ফিরে দেখা ২০২৪
দেশে ক্রীড়াঙ্গনের যত আলোচিত ঘটনা
আর মাত্র ৭ দিন পরই বিদায় নেবে ২০২৪ সাল। এই বছরে সবসময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দেশের ক্রীড়াঙ্গন। আসুন একনজরে দেখে নিই আলোচিত ঘটনাগুলো।
নির্বাচনের প্রচারণায় সাকিব আল হাসান
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের হয়ে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৩৮৮ ভোটে জয় লাভ করেন এই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। এরপর ১০ জানুয়ারি এমপি হিসেবে শপথ নেন তিনি।
যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী হলেন নাজমুল হাসান পাপন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-৬ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। এরপরই প্রথমবার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পূর্ণ দায়িত্ব পেয়েছিলেন তিনি। স্বাধীনতার পর ২০২৩ পর্যন্ত একজন প্রতিমন্ত্রীই ছিলেন দেশের ক্রীড়াঙ্গনের অভিভাবক।
বিপিএল ২০২৪- চোখের সমস্যায় শিরোনামে সাকিব
২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি মাঠে গড়িয়েছিল বিপিএলের দশম আসর। রংপুর রাইডার্সের হয়ে খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান। তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই আলোচনায় ছিলেন এই তারকা ক্রিকেটার। কারণ, হঠাৎ করে অনুশীলনে প্রথমবারের মতো চশমা চোখে দেখা গিয়েছিল তাকে। চোখের রেটিনায় পানি জমার কারণে ব্যাটিংয়ের সময় বল দেখতে সমস্যা হচ্ছিল তার।
যার ফলে প্রথমবার শুধু বোলিং হিসেবে খেলতে দেখা যায় সাকিবকে। প্রথম চার ম্যাচে ব্যাট হাতে কিছুই করতে পারেননি তিনি। ১০ নম্বরেও ব্যাট করেছেন তিনি। সম্পূর্ণ ফিট না থেকে ম্যাচ খেলায় ব্যাপক সমালোচনা শিকার হয়েছিলেন তিনি। স্টেডিয়ামে শুনতে হয়েছে দুয়ে। বিপিএলের মাঝেই চোখের চিকিৎসার জন্য লন্ডনে যান এই অলরাউন্ডার।
সাকিবের ফিরে আসা
টানা চার ম্যাচ ব্যর্থতার পর বিপিএলে দুর্দান্তভাবে কাম ব্যাক করেছিলেন সাকিব। বিধ্বংসী সব ইনিংস খেলে টুর্নামেন্ট সেরা দৌঁড়ে ছিলেন। কিন্তু রংপুর ফাইনালে উঠতে না পারায় রেস থেকে ছিটকে যান তিনি। ১৩ ম্যাচে ২ ফিফটিতে ২৫৫ রান করেছিলেন তিনি। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৭টি উইকেট শিকার করেছিলেন তিনি।
তামিমের নেতৃত্বে প্রথম শিরোপা জয় বরিশালের
২০২৪ বিপিএলে তামিমের নেতৃত্বে মিনি জাতীয় দল তৈরি করেছিল ফরচুন বরিশাল। ভালো শুরু করলেও মাঝে ছন্দ হারালে সেমিফাইনাল খেলা নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে দুর্দান্ত কাম ব্যাকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সকে হারিয়ে শিরোপা জিতেছিল বরিশাল। আর ১৫ ম্যাচে ৪৯২ রান করে টুর্নামেন্ট সেরা হয়েছিলেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল।
ওয়ানডে বিশ্বকাপের তদন্ত রিপোর্ট বিতর্ক
ভারতের মাটিতে অনুষ্ঠিত হওয়া ওয়ানডে বিশ্বকাপে মাত্র ২টি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ দল। দলের এমন বাজে পারফরম্যান্সের কারণ খুঁজে তিন সদস্য বিশিষ্ট্য তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল নাজমুল হাসান পাপনের ক্রিকেট বোর্ড। তিন সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান বিসিবির পরিচালক ছিলেন এনায়েত হোসেন সিরাজ। এ ছাড়া কমিটিতে ছিলেন বিসিবির আরও দুই পরিচালক মাহবুবুল আনাম ও আকরাম খান।
২০২৪ সালে বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলেন তদন্ত রিপোর্ট বিতর্ক। বেশ কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে এই তদন্ত কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। সেগুলো হলো দলের ব্যর্থতা, তামিম ইকবালের বিশ্বকাপ দল থেকে বাদ পড়ার কারণ এবং নাসুমের চড়-কাণ্ডের রহস্য উদঘাটন।
কিন্তু এই রিপোর্ট নিয়ে একেক সময় একেক কথা বলেছেন পরিচালকরা। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার তিন মাস শেষ হলেও তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে লুকোচুরি চলছিল বিসিবিতে। এর মাধ্যমেই দেশের একটি গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে আকরাম বলেন, তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ হলে ফেঁসে যেতে পারে কয়েকজন বোর্ড পরিচালক।
এরপরই বিসিবির সূত্রের বরাত দিয়ে খবর প্রকাশ করা হয় বিশ্বকাপ ব্যর্থতার সঙ্গে জড়িত আছেন বিসিবি পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন এবং জালাল ইউনুস। যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হয়েছিল বিসিবি।
এ সময় তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে সুজন এক সাক্ষাৎকারে বিসিবির উপর ক্ষোভ প্রকাশ বলেন, আমি দেখলাম যে দুই পরিচালকের কথা বলা হচ্ছে। আমার কথা হলো, মিডিয়াতে ছোট ছোট করে তথ্য ছড়িয়ে লাভ কি। আমাদের বলে দিক, যে তোমাদের কারণে বিশ্বকাপ খারাপ হয়েছে। কিন্তু বিসিবিকে প্রমাণ করতে হবে, কিভাবে আমরা হস্তক্ষেপ করেছি। মিডিয়াকে ফুসফাস করে না বলে সংবাদ সম্মেলন ডেকে বলে দেন আমার এবং জালাল ইউনুসের জন্য বিশ্বকাপে খারাপ পারফরম্যান্স হয়েছে। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ করছি, তাদের বলতে হবে কেনো তারা মিডিয়াকে এই কথা বলেছে। আর তদন্ত রিপোর্টে কে কি বলেছে দেখাতে হবে।
অথচ বিসিবি সভাপতি গত ৯ মার্চ এক সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছিলেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেছিলেন, আমাকে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান একটা রিপোর্টই দিয়েছে। এখানে কোনো পরিচালক দূরে থাক, এমন কোনো লাইনই নেই, শব্দও নেই। এরকম রিপোর্ট তো প্রতিদিনই আসে। আমাকে যে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে এখানে কিচ্ছু নেই।
এ ছাড়াও বিশ্বকাপের সময় নাসুমকে চাড় মারার বিষয়টিও অস্বীকার করে তদন্ত কমিটি। দলের সকলের সঙ্গে কথা বলে সত্যতা পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছিল বিসিবি।
যে কারণে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েন তামিম ইকবাল
বিশ্বকাপ দলের সদস্য না হলেও তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হতে হয় তামিম ইকবালকে। তাকে কেন বিশ্বকাপ দলে নেওয়া হয়নি, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। জানা গেছে, মূল্যায়ন কমিটির সঙ্গে তামিম নিজের মতো করে পুরো ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
বিসিবি সভাপতি ও তামিমের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টির পেছনে প্রধান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের দায় খুঁজে পেয়েছিল কমিটিরা। বিসিবির একজন পরিচালক গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল, তামিম ইকবাল ও মাশরাফীর পরামর্শে হাথুরুসিংহেকে দ্বিতীয় দফায় জাতীয় দলের প্রধান কোচ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। হাথুরু-তামিম জুটি শুরুতে ‘ক্লিক’ করেছিল।
কিন্তু অধিনায়ক কোচের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা না পাওয়ায় দূরত্ব বাড়তে থাকে। আফগানিস্তান সিরিজের মাঝে পরিস্থিতি বেশি খারাপ হওয়ায় তামিম হুট করে অবসরের ঘোষণা দেন। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অবসর ভাঙলেও নেতৃত্ব ছেড়ে দেন তামিম। কিন্তু তামিমের অবসর নেওয়াটা ভালোভাবে নেননি কোচ হাথুরুসিংহে। তাই বিশ্বকাপের দলের এই ওপেনারকে রাখতে চাননি তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে সিরিজ হার
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের পরিবেশ বুঝতে দেশটির সঙ্গে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে খেলার সিদ্ধান্ত নেয় বিসিবি। কিন্তু প্রথম দেখাতে বাংলাদেশকে হতাশায় ডোবায় যুক্তরাষ্ট্র। যার ফলে ব্যাপক সমালোচনার শিকার হতে হয় টাইগার ক্রিকেটার।
নতুন ক্রিকেট খেলতে আসা দলটির বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট এবং দ্বিতীয় ম্যাচে ৬ রানে হেরে সিরিজ হাত ছাড়া করে বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচে ১০ উইকেটের জয় দিয়ে সম্মানরক্ষা করে টাইগাররা।
প্রথমবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা আটে বাংলাদেশ
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বের ৪ ম্যাচের তিনটিতে জয় তুলে নিয়ে প্রথমবার টি-টোয়েন্টি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা আটে উঠেছিল টাইগাররা। তবে সেমিফাইনালে ওঠার সুযোগ থাকলেও কাজে লাগাতে পারেনি।
জুলাই-আগস্টে আন্দোলনে খেলোয়াড়দের ভূমিকা
কোটা আন্দোলন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন পর্যন্ত ছাত্রদের পাশে ছিলেন ক্রীড়াঙ্গনের তারকারা। সরাসরি মাঠে না থাকলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত সরব ছিলেন মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, শান্ত, লিটন, মিরাজ, জামাল ভূঁইয়াদের মতো তারকারা। যা নিয়ে ব্যাপক প্রশংসাও কুড়িয়েছে তারা।
তবে ব্যতিক্রম ছিলেন কেবল সাকিব আল হাসান ও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ায় ছাত্রদের উপর আঘাত আসলেও মুখ খোলেননি এই দুই ক্রিকেটার। যা ফলে ব্যাপক সামালোচনার শিকার হন তারা। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে সাকিব-মাশরাফীর ছবিতে আগুন দিতেও দেখা যায়।
সরকার পতনের পর ক্রীড়াঙ্গনের যত পরিবর্তন
ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। তার মধ্য অন্যতম হলো ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে। অন্তর্বর্তীসরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পান বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। এর আগে এই চেয়ার বসেছিলেন সাবেক বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন।
পাপনকে সরিয়ে নতুন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ
গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন আসিফ মাহমুদ। এর ১২ দিন পরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে (বিসিবি) বড় পরিবর্তন আসে। দীর্ঘ একযুগ পর নতুন অভিভাবক পায় বিসিবি।
গত বুধবার (২১ আগস্ট) ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জরুরি সভা শুরু হয়। আর সেখানেই পদত্যাগের ঘোষণা দেন নাজমুল হাসান পাপন। পরে সেখান থেকেই ফারুক আহমেদকে নতুন সভাপতি করার সিদ্ধান্ত আসে। আর জালাল ইউনুসের বদলে পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পান নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
সেদিন বোর্ড সভায় অংশগ্রহণ করতে মন্ত্রণালয়ে উপস্থিত ছিলেন ফারুক আহমেদ ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। এ ছাড়া ইনাম ও মাহবুব আনামকেও দেখা গেছে। পাশাপাশি আম্পায়ার্স কমিটির সদস্য ইফতেখার আহমেদ মিঠুও যোগ দেন বৈঠকে।
অন্যদিকে, পরিচালকদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন আকরাম খান, সাইফুল আলম স্বপন, ফাহিম সিনহা, খালেদ মাহমুদ সুজন ও সালাউদ্দিন চৌধুরী। বিসিবির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সভায় পরিচালক বোর্ডের সদস্যদের অন্তত ৯ জন উপস্থিত থাকলেই চলবে।
বাফুফেতে সালাউদ্দিন অধ্যায়ের সমাপ্তি, তাবিথ আউয়ালের সূচনা
২০০৮ সালে ২৮ এপিল বাফুফে সভাপতির দায়িত্ব নিয়েছিলেন দেশসেরা ফুটবলার কাজী সালাউদ্দিন। সকলের প্রত্যাশা ছিল তার হাত ধরে বদলে যাবে দেশের ফুটবলের চিত্র। উন্নয়নের সিড়ি বেয়ে উপরের দিকে উঠবে দেশের ফুটবল। কিন্তু তেমনটা হয়নি। তার নির্বাচিত হওয়ার বছরে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৬৮তম স্থানে। এরপর অবনমন হতে হতে ২০১৭ সালে বাংলাদেশের অবস্থান দাঁড়ায় ১৯৭-এ। যদিও সবশেষ র্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৮৪।
এ ছাড়াও ১৬ বছরের শাসন আমলে বিভিন্ন কারণে সমালোচনার শিকার হয়েছেন সালাউদ্দিন। কিন্তু আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট আত্মীয় হওয়ায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টানা চার মেয়াদে বাফুফের সভাপতির চেয়ারে বসেছিলেন এই কিংবদন্তি ফুটবলার। কিন্তু গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হওয়ায় বদলে গেছে সব হিসাব নিকাশ।
এবারে বাফুফের নির্বাচনে লড়াই করার কথা জানালেও তোপের মুখে পড়তে হয় সালাউদ্দিনকে। তাই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। এরপরই সভাপতি পদে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন সাবেক সহসভাপতি তাবিথ আউয়াল। নির্বাচনে সভাপতি পদে ১২৩টি ভোট পেয়েছেন তিনি, তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী এ এফ এম মিজানুর রহমান চৌধুরী পেয়েছেন ৫ ভোট। এতে দীর্ঘ ১৬ বছর পর নতুন সভাপতি পায় বাফুফে।
পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশ করে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় বাংলাদেশের
গত আগস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলতে রাওয়ালপিন্ডিতে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশের পরিসংখ্যানের খাতাটা ছিল পুরোই ফাঁকা। ১৩ টেস্টে মুখোমুখি হয়ে মাত্র একটি ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর বাকি ১২টিতেই হারের তেতো স্বাদ পেতে হয়েছিল টাইগারদের। তবে প্রথম টেস্টেই পাকিস্তানকে ১০ উইকেটে হারিয়ে তাদের বিপক্ষে জয়ের খরা কাটিয়েছিল বাংলাদেশ। সেইসঙ্গে টাইগারদের সামনে সুযোগ আসে পাকিস্তানের মতো বড় দলের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের।
আর সেই সুযোগ কাজে লাগাতে ভুল করেননি সাকিব-মিরাজরা। দ্বিতীয় টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয় তুলে নিয়েছিল বাংলাদেশ। এতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। শুধু পাকিস্তানই নয় বড় দলগুলোর বিপক্ষে এটির প্রথম সিরিজ জয় বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে নবম সিরিজ জয় এটি। বাকি আটটি সিরিজ জিম্বাবুয়ে-ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ছোট দলগুলোর বিপক্ষে।
সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা ও বিদায়ী টেস্ট
পাকিস্তান সিরিজ শেষ করে ভারত সফরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সেখানে দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে মাঠে নামার আগে লাল বলের ক্রিকেট থেকে বিদায় নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। তবে মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে শেষ টেস্টটা খেলতে চেয়েছিলেন তিনি। সেই অনুসারেই সবকিছু এগোচ্ছিল।
গত ২১ অক্টোবর মিরপুরে বিদায়ী টেস্ট খেলার কথা ছিল সাকিবের। এই টেস্টে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্র দুবাইতে পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশের বিমানে ওঠার কয়েক ঘণ্টা আগে বদলে যায় সব হিসাব নিকাশ। সাকিবের দেশে ফেরা এবং লাল-সবুজের জার্সিতে খেলার বিরোধীতা করে আন্দোলন করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একটি অংশ।
মূলত, আন্দোলেনের চুপ থাকা এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হওয়ায় এমন তোপের মুখে পড়তে হয়েছে এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে। যার ফলে বিদায়ী টেস্ট না খেলে পরিবারের কাছে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান তিনি।
সাবিনাদের সাফজয় এবং ছাদখোলা বাসের উদযাপন
২০২২ সালে ফাইনালে নেপালকে হারিয়ে প্রথমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এরপর ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনাও পেয়েছিলেন ফুটবলাররা। এবারে সেই দশরথ স্টেডিয়াম। প্রতিপক্ষও নেপাল। পুরোনো মঞ্চে চেনা প্রতিপক্ষকে হারিয়ে পুনরাবৃত্তির দারুণ এক গল্প লিখেছেন বাঘিনীরা। গত ৩০ অক্টোবর স্বাগতিকদের ২-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় সাফ জয়ের উল্লাসে মাতেন সাবিনা-তাহুরারা।
পরদিন ৩১ অক্টোবর দুপুর ২টা ৩০ মিনিটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান সাফজয়ী ফুটবলাররা। সেখানে ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনার ব্যবস্থা করা হয়। বিমানবন্দর থেকে এক্সপ্রেসওয়ে, এফডিসি, সাত রাস্তার মোড়, মগবাজার ফ্লাইওভার, কাকরাইল, পল্টন, নটরডেম কলেজ, শাপলা চত্বর হয়ে বাফুফে ভবনে পৌঁছায় সাফজয়ী ফুটবলারদের বহনকারী ছাদখোলা বাস।
তিন শহীদের নামে স্টেডিয়ামের নামকরণ
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) তড়িৎ প্রকৌশলী বিভাগের মেধাবী শিক্ষার্থী ছিলেন আবরার ফাহাদ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভারতবিরোধী পোস্ট করায় ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর রাতে শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে ডেকে নিয়ে নির্মমভাবে তাকে পিটিয়ে হত্যা করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এই ঘটনার প্রায় ৫ বছর পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়েছে। তবে ফাহাদকে ভুলে যাননি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টারা। তাই ফাহাদের নামে তার জেলার স্টেডিয়ামের নামকরণ করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কুষ্টিয়া শেখ কামাল স্টেডিয়াম পরিবর্তন করে রাখা হয়েছে শহীদ আবরার ফাহাদ স্টেডিয়াম। গত ১৪ নভেম্বর এক বিবৃতিতে এই তথ্য নিশ্চিত করেছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ।
এদিন আরও দুটি স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। দ্বিতীয়তে রয়েছে টাঙ্গাইল জেলার স্টেডিয়াম। এটির বর্তমান নাম শহীদ মারুফ স্টেডিয়াম টাঙ্গাইল। এই তালিকার তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গন মাঠ, ঢাকা। যার নাম রাখা হয়েছে শহীদ ফারহান ফাইয়াজ খেলার মাঠ।
বিপিএল ২০২৫ এর মাসকাট ‘ডানা ৩৬’
দেশের সবচেয়ে বড় ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্ট বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) ১১তম আসর মাঠে গড়াতে যাচ্ছে আগামী ৩০ ডিসেম্বর। তার আগে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে আসরের মাসকাট উন্মোচন করেছে বিসিবি। যেখানে স্মরণ করা হয় জুলাই-আগস্টের আন্দোলনের শহীদদের এবং বিপ্লবে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীদের।
বিপিএলের এবারের মাসকাটের নাম দেওয়া হয়েছে ডানা ৩৬। মূলত, ডানাকে স্বাধীনতার প্রতীক হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছে। যার গড়ন, ব্যবহৃত রং ও অঙ্গভঙ্গি উপস্থাপন করে স্বাধীনতা, শান্তি, মুক্তি, তারুণ্য, প্রাণবন্ততা, উৎসব এবং সীমাহীন সম্ভাবনাকে। এখানে ‘ডানা’ শব্দটি পাখা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক।
মাসকাটটিতে ডানা বা পাখা প্রসারিত করা একটি ‘সাদা পায়রা’ যা শান্তির প্রতীক এবং প্রতিপাশে ১৮টি করে মোট ৩৬টি রঙিন পালক উপস্থাপন করে ৩৬ শে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতিকে। যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ, উদ্যমী, অপ্রতিরোধ্য তরুণকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।
এনসিএল টি-টোয়েন্টির যাত্রা শুরু
এতদিন দেশের ক্রিকেটের একমাত্র টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট হিসেবে পরিচিত ছিল বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল)। কিন্তু, এবার টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটারদের পাইপলাইন শক্ত করার জন্য আরও একটি টুর্নামেন্ট চালু করল বিসিবি। নতুন এ টুর্নামেন্টের নাম দেওয়া হয়েছে এনসিএল টি-টোয়েন্টি।
গত ২৩ নভেম্বর রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে জমকালো আয়োজনের মধ্যে দিয়ে এই টুর্নামেন্ট উদ্বোধন করেছেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। দেশের সাতটি বিভাগ এবং ঢাকা মেট্রোসহ নিয়ে আটটি দলকে মাঠে গড়িয়েছে এই টুর্নামেন্ট।
প্রথমবার হকি বিশ্বকাপে যুবারা
ওমানকে হারিয়ে যুব এশিয়া কাপে শুভসূচনা করেছিল বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২১ দল। মাঝের দুই ম্যাচ উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেলেও থাইল্যান্ডকে বড় ব্যবধানে হারিয়ে প্রথমবার যুব বিশ্বকাপের টিকিট নিশ্চিত করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা; যা বাংলাদেশ হকির ইতিহাসে সর্বোচ্চ অর্জন।
আগামী বছর ভারতে অনুষ্ঠিতব্য যুব বিশ্বকাপে এশিয়া থেকে সাত দল অংশগ্রহণ করবে। স্বাগতিক ভারত সরাসরি খেলবে। বাকি ছয় দেশে চলমান জুনিয়র এশিয়া কাপ থেকে খেলার সুযোগ পাবে। বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম স্থানে।
আরটিভি/এসআর
মন্তব্য করুন