বাংলাদেশকে ‘পরাশক্তি’ বানাতে চান ডমিঙ্গো
হেড কোচে বড় নাম চেয়েছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। রাসেল ডমিঙ্গোকে নিয়ে নাকি এতটা ভাবেনি বিসিবি। মাইক হেসন, মিকি আর্থার, ফল ফারব্রেস, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারদের ভেতরই কাউকে চেয়েছিল টাইগার ক্রিকেটের বড় কর্তারা।
তবে শেষ পর্যন্ত এদের পেছনে ফেলে সাকিব-তামিমদের হেড কোচে নাম লিখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ রাসেল ক্রেইগ ডমিঙ্গো। এতে অনেকেই অবাক হয়েছেন। যে কিনা দক্ষিণ আফ্রিকার বাইরে কোনও দলের সঙ্গে কাজ করেননি কখনও। তাছাড়া বর্তমানে দায়িত্ব আছেন প্রোটিয়া ‘এ’ দলের। তাতে খানিক অবাক হবারই কথা।
ডমিঙ্গো ২০১২ সালের ডিসেম্বরে দক্ষিণ আফ্রিকা টি-টোয়েন্টি দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১৩ সালে টেস্ট ও ওয়ানডে দলেরও কোচ করা হয় তাকে। ২০১৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও ২০১৫ বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেমি-ফাইনালে তোলায়ও সফল ভূমিকা ছিল ডমিঙ্গোর।
এর আগে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের দায়িত্ব পেয়ে কাজ শুরু করা ডমিঙ্গো ২০১৭ সালে আবারও দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পান। সেই দায়িত্ব এখনও পালন করছেন তিনি। বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ‘এ’ দলের দায়িত্ব ছেড়ে আসছেন তিনি।
---------------------------------------------------------------------
আরও পড়ুন :ম্যানচেস্টার সিটির জয়রথ থামালো টটেনহ্যাম
---------------------------------------------------------------------
যদিও ডমিঙ্গোকে নিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা করছেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। শনিবার হঠাৎ করেই গণমাধ্যমকে জানান, রাসেল ডমিঙ্গোই বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ।
ডমিঙ্গো কেন? এমন প্রশ্নে পাপনের উত্তর ছিল, রাসেলের উপস্থাপনায় আমরা সন্তুষ্ট। বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে সে অনেকে জানার চেষ্টা করেছে। বয়স ভিত্তিক দলগুলো নিয়ে কাজ করতে চায়।
তাছাড়া ডমিঙ্গোর একটা কথা নাকি বিসিবি প্রধানের বেশ ভালো লেগেছে। সেটা, ডমিঙ্গো কোনও বিরতি চাননি। বিরতি ছাড়াই কাজ করতে চান চুক্তি শেষ হওয়া পর্যন্ত।
সব মিলে বিসিবি-ডমিঙ্গোর ব্যাটে-বলে মিলে গেছে বলেই টাইগারদের গুরু দায়িত্ব নিতে পারছেন এই প্রোটিয়া কোচ।
দায়িত্ব পেয়ে ডমিঙ্গো এক বিবৃতিতে জানান, আন্তর্জাতিক স্তরে কোচ হবার জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো সময় আমার। বাংলাদেশের কোচ হয়ে আমিও নতুন চ্যালেঞ্জের অপেক্ষায় আছি।
বাংলাদেশ দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পাবার পর ‘ক্রিকইনফো’কে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডমিঙ্গো জানান, বাংলাদেশ ক্রিকেটকে নিয়ে তার প্রত্যাশার কথা।
ডমিঙ্গোর পরিকল্পনার শুরুতেই থাকছে তরুণ খেলোয়াড়েরা। তাদের নিয়ে বিস্তর জানতে চান এই প্রোটিয়া কোচ।
‘নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে এগিয়ে যেতে চাই। তাদের নিয়ে পরিকল্পনা সাজাতে চাই। তারা কিভাবে উঠে আসছে, সে ব্যাপারে আমি একটু জানতে পারলে কাজটা আরও সহজ হবে।’
‘কারণ, তরুণদের তুলে এনে সিনিয়রদের ওপর কিছুটা চাপ সৃষ্টি করা যাবে। এটা নিঃসন্দেহে ভালো কিছু দেবে ভবিষ্যতের জন্য। তাদের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগও দিতে হবে। কেননা, তারাই শেষ পর্যন্ত জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিবে।’
তরুণদের ভালোভাবে বুঝতে বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচ, ম্যানেজারদের সঙ্গে কাজ করতে চান ৪৪ বছর বয়সী এই ডমিঙ্গো। বয়সভিত্তিক দল নিয়েও যে বেশ খোঁজ রাখেন তিনি সেটা ক্রিকইনফোর সাক্ষাৎকারেই জানা গেল।
‘সেরা খেলোয়াড়টি বের করতে হলে বয়সভিত্তিক দলগুলোর কোচ ও ম্যানেজারের সঙ্গে কাজ করাটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ। সম্প্রতি বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে চারবার হারিয়েছে। ভারতের সঙ্গেও দারুণ খেলেছে। এর মানে এই দলে প্রতিভাবান খেলোয়াড় আছে অনেক।
‘তাদের জাতীয় দলের সংস্পর্শে রাখা দরকার। তাদের উন্নতিতে আরও মনোযোগী হতে হবে। তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে করে আগামী পাঁচ থেকে ছয় বছরে বাংলাদেশ ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে পারে।’
ডমিঙ্গোর কথায় উঠে আসে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ প্রসঙ্গও। তার মতে কিছু ছোট ছোট ভুল হতাশ করেছে বাংলাদেশকে।
‘কয়েকটি ছোট ভুলের জন্য সেমিফাইনালের আগে ছিটকে পড়তে হয়েছে বাংলাদেশকে। এসব ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে পরের বিশ্বকাপের আগে সংশোধন করতে হবে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটায় একটা রানআউটের সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় সেমিফাইনালে খেলতে পারেনি বাংলাদেশ। এসব ভুল খুব ছোট ছোট। এখান থেকে বের হতে হলে খেলোয়াড়দের মনস্তাত্ত্বিকভাবে আরও শক্ত হতে হবে।’
দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দল কিংবা বয়সভিত্তিক দলগুলোর সঙ্গে কাজ করে পোক্ত ডমিঙ্গোর আশা বাংলাদেশও ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠবে।
‘গত কয়েক বছরে এই দলটা বেশ উন্নতি করেছে। খেলেছেও অসাধারণ। ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে কথা বলে বুঝেছি, তারাও বেশ আগ্রহী দলটাকে এগিয়ে নিতে। আশা করি আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশও ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি হয়ে উঠেবে।’
এমআর/পি
মন্তব্য করুন