টেস্টে বোলার র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষস্থানটা যেন নিজের রাজত্বই বানিয়ে ফেলেছিলেন ডানহাতি পেসার প্যাট কামিন্স। অস্ট্রেলিয়ার এই অধিনায়ক দীর্ঘ ৪ বছর ধরে টেস্ট ক্রিকেটে সেরা বোলারের খেতাবটি নিজের দখলেই রেখেছিলেন। তবে কামিন্সের সেই রাজত্ব দখল করে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের তারকা পেস বোলার জেমস অ্যান্ডারসন।
বয়সকে রীতিমত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আগুনঝরা সুইংয়ে প্রতিপক্ষকে নাজেহাল করে তুলছেন ৪০ বছর বয়সী এ পেসার। সবশেষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টে স্বাগতিকদের গুঁড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে ৭ উইকেট নেন অ্যান্ডারসন। এর প্রভাব পড়েছে আইসিসির সর্বশেষ হালনাগাদকৃত র্যাংকিংয়েও। বোলারদের র্যাকিংয়ে শীর্ষে উঠে এসেছেন তিনি।
ইংল্যান্ডের হয়ে ২০০৩ সালে অভিষেক হয়েছিল জিমির। দুই দশকের ক্যারিয়ারে বয়সে বুড়ো হলেও বলে এতটুকু কমেনি জেমস অ্যান্ডারসনের ধার। এখনও দলের সতীর্থদের সঙ্গে সমানতালে সুইং-জাদু দেখিয়েই যাচ্ছেন এই ইংলিশ পেসার। এবার বিশ্বসেরা বোলারের মুকুট পরে বিশ্ববাসীকে দাপট দেখালেন এই কিংবদন্তি।
আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ে ৮৬৬ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষস্থানে উঠলেও স্বস্তিতে নেই অ্যান্ডারসন। দুইয়ে থাকা ভারতীয় স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিনের (৮৬৪) চেয়ে মাত্র দুইটি রেটিং পয়েন্ট বেশি তার। অন্যদিকে ৮৫৮ পয়েন্ট নিয়ে তিনে নেমে গেছেন কামিন্স।
এদিকে ভারতের মাটিতে চলমান সিরিজেই অ্যান্ডারসনকে ফের হটিয়ে শীর্ষে ওঠার সুযোগ রয়েছে অজি অধিনায়ক কিংবা অশ্বিনের। ফলে অ্যান্ডারনের 'সিংহাসন' বেশ নড়বড়েই বলা যায়। কিন্তু যে বয়সে খেলোয়াড়ি জীবন ছেড়ে অনেকেই কোচিং পেশা কিংবা অন্য কাজে মনোনিবেশ করেছেন, সেখানে আরও ক্ষুরধার হয়েছে তার বোলিং-অস্ত্র।
অ্যান্ডারসন এ নিয়ে তিনি ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বসেরা বোলারের মুকুট পরলেন। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রথমবার টেস্টে শীর্ষস্থান দখল করেন কিংবদন্তি এই বোলার। সেবার স্বদেশি সতীর্থ স্টুয়ার্ট ব্রড এবং ভারতীয় স্পিনার অশ্বিনকে পেছনে ফেলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বোলিং র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ছিলেন অ্যান্ডারন।
ওই বছরের নভেম্বর মাসে দক্ষিণ আফ্রিকার তারকা পেসার কাগিসো রাবাদার কাছে শীর্ষস্থান খোয়ান অ্যান্ডারসন। কিন্তু শীর্ষস্থান হারিয়েও নিজের কাছে হার মানেননি তিনি। বরং ইংল্যান্ডের নতুন টেস্ট কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে সর্বশেষ ১১ টেস্টের ১০টিতেই জয়ের মুখ দেখেছে ইংল্যান্ড। যেখানে নিজের পুরোনো ছন্দই যেন নতুন করে ফিরে পেয়েছেন অ্যান্ডারসন।
শুধুমাত্র টেস্টে নিজেকে মনোনিবেশ করার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের পর ওয়ানডে ম্যাচ খেলেননি অ্যান্ডারসন। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ২০০৯ সালে। এরপর থেকে কেবল সাদা পোশাকে বোলিংয়ের গণ্ডি সীমিত করেছেন এই বোলার। শুধু নিজের ফিটনেস ট্রেনিং এবং শৃঙ্খলায় কেমন নিয়মানুবর্তি সেটি তার পারফরম্যান্সেই বোঝা যায়।
শীর্ষে উঠার মুহূর্তে অ্যান্ডারসনের বয়স ৪০ বছর ২০৭ দিন, যা তাকে সবচেয়ে বেশি বয়সে এক নম্বর বোলার হওয়ার রেকর্ডে জায়গা করে দিয়েছে। সর্বশেষ ১৯৩৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার সাবেক লেগস্পিনার ক্ল্যারি গ্রিমেট এই রেকর্ড গড়েছিলেন।
অ্যান্ডারসনের উইকেটের ঝুলিও বেশ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। ক্যারিয়ারে ১৭৮টি টেস্টে ৬৮২ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ডারসন। যার মধ্যে ৩২ বার ইনিংসে পাঁচ উইকেট ও ৩ বার নিয়েছেন ম্যাচে ১০ উইকেটে পেয়েছেন তিনি। টেস্ট ক্রিকেটে পেসারদের মধ্যে সর্বাধিক উইকেট এখন তার দখলে।
তবে সবচেয়ে বেশি উইকেট শিকারির তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন অ্যান্ডারসন। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই স্পিন-কিংবদন্তি মুত্তিয়া মুরালিধরনের ৮০০ উইকেট এবং শেন ওয়ার্নের ৭০৮ উইকেটের পরই অবস্থান এই গ্রেটের। হয়ত ওয়ার্নের রেকর্ডও ছাড়িয়ে যাবেন খুব শীগ্রই।