যশোরে নলকূপ দিয়ে উঠছে গ্যাস
নতুন বাড়ির আঙিনায় নলকূপ (টিউবওয়েল) বসানো হয়েছে। সেই নলকূপে পানির পরিবর্তে উঠছে গ্যাস। আগুন দিলে জ্বলছেও। টানা সাত দিন এভাবে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। নলকূপ গ্যাস বের হওয়ার খবর রটে গেছে পুরো এলাকায়।
সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত উৎসুক জনতার হাজারো প্রশ্নের জবাব দিতে হিমশিম খাচ্ছেন নলকূপটির মালিক যশোর সদর উপজেলার চুরামনকাঠি ইউনিয়নের নলডাঙ্গা গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে সোহেল রানা ও তার পরিবারের সদস্যরা।
তাদের ধারণা এখানে গ্যাসের খনির সন্ধান মিলতে পারে। এজন্য তারা বিশেষজ্ঞদের অপেক্ষায় আছেন। সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতাও আশা করছেন।
তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা ‘পকেট গ্যাস’। কয়েকদিন পরেই নিভে যাবে, ভয়ের কোনো কারণ নেই।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মাইনিং ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ বলেন, এটাকে পকেট গ্যাস বলা হয়। এই গ্যাস প্রচণ্ড দুর্গন্ধ হয়। সাধারণ ডোবা, খাল ভরাট জায়গায় এ ধরণের গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়।
গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ পচে ব্যকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়। এ ব্যকটেরিয়া থেকে পকেট গ্যাস হয়। কিছুদিন পর এটি এমনিতেই নিভে যায়। ওই জায়গার গ্যাস নির্গতের ভিডিও দেখেছি। গ্যাস নির্গতের গতি কম। অল্প দিনে নিভে যাবে। তবে এতে কোনো ঝুঁকি নেই।
সরেজমিনে নলডাঙ্গা গ্রামের সোহেল রানার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নলকূপের সঙ্গে লাগোয়ো একটি চিকন লোহার পাইপ দিয়ে গ্যাস নির্গত হচ্ছে। পাইপের মাথায় আগুনও জ্বলছে। নলকূপ ঘিরে উৎসুক কয়েজন নারী পুরুষ দেখছে। কৌতুহলি মানুষের নানা প্রশ্ন। এদের মতো শত শত মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সোহেল রানা ও তার পরিবার।
--------------------------------------------------------
আরও পড়ুন: ফরিদপুরে ১৫ পেট্রলবোমাসহ আটক ১
--------------------------------------------------------
তারপরও সোহেল রানা অপেক্ষায় আছেন আসল ব্যাপারটা উদঘাটনের। ফায়ার সার্ভিসের লোকজনও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। কিন্তু গত কয়েক দিনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
প্রতিবেশি এক বৃদ্ধা বলছিলেন, যেখানে নলকূপ বসানো হয়েছে, সেখানে এক সময় খাল ছিল। সেটি ভরাট হয়ে গেছে। সেই জমিতে বাড়িঘর তুলেছে সোহেল। সেখানে নলকূপ বসানোর পর গ্যাস বের হচ্ছে।
সোহেল রানা বলেন, রাস্তার পাশে অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে নতুন বাড়ি করেছেন। বাড়িতে একটি নলকূপ দরকার। এজন্য গত ৬ ফেব্রুয়ারি মিস্ত্রি দিয়ে নলকূপ বসানো শেষে পাইপের মুখ বসানোর সময় বুদবুদ করে ধোয়ার মত বের হতে থাকে। বিষয়টি দেখে সন্দেহ হয়। এক পর্যায়ে দিয়াশলাই দিয়ে আগুন দিলে জ্বলে ওঠে। নলকূপ বসানোর পর একটি পাইপ লাগানো হয়েছে। সেই পাইপ দিয়ে পাঁচ দিন ধরে গ্যাস বের হচ্ছে। ভাবছিলাম, কয়েকদিন পর হয়তো গ্যাস বের হওয়া বন্ধ হবে। কিন্তু আজও বের হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, নলকূপ দিয়ে গ্যাস বের হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ায় উৎসুক জনতা ভিড় করছে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ ভিড় করছে। সবচেয়ে বেশি মানুষের ভিড় থাকে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। আর শত শত মানুষের নানা প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি।
সোহেল রানা বলছিলেন, আমার ধারণা এখানে গ্যাসের খনি থাকতে পারে। ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে দেখে গেছে। তারা বলেছে, উপরের লোকজন আসবে। কিন্তু আর কেউ আসেনি। আমি চাই পরীক্ষা নিরীক্ষা করে আসল রহস্যটা বের করা হোক।
নলকূপ স্থাপনের মিস্ত্রি হাফিজুর রহমান বলেন, নলকূপ স্থাপনের জন্য ১৭০ ফুট গভীরে পাইপ বসানো হয়। কাজ শেষে মুখ বন্ধ করার সময় গ্যাসের সন্ধান পাওয়া যায়। এই গ্যাসে প্রচণ্ড দুর্গন্ধ, আগুন দিলে জ্বলছে।
আরও পড়ুন:
এসআর
মন্তব্য করুন