স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা
স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পথে বাংলাদেশের যে আরেক ধাপ উত্তরণ ঘটেছে, তাতে দেশের জন্য চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা দুটোই অপেক্ষা করছে।
জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদের উন্নয়ন নীতিমালাবিষয়ক কমিটির (সিডিপি) ২৬তম অধিবেশনে ত্রিবার্ষিক মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের তিনটি সূচকেই টানা তৃতীয় বারের মতো উত্তীর্ণ হয়েছে। চলতি বছরের ৪ থেকে ৮ মার্চ জাতিসংঘের সদর দপ্তরে সিডিপির এই অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়।
সিডিপি মনে করে, বাংলাদেশসহ যে ছয়টি দেশ এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে, তাদের সবার সামনেই চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হলো বৈশ্বিক সংকট; ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা; জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি; বিদেশি সহযোগিতা বাড়ানো।
১৯৭১ সালে এলডিসি তালিকা প্রণয়নের পর থেকে এযাবত এলডিসি থেকে উত্তরণ হওয়া সাতটি দেশ এবং উত্তরণের প্রক্রিয়াধীন ছয়টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশই একমাত্র সদস্য রাষ্ট্র, যেটি টানা তিন মূল্যায়নে সব সূচকে উত্তীর্ণ হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের এলডিসি থেকে উত্তরণের চূড়ান্ত দিনক্ষণ ঘোষণা করেছে জাতিসংঘ। ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বরই হচ্ছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ।
এতে করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও যুক্তরাজ্য ২০২৯ সাল পর্যন্ত তাদের অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা অব্যাহত রাখলেও অন্যরা সেটা প্রত্যাহার করবে। তার মানে, স্থানীয় রপ্তানিকারক ও ব্যবসায়ীরা বিশ্ববাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হবেন।
বাংলাদেশের যত চ্যালেঞ্জ
এলডিসি থেকে বের হলে সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে রপ্তানি খাত। কারণ, এলডিসি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) আওতায় শুল্কমুক্ত বাণিজ্যসুবিধা পায়। ইউরোপীয় ইউনিয়নেও আঞ্চলিক বা দ্বিপক্ষীয় ভিত্তিতে (যেমন ভারত, চীন) এ ধরনের শুল্কসুবিধা মিলছে। বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী ২০২৬ সালে এসব সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ইউরোপীয় ইউনিয়নে জিএসপির আওতায় শুল্কসুবিধা ২০২৯ সাল পর্যন্ত থাকবে।
এলডিসি তালিকা থেকে বের হলে বাংলাদেশের পাওয়া কিছু বাণিজ্য ও অন্যান্য সুবিধা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর নিয়মিত হারে শুল্ক বসবে। ডব্লিউটিওর এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাড়তি শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি বছরে ৫৩৭ কোটি ডলার বা সাড়ে ৪৫ হাজার কোটি টাকা কমতে পারে।
বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনা
এলডিসি থেকে উত্তরণ বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে অপার সম্ভাবনার দ্বার। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হচ্ছে বিশ্ব দরবারে দেশের ভাবমূর্তির ইতিবাচক পরিবর্তন। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল দেশের অবস্থান পাকাপোক্ত হবে। মিলবে উন্নয়নের বৈশ্বিক স্বীকৃতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণের যে প্রত্যায়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেই স্বপ্নের বাস্তবায়নে আমরা আরও এক ধাপ এগিয়ে যাব।
এলডিসি থেকে উত্তরণের অন্যতম শর্ত হচ্ছে অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ভঙ্গুরতার সূচকে উত্তীর্ণ হওয়া। বাংলাদেশ টানা তিনটি ত্রিবার্ষিক মূল্যায়নে সাফল্যের সঙ্গে এ সূচকে উত্তীর্ণ হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে বাংলাদেশের অর্থনীতি তুলনামূলক কম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, যা বিদেশি বিনিয়োগীকারীদের আকর্ষণ করার অন্যতম অনুষঙ্গ। এতে করে নতুন শিল্প কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে দেশে শিল্পায়নের সুযোগ বাড়বে এবং অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। শিল্পায়ন ও বাণিজ্য সম্প্রসারণের ফলে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।
মন্তব্য করুন