বিভীষিকাময় একটি বছর পার করতে চলেছে বিশ্ব। ২০২০ সাল শেষ হতে বাকি মাত্র কয়েকটা দিন। সবাই অপেক্ষায় হয়তো নতুন বছর ২০২১ সালে পাল্টে যাবে সব কিছু! চলতি বছর বিশ্বের নানা প্রান্তে লাশের মিছিলে যোগ দিয়েছে লাখো মানুষ। ক্রীড়াঙ্গনেও ছিল শোকের ছায়া। সুপরিচিত মুখগুলো বিদায় নিয়েছে পৃথিবী ছেড়ে। বেদনাবিধুর এই বছরে মৃত্যু হয়েছে ‘ফুটবল ঈশ্বর’ খ্যাত ডিয়েগো ম্যারাডোনার। মারা গেছেন ইতালির হয়ে বিশ্বকাপ জয়ী পাওলো রসি। বিদায় নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে খেলা একেএম নওশেরুজ্জামান, বাদল রায়, গোলাম রাব্বানী হেলাল, এস এম সালাউদ্দিন আহম্মেদ ও নুরুল হক মানিক।
মে মাসের শেষ দিকে জাতীয় দলের দুইজন সাবেক ফুটবলারে মৃত্যুর সংবাদ শুনতে পায় ক্রীড়াঙ্গন। ৩০ মে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ জনিত কারণে মৃত্যু হয় গোলাম রাব্বানী হেলালের। ‘আবাহনীর হেলাল’ খ্যাত এই তারকা ধানমন্ডির দলটিতে ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৮ সাল পর্যন্ত টানা খেলেছেন। ১৯৮২ সালে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে বিশৃঙ্খলা দেশের ফুটবলের এক আলোচিত ঘটনা। আবাহনীর চার ফুটবলারকে তখন জেলে নেয়া হয়েছিল। হেলালসহ বাকি তিনজন বর্তমান বাফুফে সভাপতি কাজী মো. সালাউদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন চুন্নু ও কাজী আনোয়ার। অবসর নিলেও ফুটবল থেকে দূরে থাকেননি হেলার। দায়িত্ব পালন করেন আবাহনীর পরিচালক হিসেবে। ১৯৭৯ সালে জাতীয় দলে অভিষেক হয় তার। ১৯৮৫ পর্যন্ত নিয়মিত খেলেছেন। ২০০৮ সালে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) নির্বাহী কমিটির সদস্য হয়ে দায়িত্ব পালন করেন হেলাল।
পরদিন ৩১ মে আসে আরেকটা দুঃসংবাদ। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান এস এম সালাউদ্দিন আহম্মেদ। আশির দশকে ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয় এই ডিফেন্ডারের। খেলেছেন বিজেএমসি, ওয়ান্ডারার্স ও মোহামেডানে। কলকাতা মোহামেডানেও খেলেছিলেন সালাউদ্দিন। দেশের জার্সিতে ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত মাঠ মাতিয়েছেন। জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ম্যানেজারের দায়িত্বও পালন করেছিলেন নারায়ণগঞ্জের এই ফুটবলার।
জাতীয় দলের সাবেক মিডফিল্ডার নুরুল হক মানিকের মৃত্যু হয় ১৪ জুন। মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে মারা যান বাফুফের এই কোচ। ১৯৮৫ সালে আরামবাগ দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু। ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল, ব্রাদার্স ইউনিয়ন হয়ে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছেন। প্রতিটি দলেই অধিনায়কত্বের দায়িত্ব পালন করেছিলেন মানিক। ১৯৮৭ থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত জাতীয় দলে খেলেছেন দশ বছর। এশিয়ার কাপ উইনার্স কাপে কলকাতার ইস্টবেঙ্গলের বিপক্ষে আবাহনীর জার্সিতেও একটি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা ছিল মানিকের।
২১ সেপ্টেম্বর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের অন্যতম সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার একেএম নওশেরুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্লু খেতাব পাওয়া এই ফুটবলার ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন। মোহামেডান, ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাব, ওয়ারী ক্লাব, ওয়াপদার, ফায়ার সার্ভিস, ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে খেলেছেন তিনি। স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের হয়ে মহান মু্ক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন মুন্সিগঞ্জে জন্ম নেয়া এই ফুটবলার।
সবাইকে কাঁদিয়ে দেশের ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা বাদল রায় চলে যান নভেম্বরের ২২ তারিখ। লিভার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি যা ছিল চতুর্থ পর্যায়ে। লাল-সবুজ জার্সিতে ১৯৮১ থেকে ৮৬ পর্যন্ত খেলেন এই ফরোয়ার্ড। ১৯৭৭ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত খেলেছেন মোহামেডানের হয়ে। দুইবার অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। পাঁচবার লিগ শিরোপাও জেতার রেকর্ড রয়েছে তার নামের পাশে। অবসরের পর মোহামেডানের ম্যানেজার ও পরিচালকের হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৬ সাল যুক্ত হন ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে । দুই মেয়াদে ছিলেন যুগ্ম সম্পাদক পদে। ২০০৮ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত তিন মেয়াদে সহ-সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) সহ-সভাপতি নিযুক্ত হন তিনি। ২০০৯ সালে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত হন তিনি।
দেশের ফুটবল প্রেমীরা শোক কাটিয়ে ওঠার আগেই ২৫ নভেম্বর ফুটবল মহাতারকা ডিয়েগো ম্যারাডোনার খবর সামনে আসে। বিশ্বকাপ জয়ী আর্জেন্টাইন অধিনায়ক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারাযান। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোতে একক নৈপুণ্যে দক্ষিণ আমেরিকার দেশটিকে সোনালী শিরোপা জেতান। কোয়ার্টার ফাইনালে ‘হ্যান্ড অব গড’ ও ‘গোল অব দ্য সেঞ্চুরি’ হিসেবে পরিচিত দুটি গোল করে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন। ইতালিয়ান দল নেপোলিকে তলানি থেকে চ্যাম্পিয়ন করার কীর্তি রয়েছে তার।
বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের ৯ তারিখ মৃত্যু হয় ইতালিয়ান কিংবদন্তি পাওলো রসির। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ১৯৮২ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয় রসির দল। ওই বিশ্বকাপে গোল্ডেন বুট ও গোল্ডেন বল দুটিই নিজের করে নিয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার।
ওয়াই