বেশ কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে নিয়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবল ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের প্যারিস অলিম্পিক বাছাইপর্ব খেলতে মিয়ানমার সফর বাতিলের পর সোহাগের ওপর বেশ চটেছিলেন ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী। জাহিদ আহসান রাসেলের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার ছয় দিনের মাথায়ই কাগজপত্র জালিয়াতির দায়ে বাফুফে সাধারণ সম্পাদককে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ করেছে ফিফা। পরবর্তী দুই বছর ফুটবল সংশ্লিষ্ট সব ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার সুইস ফ্রাঁ জরিমানাও করা হয়।
শুক্রবার ফিফার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই সোহাগের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন সাংবাদিকসহ ফুটবল সংশ্লিষ্ট অনেকেই। তবে এখন পর্যন্ত তার সাড়া মেলেনি। পরবর্তীতে শনিবার দুপুরে দিকে তার বক্তব্য তুলে ধরে সোহাগের আইনজীবীর করা একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ক্রীড়াঙ্গনের একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে শনিবার বাফুফে ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ফিফার নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে মুখ খুলেছেন বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।
এবার বাফুফে সাধারণ সম্পাদকের ওপর ফিফার নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে মুখ খুলেছেন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল।
শনিবার টঙ্গীস্থ নিজ বাসভবনে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী দাবি করেন, তারা যে আমাদের ভাবমূর্তি সংকটে ফেলেছে, এতে আমরা খুবই লজ্জিত।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রীর ভাষ্য, গণমাধ্যমের রিপোর্টই প্রকৃত অর্থে সত্য হলো। আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যম সব সময় সোচ্চার ছিল।
ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেন, একদিকে বাংলাদেশ সৌভাগ্যবান যে, নির্দিষ্ট ব্যক্তির ওপর দিয়ে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। ফুটবল ফেডারেশনের ওপর কোনো নিষেধাজ্ঞা আসেনি।
কাজী সালাউদ্দিন জানান, একটা জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। তবে আমাদের দুইজন ভাইস প্রেসিডেন্ট দেশের বাইরে আছেন। তাই আমি সভা ডাকতে পারিনি। তারা কাল-পরশু দেশে এসে পৌঁছাবেন। সবাই আসলে পরশুদিন আমরা বৈঠক ডেকে সিদ্ধান্ত নেব। এরপর আপনাদের জানিয়ে দেব পরবর্তী পদক্ষেপ কি হবে। আপাতত ফিফা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা সেখানেই আছি। বাফুফে কি সিদ্ধান্ত নেবে, তার জন্য সবাইকে দুদিন অপেক্ষা করতে হবে।
এর আগে ফিফা জানায়, প্রযোজ্য কর্মধারায় তদন্তকারী চেম্বার দ্বারা পরিচালিত তদন্তের সময় সংগৃহীত সাক্ষ্যপ্রমাণের পাশাপাশি শুনানি ও উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ যত্ন সহকারে বিশ্লেষণের মাধ্যমে অ্যাজুডিকেটরি চেম্বার নিশ্চিত হয়েছে যে, সোহাগ ২০২০ সালের ফিফা এথিকস কোডের ধারা ১৫ (সাধারণ কর্তব্য), ১৩ (আনুগত্যের দায়িত্ব) ও ২৪ (জালিয়াতি ও মিথ্যাচার) লঙ্ঘন করেছেন।
এরও আগে, আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিতে সশরীরে ফিফার সদরদপ্তর জুরিখে যান বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ। তবে শেষ রক্ষা হয়নি, ফিফার স্বাধীন নৈতিক কমিটির মাধ্যমে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞায় পড়লেন তিনি। তার বিরুদ্ধে মূল অভিযোগ ফিফার দেওয়া অর্থ বাফুফের খরচ দেখাতে ভুল কাগজপত্র দেখিয়েছেন তিনি।
শুক্রবার (১৪ এপ্রিল) থেকে আবু নাঈম সোহাগের নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে। তার আগেই অবশ্য সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তার মেয়াদ পূর্ণ হবে। ২০০৫ সালে কম্পিটিশন ম্যানেজার হিসেবে বাফুফেতে যোগ দেওয়া সোহাগ, ২০১১ সালে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এবং দেড় বছর পর পূর্ণ দায়িত্ব গ্রহণ করে।