স্বর্ণের আক্ষেপ নিয়েই ফুটবলকে বিদায় বললেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি
প্রায় দেড় যুগ ধরে নারী ফুটবলের শীর্ষস্থানটা আঁকড়ে ধরেছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা মার্তা ভিয়েরা দ্য সিলভা। ছয়বারের এই বর্ষসেরা ফুটবলারের আক্ষেপ ছিল দেশের হয়ে অলিম্পিকে স্বর্ণ এবং বিশ্বকাপ না জেতার। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে সেই আক্ষেপ ঘোচানোর সুযোগও পেয়েছিলেন তিনি, কিন্তু ভাগ্য তাকে এবারেও হতাশ করেছে।
শনিবার (১০ আগস্ট) রাতে পার্ক দ্য প্রিন্সেসে অলিম্পিক ফুটবলের স্বর্ণ জেতার লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিলের মেয়েরা। এই ম্যাচে ১-০ গোলের ব্যবধানে হারতে হয়েছে সেলেসাওদের। সেই সঙ্গে অলিম্পিকে স্বর্ণ জেতাও অধরাই থেকে গেল মার্তার। আর এই অপূর্ণতা নিয়েই ফুটবল ক্যারিয়ারের ইতি টানলেন মেয়েদের ফুটবলের এই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি।
সবশেষ বিশ্বকাপের পর দুই-এক বছরের মধ্যে মেয়েদের ফুটবলে আর বড় কোনো টুর্নামেন্ট নেই। অন্যদিকে মার্তার বয়সটাও রয়েছে ৩৮ এর কোটায়। তাই অলিম্পিক দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায়ের কথা জানিয়েছিলেন মার্তা। তার ক্যারিয়ার ব্যক্তিগত সাফল্য ও রেকর্ডে টইটম্বুর হলেও শেষটা হলো অলিম্পিকে রানার্স আপ হয়ে।
আগের দুই ম্যাচ বেঞ্চে বসে দেখা পর, নিজের শেষ ম্যাচেও ছিলেন না শুরুর একাদশে। দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে বেশ কয়েকবার কারিকুরি দেখিয়েছেন মার্তা। তবে সেগুলো গোলে পরিণত করতে পারেননি তিনি।
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে লাল কার্ড দেখায় নক আউটের আগের দুই ম্যাচে ছিলেন না মার্তা। ফাইনালে বদলি নামার পর নেতৃত্বের আর্মব্যান্ডও পরিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
ম্যাচ শেষে তার জন্য বরাদ্দ ছিল বড় অভিবাদন। রুপার পদকের জন্য যখন একে একে সবার নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল, মার্তার নাম উচ্চারিত হতেই দর্শকদের উল্লাসে গোটা স্টেডিয়াম যেন কেঁপে ওঠে। যা প্রমাণ করে– দলীয় সাফল্যই সব নয়, ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, আবেদন ও নামের ভার কোনো অংশে কম নয়!
বিদায়বেলায় অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে মার্তা বলেন, যখন ২০০৪, ২০০৮ সালে রৌপ্যপদক পাই, আমি এখনকার মতো এতটা গর্ববোধ করিনি। কারণ, আরও একটি অলিম্পিক ফাইনালে খেলতে ১৬ বছরের অপেক্ষা করতে হয়েছে। যা ব্রাজিলের কেউ বিশ্বাসও করেনি।
‘এই পদক সেই গর্ব ফিরিয়ে এনেছে, দেখিয়েছে ব্রাজিলের মেয়েরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে জানে, প্রতিভা আছে এবং তার যথাযথ মূল্যায়ন দরকার।’
অবসর নিলেও, ফুটবল থেকে নিজেকে দূরে রাখবেন না বলেও জানিয়েছেন মার্তা। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই অলিম্পিকে এটি আমার শেষ অংশগ্রহণ, এমনকি বিশ্বকাপ কিংবা কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিযোগিতায় আমাকে আর দেখা যাবে কি না সংশয় আছে। কিন্তু কখনই আমি ফুটবল থেকে দূরে থাকব না, এটি নিশ্চিত।
‘আমি প্রথম ১৮ বছর বয়সে অলিম্পিকে খেলেছি। আর এখন আমি একঝাঁক তারুণ্যে ঘেরা এবং আশা করি আমার সমস্ত লড়াই-সংগ্রাম তাদের সহায়তা করেছে। আমি সেই দিনের দিকে তাকিয়ে যখন ১৪ বছর বয়সে ফুটবলের জন্য ঘর ছেড়েছি, এমন এক খেলার জন্য যা মেয়েদের জন্য উপযুক্ত মনে করা হতো না। এখন সেটি বদলেছে, বাড়তে জনপ্রিয়তাও।’
সুতরাং, পেশাগত ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে কোচিংয়ে দেখা যেতে পারে এই কিংবদন্তি ফুটবলারকে। সেই ইঙ্গিতটাই হয়তো দিয়ে রাখছেন তিনি।
মন্তব্য করুন