স্বপ্নের ফাইনালে বিশ্বকাপ জয় বাংলাদেশের
এই দিনটার জন্যই কি তবে অপেক্ষা ছিল কোটি বাঙালির! হোক না অনূর্ধ্ব-১৯ দল, ট্রফিটা তো বিশ্বকাপের। বাংলাদেশ ইতিহাস গড়েছে। ভারতকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
এবারের আসরে দুই অপরাজিত দলের ফাইনাল। শুধু এই আসর না, ফাইনালের আগে সবশেষ ৯টি ম্যাচের কোনো ম্যাচেই হারেনি দুই দল। শেষ পর্যন্ত ভারত ছিটকে পড়ল জয়ের রাস্তা থেকে।
পচফস্ট্রমে ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন কাঁধে নিয়ে আকবর আলী টস জিতে সিদ্ধান্ত নেন বোলিংয়ের। আগের রাতে বৃষ্টি হওয়ায় আকবর টস জিতে দেরি করেননি বোলিং নিতে। তার ফলও পেতে দেরি হয়নি। ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই দিবায়ানস সাক্সেনাকে ২ রানে ফিরিয়ে দেন অভিষেক দাস।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিটা বেশ লম্বা করেন ইয়াশবি জশওয়াল ও তিলাক বার্মা। এই জুটি থেকে আসে ১০২ রান। দলীয় ১০৩ রানের মাথায় ব্রেক-থ্রু এনে দেন সাকিব। তিলক বার্মাকে ৩৮ (৬৫) রানে ফেরান এই পেসার।
চার নম্বরে ব্যাট করতে আসেন অধিনায়ক প্রিয়াম গ্র্যাগ। টাইগার যুবাদের বোলিং তোপে থিতু হতে পারেননি প্রিয়ামও। মাত্র ৭ রানের মাথায় কাঁটা পড়েন রকিবুল হাসানের ঘূর্ণিতে।
ভারতের নিয়মিত বিরতিতে উইকেট যাওয়া শুরু করলেও সেমি-ফাইনালের সেঞ্চুরিয়ান ইয়াশবি জশওয়াল যেন দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন বাংলাদেশের বোলারদের সামনে।
কিন্তু আজ আর হলো না। ৩৯ ওভার পাঁচ বলের মাথায় জশওয়াল ৮৮ রানে সাজঘরে ফেরেন ক্যাচ দিয়ে। পরের বলে আবারও শরিফুলের আঘাত। সিদ্বেশ বীরকে ফিরিয়ে সম্ভাবনা জাগান হ্যাটট্রিকের।
টানা দুই উইকেট পড়ার পর আর ভারতের লম্বা ব্যাটিং লাইন-আপ ভেঙে পড়ে হুড়হুড় করে। ৪৭.২ ওভারে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ইনিংস। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে।
বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক নেন ৩ উইকেট। ২টি করে উইকেট নেন শরিফুল ও সাকিব। ১উইকেট নেন রকিবুল হাসান।
টাইগারদের সামনে ছোট লক্ষ্য। এই ছোট লক্ষ্যটাই ভারী হয়ে ওঠে নিয়মিত বিরতিতে উইকেট দিয়ে। ১৭৭ রানের লক্ষ্যও যেন ২৭৭ রানে পরিণত হয়।
শুরুটা দুর্দান্ত হয় বাংলাদেশের। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান ও পারভেজ ইমন মিলে জুটি গড়েন ৫০ রানের।
ব্যাক-ফুটে চলে যাওয়া ভারতকে রক্ষা করেন রবি বিষ্ণয়। ৮ ওভার পাঁচ বলের মাথায় ওপেনার তানজিদ ইমনকে বিদায় করেন ১৭ রানে।
এরপর পারভেজ ইমন চোট পেয়ে মাঠ ছাড়েন ২৫ রানে। এর মাঝে বাংলাদেশের টপ-অর্ডার ভেঙে দেন বিষ্ণয়। মাহমুদুল হাসান জয়কে ৮, তৌহিদ হৃদয়কে শূন্য আর শাহাদাৎ হোসেনকে ১ রানে ফেরান এই লেগ স্পিনার।
শামিম হোসেন আর আকবর আলীর জুটি আশার আলো দেখালেও সুশান্ত মিশ্রার বলে ক্যাচ দিয়ে শামিম ফেরেন ৭ রান করে।
শামিমের বিদায়ের পর আকবরকে সঙ্গ দিতে নামেন অভিষেক দাস। কিন্তু থাকতে পারলেন না বেশীক্ষণ। এলোমেলো শর্টে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ৭ রান করে।
চোটে পড়া পারভেজ আসেন দলের হাল ধরতে। আকবর আলীর সঙ্গে জুটি গড়েন ৪১ রানের। জয়ের স্বপ্নটা আরও উজ্জ্বল করেন এই জুটি।
কিন্তু খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে আর কতক্ষণ। ৭৯ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন পারভেজ।
গোটা আসরে সবমিলে ২১ রান করা আকবর আলী আজ জ্বলে উঠেন ফাইনালে এসে। তার ব্যটে বাংলাদেশ পৌঁছে যায় বিশ্বকাপ জয়ের দ্বারপ্রান্তে।
অধিনায়কের অপরাজিত ৪২ রানের ইনিংসে ভর করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে ইতিহাস রচিত করেছে বাংলাদেশ। ক্রিকেট বিশ্ব পেল যুবাদের নয়া বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন।
এমআর/
মন্তব্য করুন