• ঢাকা শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
logo

শেখ হাসিনার আমলে ক্রীড়াঙ্গন শাসন করেছেন যারা, বড় পরিবর্তনের আভাস

  ০৬ আগস্ট ২০২৪, ২০:০০
বাংলাদেশ
ছবি- সংগৃহীত

ছাত্রজনতার আন্দোলনে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন শেখ হাসিনা। গতকাল (সোমবার) ক্ষমতা হস্তান্তর করে দেশ ছেড়েছেন তিনি। ১৬ বছর ক্ষমতায় থাকা এই নেত্রী দেশ ছেড়ে যাওয়ায় প্রশাসন থেকে শুরু করে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থায় ধাক্কা এসেছে। দেশের ক্রীড়াঙ্গনেও তার ব্যতিক্রম নয়।

কারণ, দেশের ক্রীড়াঙ্গন এতদিন পরিচালনা করেছেন আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যরা। এমন অনেকেই আছেন যারা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখনও পর্যন্ত একই পদে নিয়োজিত আছেন। যার মধ্যে অন্যতম দুইজন হলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এবং বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন।

কাজী সালাউদ্দিন

আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না থাকলেও দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারশনের (বাফুফে) সভাপতির চেয়ারটা দখল করে রেখেছেন কাজী সালাউদ্দিন। ২০০৮ সালে সামরিক শাসনের সময় সভাপতি হয়েছিলেন তিনি। শেখ কামালের সঙ্গে বন্ধুত্বের কারণে সদ্য শেখ হাসিনার সঙ্গে সালাউদ্দিনের অনেক পারিবারিক সম্পর্ক।

ফুটবলে নানা ব্যর্থতার কারণে কাজী সালাউদ্দিন দেশজুড়ে সমালোচিত ছিলেন। শুধুমাত্র শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হওয়ায় চেয়ার থেকে তাকে সরানো যায়নি, ধারণা ফুটবল সংশ্লিষ্টদের। ফুটবলে বাফুফে সভাপতি পদে কাজী সালাউদ্দিনের বিপক্ষে ২০১২ ও ২০২০ সালে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি নানা কারণে।

নাজমুল হাসান পাপন

সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানে সন্তান হওয়ায় রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন নাজমুল হাসান পাপন। শূন্য আসনে ক্ষমতাসীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ২০০৯ সালের উপ-নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রথম মেয়াদে সংসদ সদস্য হন তিনি।

পাপন ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের অন্যতম দল আবাহনী লিমিটেডের সাথে প্রায় এক দশক জড়িত আছেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত আবাহনীর ক্রিকেট কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়াও ২০০৬ সালের করপোরেট ক্রিকেট লীগের চ্যাম্পিয়ন বেক্সিমকো ক্রিকেট দলের সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের উদ্বোধনী আসরে উপদেষ্টা কমিটির সভাপতিত্ব করেছিলেন।

আ হ ম মোস্তফা কামালের পর ২০১২ সালের ১৭ অক্টোবর বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব পান পাপন। এরপর থেকে একক আধিপত্য দেখিয়ে দেশের ক্রিকেটকে পরিচালনা করেছেন। চলতি বছরেই শেষ হবে বিসিবিতে তার তৃতীয় টার্মের মেয়াদ। দীর্ঘ ১২ বছর নানা আলোচনা এবং সমালোচনার মধ্য দিয়ে গেলেও চলতি বছর ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পান তিনি।

পাপন মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকেই ক্রীড়াঙ্গনের অলিখিত অভিভাবক। হকি, ফুটবলসহ অনেক সমস্যা সমাধান তার দ্বারস্থ হতেন।

নাইমুর রহমান দুর্জয়

অভিষেক টেস্ট দলের সাবেক অধিনায়ক নাইমুর রহমান দুর্জয় আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি। বাংলাদেশের ক্রিকেট ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েসনের (কোয়াব) প্রেসিডেন্ট এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড নির্বাচক ও পরিচালক তিনি।

রাজনীতি এবং বিশেষ করে আওয়ামী লিগের সঙ্গে জড়িত থাকায় তার বিপক্ষে নির্বাচন করতে চায় না। যার ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কোয়াবে দীর্ঘদিন ধরে রাজত্ব করছেন দুর্জয়। ধারণা করা হচ্ছিল, পাপনের পর সভাপতির চেয়ারে বসতে পারেন তিনি।

সংসদ সদস্য না হলেও ক্রিকেটে সঙ্গে জড়িত যেসব আওয়ামী লীগ নেতারা।

সংসদ সদস্য না থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত অনেকেই সরাসরি ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে রয়েছেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র।। আ জ ম নাসির বিসিবির অন্যতম প্রভাবশালী পরিচালক। আরেক পরিচালক গোলাম মোর্তুজা সাবেক মন্ত্রী গাজী গোলাম দস্তগীরের ছেলে।

ইসমাইল হায়দার মল্লিক

দেশের ক্রীড়াঙ্গনের আরেক আলোচিত নাম ইসমাইল হায়দার মল্লিক। দীর্ঘ দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) গভর্নিং কাউন্সিলের সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) নিয়ে দর্শক এবং দেশের ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা নানা সময় প্রশ্ন তুললেও, ইসমাইলের ওপর সেই চাপ আসেনি কখনও। অনেকের ধারণা দেশে অনেক সিনিয়র ক্রিকেটার ও পরীক্ষিত সংগঠক থাকলেও পাপনের আস্থাভাজন হওয়ায় ইসমাইল হায়দার মল্লিকের কর্তৃত্ব ফলাতে কোনো সমস্যা হয়নি।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী

কাজী সালাউদ্দিনের পর বাফুফের আরেক শক্তিশালী এবং গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হলেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের সদস্য হলেও বাফুফেতে তার বিরুদ্ধে নানা দুর্নীতি এবং অভিযোগ পেলেও ব্যবস্থা নেয়নি ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। ফিফা থেকে শাস্তি পেলেও বাফুফের সহসভাপতি পদে অব্যাহত থাকেন তিনি।

সালাম মুর্শেদীর দুটো হোয়াটসঅ্যাপে একটি মুজিব কোর্ট, আরেকটিতে শেখ হাসিনার সঙ্গে ছবি ছিল। শেখ হাসিনার দেশ ত্যাগের সঙ্গে সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ থেকে ছবি বদলে ফেলেছেন সাবেক এই ফুটবলার। এর বদলে এখন সাধারণ কোর্ট পরা ছবি দিয়েছেন।

কাজী নাবিল আহমেদ

বাফুফের আরেক সহসভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ। ১৯৭৯ সালে সেনাবাহিনী থেকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে অবসর গ্রহণ করে ব্যবসা শুরু করেন। কাজী শাহেদ আহমেদ ক্যাসেল কন্সট্রাকশন নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গঠন করেন, এরপর প্রতিষ্ঠা করেন জেমকন গ্রুপ।

ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত ডিরেক্টর ইনচার্জ মনোনীত হন এবং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সহসভাপতি পদে ৩ বার নির্বাচিত হয়েছেন। এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশনের ফুটসাল ও বিচ সকার কমিটির একজন সদস্য তিনি। শেখ কামাল ক্রীড়া কমপ্লেক্স নির্মাণেও তার ভূমিকা রয়েছে।

সংসদ সদস্য না হলেও ক্রীড়াঙ্গানের সঙ্গে জড়িত যেসব আওয়ামী লীগ নেতারা

বাফুফের আরেক সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মকর্তা। বাফুফে সদস্য সাইফুল, ওয়াদুদ পিন্টু, হারুনর রশীদ,সত্যজিৎ দাশ রুপুসহ অনেকে আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নানা পদে রয়েছেন।

নির্বাচন ব্যবস্থায় থাকা ফুটবল, ক্রিকেটের বাইরে অন্য খেলায় একই অবস্থা। দেশের তৃতীয় বড় খেলা হকির সাধারণ সম্পাদক মমিনুল হক সাঈদ যুব লীগের কর্মী ছিলেন। ক্যাসিনো-কাণ্ডের পর দলীয় পদ বাতিল হয়। এরপরও তিনি আওয়ামী লীগের নানা কর্মসূচির সঙ্গে ছিলেন।

অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনে আওয়ামী লীগের প্রভাব

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন হলো দেশের আরেক শীর্ষ সংস্থা। এখানেও আওয়ামী লীগ নেতাদের একক আধিপত্য। টানা তিন মেয়াদে অলিম্পিক এসোসিয়েশনের মহাসচিব পদে রয়েছেন সৈয়দ শাহেদ রেজা। তিনিও শেখ হাসিনার আস্থাভাজন।

ফুটবল, ক্রিকেট বাদে দেশের বাকি সব ফেডারেশনের সভাপতি সরকার থেকে মনোনীত। হকি, সাঁতারে সামরিক দুই বাহিনীর প্রধান সভাপতি মনোনীত হন। অন্য ফেডারেশনগুলোতে সরকার মনোনীত আমলা, রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক ব্যক্তিত্ব মনোনীত করে।

সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্সে আওয়ামী লীগের প্রভাব

অলিম্পিকের মূল ডিসিপ্লিন সাঁতার ও অ্যাথলেটিক্স। কিন্তু এই দুই খেলা বেশ কয়েক বছর ধরে আওয়ামী দলীয় পরিচয়ের ব্যক্তির কাছেই। সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ গোপালগঞ্জ যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক।

তার আগে ছিলেন রফিজ উদ্দিন তিনিও দলীয় ব্যবস্থায়। অ্যাথলেটিক্সে কৃতি অ্যাথলেট ও সংগঠকদের সরিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন আব্দুর রকিব মন্টু। তিনিও এ বছর আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

এদিকে রোলার স্কেটিং, উশু ফেডারেশনের সেক্রেটারি সরাসরি আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। ফেডারেশনগুলোর নির্বাচনে যোগ্যতা সামর্থ্যের চেয়ে দলীয় পরিচয় প্রাধান্য হয়ে উঠেছে গত এক দশকে। জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি আ জ ম নাসির ও মহাসচিব আশিকুর রহমান মিকু বিভিন্ন ফেডারেশন নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছেন।

ফেডারেশনগুলোর নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্যতম মাধ্যম কাউন্সিলরশিপ। সেই কাউন্সিলরশিপও হয়ে আসছে দলীয় বিবেচনায় আবার কখনো দল ছাপিয়ে বিভিন্ন প্রভাবশালীর ব্যক্তির ইচ্ছে অনিচ্ছায়। কাউন্সিলর হওয়ার পর অনেকে নির্বাচনে দাড়াতে পারেননি। কাগজে-কলমে গণতন্ত্র থাকলেও জাতীয় নির্বাচনের মতো ক্রীড়াঙ্গনের অনেক নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ।

ফলে ক্ষমতা পরিবর্তন হওয়ায় দেশের ক্রীড়াঙ্গনে যে অনেক বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যার শুরু হয়েছে নাজমুল হাসান পাপন এবং বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনকে দিয়ে। ইতোমধ্যে এই দুই জায়গায় পরিবর্তন চেয়ে মাঠে নেমেছে সংগঠকরা।

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • খেলা এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
উঁকিঝুঁকি যারাই মারবেন বিপদে পড়বেন, জামায়াত নেতার হুঁশিয়ারি
নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনাসহ ৬১ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা
এনসিএল দেখতে সিলেটে যাচ্ছেন হেম্প
নিলামের আগে আইপিএলের দলগুলোকে যে বার্তা দিলো বিসিবি