তারা চাইতেন না আমি সিনেমায় অভিনয় করি : ববি
পুরো নাম ইয়ামিন হক ববি। এ গ্ল্যামারাস চিত্রনায়িকা ঢালিউডে 'ববি' নামেই পরিচিত। তার অভিনীত ও প্রযোজিত ছবি 'বিজলি' এখন মুক্তির অপেক্ষায়। সুপার পাওয়ার কেন্দ্রিক এ ছবিটি নিয়ে আরটিভি অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। সোজাসাপ্টা কথা বলেছেন চলচ্চিত্রের সংকট-সম্ভাবনা নিয়ে। জানিয়েছেন বিয়ে, সংসার, ব্যক্তিজীবন ও রূপালি পর্দায় উঠে আসার নেপথ্যের কথা। ববির এ দীর্ঘ সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন এ এইচ মুরাদ। আজ প্রকাশিত হলো প্রথম কিস্তি।
‘বিজলি’ অভিযানের কী খবর?
সাইন্স ফিকশন ছবিতে এটাই আমার প্রথম কাজ। 'বিজলি' বাংলাদেশের প্রথম সুপারহিরো সুপার হিরোইন মুভি হতে যাচ্ছে। হলিউডে যেমন ওয়ান্ডার ওম্যান, স্পাইডারম্যান, সুপারম্যান, বলিউডে রাওয়ান, কৃষ, রোবট, ঠিক তেমনই এই ছবিটি। বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি নির্মিত হয়নি। সুপারহিরো সুপার হিরোইন মুভি হলেও গল্পটি এদেশের প্রেক্ষাপটেই তৈরি হয়েছে। ছবির গল্পটি ইলেকট্রিক পাওয়ার নিয়ে। এ ছবি নির্মাণের আগে মনে হয়েছে, হলিউড-বলিউডে যদি সুপার পাওয়ার নিয়ে ছবি হতে পারে, ঢালিউডে কেন হবে না। সে ভাবনা থেকেই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছি।
প্রথমবার প্রযোজক হলেন, বাড়তি কোনো চাপ কাজ করছে?
না। সেরকম একদমই না। তবে আগের ছবিগুলোর ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় কাজ করতো। যেমন, ছবিটি দর্শকরা কীভাবে নেবেন; কেমন সাড়া ফেলবে- এরকম। পার্থক্যটা হলো আগে আমি টাকা লগ্নি করিনি। আর এই ছবিতে টাকা লগ্নি করেছি। বর্তমানে সিনেমার বাজার খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। তারপরও এত কম সময়ে দর্শকদের যে ভালোবাসা পেয়েছি, সেই সাহস থেকেই ছবিটি প্রযোজনা করা।
এ ছবির নেপথ্যে কোনো বিশেষ কারণ আছে কি?
আমার সবসময় ইচ্ছে ছিল ক্রিয়েটিভ কাজ করার। এতদিন তো প্রযোজক ছিলাম না। কিন্তু এবার যখন সেই সুযোগটি এসেছে, তখন নিজের ইচ্ছে বলেন বা স্বপ্ন বলেন, পূরণের চেষ্টা করেছি।
প্রযোজনায় ধারাবাহিকতা রাখতে চান?
এটা 'বিজলি'র সফলতার ওপরে অনেকটাই নির্ভর করছে। তবে পুরোপুরি না। আগামীতেও প্রযোজনা করবো সেক্ষেত্রে প্রযোজনা সংশ্লিষ্ট কাজগুলো অনুকূল হতে হবে। পারমিশন, লোকেশন, এসোসিয়েশন নানা বিষয়ে অনুমতি সহজ হতে হবে। ভালো চলচ্চিত্রের জন্য ভালো প্রযোজক খুব প্রয়োজন। যদিও সিনেমায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ হলেন ডিরেক্টর। ভালো শিল্পীও দরকার, কিন্তু সিনেমাই যদি নির্মাণ না হয়, ভালো শিল্পী আসবে কোথা থেকে? আর ভালো চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য টাকাও লাগে। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে অনেক গুণী মানুষ আছেন, যারা শুধু টাকার অভাবে কাজ করতে পারছেন না। এখন যদি নিজেরা কাজ না করে প্রযোজকদের পেছনে লেগে থাকি তাহলে সিনেমার উন্নয়ন হবে কীভাবে? অতিরিক্ত 'রাজনীতি' হতে থাকলে সিনেমার সংখ্যা আরো কমবে।
এই রাজনীতির পেছনের কারণ কী?
আপনারাই এ সম্পর্কে ভালো জানেন। তবে আমি মনে করি, নিজেদের ছোট ছোট সমস্যা, অহংবোধ, কে কার সঙ্গে কাজ করছেন আর কাজ করছেন না এই বিষয়গুলো নিয়ে বেশি লেগে থাকছে সবাই। বাইরের মানুষ এটা নিয়ে হাসাহাসি করে। সম্প্রতি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন কেন্দ্রিক বেশকিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, যা দেখে ভীষণ কষ্ট পেয়েছি। চলচ্চিত্র অনেক বড় একটা মাধ্যম। অথচ ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিষয় নিয়ে নিজেরাই এ শিল্পেরই ক্ষতি করছি। আমার মনে হয় অভিভাবক যারা আছেন, সমস্যা সমাধানে তাদের এগিয়ে আসা উচিত।
পরিচালক-শিল্পীদের বেফাঁস মন্তব্যেই কী লোক হাসাচ্ছে?
বলতে পারেন, অনেকটা। ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগত জায়গায় রাখা উচিত বলে মনে করি। স্বর্ণযুগের শিল্পীদের অনুসরণ করার চেষ্টা করি সবসময়। হলিউডেও কিন্তু সাদা কালোর যুগকেই স্বর্ণযুগ বলা হয়। এখন হলিউড এতো উন্নত, এর কারণ তারা পেছন থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু আমরা ক্রমশই পেছনের দিকেই পড়ে থাকছি। অথচ এ দেশের সিনেমাকে এগিয়ে নিতে হলে পেছনে ফিরে যাবার সুযোগ নেই। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলার অধিকার কারো নেই।
সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে আড়ালে রাখেন কেন?
আমি হুটহাট করে ফেসবুকে কিছু একটা দেয়ার পক্ষপাতি না। আমার ফেসবুক ওয়াল খেয়াল করলেই সেটা বুঝতে পারবেন। নিজের ব্যক্তিগত বিষয় ব্যক্তিগত জায়গায় রাখতে চাই। এছাড়া পরিবার থেকে বাধা ছিল সিনেমা না করার ব্যাপারে। তারা চাইতেন না আমি সিনেমায় অভিনয় করি। গসিপ, কাঁদা ছোড়াছুড়ি- এসব নিয়ে পরিবারের ঘোর আপত্তি ছিল। আমি এখনো পরিবার ও ক্যারিয়ার আলাদা রাখার চেষ্টা করি।
মঙ্গলবার পড়ুন সাক্ষাৎকারের দ্বিতীয় কিস্তি
‘আমার পেছনে কোনো গডফাদার ছিল না’
মন্তব্য করুন