদের যুক্তি হচ্ছে জলদস্যুরা যদি ক্ষমা পায় মাদক বিয়ারিরা কেন পাবে না? জলদস্যুরা দস্যুমি করে হয়তো গুটি কয়েক জন কে হত্যা করছে কিংবা কিছু টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে সংসার চালিয়েছে। ইয়াবা ব্যবসায়ীরা সমাজসহ জাতিকে ধ্বংস করেছে এবং দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে গেছে।

এমসি/এসএস

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • বিশেষ প্রতিবেদন এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
টেকনাফে পৃথক গোলাগুলির ঘটনায় নিহত ১, আহত ৫
টেকনাফ সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি, আতঙ্কে স্থানীয়রা
টেকনাফে কোটি টাকার আইস উদ্ধার
ধরে নিয়ে যাওয়া ২০ জেলেকে ফেরত দিলো আরাকান আর্মি