ধানমন্ডিতে ছিনতাই হওয়া ফোন ভারত থেকে উদ্ধার

আরটিভি নিউজ

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪ , ০৮:০৩ পিএম


ধানমন্ডিতে ছিনতাই হওয়া ফোন ভারত থেকে উদ্ধার
ফাইল ছবি

২০২৩ সালের ৭ নভেম্বর রাজধানীর ধানমন্ডিতে দিনাজপুরের ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়ার মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়। ওই রাতেই ধানমন্ডি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন তিনি। কিন্তু ছিনতাই হওয়া ফোনটি দেশের ভিতর নয়, উদ্ধার হয় ভারতের গুজরাট রাজ্য থেকে।

বিজ্ঞাপন

ডেপুটি জেলার ফেরদৌস মিয়া সেই রাতের বর্ণনা দিয়ে বলেন, ধানমন্ডি ৮নং রোডে একটি বটগাছের নিচে দাঁড়িয়েছিলাম, হঠাৎ করেই দুজন লোক একটি মোটরসাইকেল এসে আমার সামনে দাঁড়ায়। এরপর কিছু বুঝে ওঠার আগেই হাত থেকে আমার ফোন কেড়ে নেয় ওরা। ফোনটা ছিল স্যামসাংয়ের এস২৩ আলট্রা। প্রথমে ভাবলাম, কেউ প্রাঙ্ক করছে কি না, কিন্তু মিনিটখানেকের মধ্যেই ভুলটা ভাঙল, এবার বুঝলাম আমি ছিনতাইয়ের শিকার হয়েছি।

এরপর তিনি ‘স্মার্ট থিংস’ নামের স্যামস্যাং ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির তৈরি একটি অ্যাপের মাধ্যমে জানতে পারেন ফোনটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

জিডি করার সময় পুলিশ কর্মকর্তারা তাকে জানান, ছিনতাইকৃত ফোনটি কেউ ব্যবহার করা শুরু করলেই কেবল সেটা উদ্ধার করা যাবে। ওই অ্যাপের দিকে সার্বক্ষণিক নজর রেখেছিলেন ফেরদৌস। কিছুদিন পরে একদিন সকালে ওই অ্যাপে তার ছিনতাই হওয়া ফোনের লোকেশন দেখায়।

‘কিন্তু ফোনের লাইভ লোকেশন দেখার পর মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। লোকেশন দেখাচ্ছিল, ঢাকা থেকে ২ হাজার ৫৪৮ কিলোমিটার দূরের ভারতের গুজরাট রাজ্যের আমরেলি শহর। ফলে ফোনটা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা যে একদমই নেই তা বুঝতে পারছিলাম।’

ফেরদৌসকে পুলিশও জানায় যে, তাদের অভিযানে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকায় চুরি হওয়া বেশির ভাগ দামি স্মার্টফোন প্রতিবেশী ভারতে পাচার করা হয়। এরা হচ্ছে আন্তর্জাতিক পাচার চক্র।

বিজ্ঞাপন

তবে নিজের ফোন ফিরে পেতে নাছোড়বান্দা ছিলেন ফেরদৌস মিয়াহ, ফলে উপায়ও খুঁজতে থাকেন।  

বিজ্ঞাপন

ইন্টারনেটে নানান পরামর্শ জেনে, স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে এবং নানান ওয়েবসাইট ঘুরে শেষপর্যন্ত একটাই মাত্র সমাধানের পথ পান, সেই অনুযায়ী ভারতের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং দুই দেশের হাইকমিশনে ই-মেইল করেন।

ফেরদৌস বলেন, ই-মেইল করা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আমি বাংলাদেশ ও ভারতের হাইকমিশন, গুজরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রবিষয়ক রাজ্যসচিব, গুজরাটের রাজ্য পুলিশের নোডাল অফিসার, গুজরাট পুলিশ কমিশনারের দপ্তরকে হারানো ফোনটির সমস্ত কাগজপত্রের তথ্য দিয়ে ই-মেইল করি। দিই ফোনের লাইভ লোকেশন, আইএমইআই নম্বর, ফোন কেনার রসিদসহ যাবতীয় তথ্য। মেইল পাঠানোর কয়েক দিন পর থেকে নিয়মিত মেইলবক্স চেক করতে থাকি। 

কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পরেও যখন কোনো ই-মেইল পেলাম না, তখন ফোনটি ফেরত পাবার আশাই ছেড়ে দিলাম। 

চলতি বছরের ১ মার্চ বিদেশি একটি নম্বর থেকে আমাকে কল করা হয়। প্রথমে ভেবেছিলাম, কোনো জালিয়াত চক্রের কল। কিন্তু অপরপ্রান্তের ব্যক্তিটি নিজেকে গুজরাটের একজন পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দিলেন। ফোনটি কুরিয়ারে পাঠাতে আমার ঠিকানা চাওয়ার আগ পর্যন্ত আমি তার কথা বিশ্বাসই করিনি।

তবে কিছুদিনের মধ্যে সত্যিই আমি ফোনটি ফিরে পেলাম। তাই এমনটা ঘটলে সাধারণ মানুষকে হাল না ছাড়ারই পরামর্শ দেব। আপনার খোয়া যাওয়া ফোন কোনো আন্তর্জাতিক চক্রের হাতে পড়লে সম্ভাব্য সমস্ত সূত্র থেকে তথ্য নিন এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানান। নিরাশ হবেন না, আমার কথাই বলি, সীমান্তের ওপারের প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটার দূরে এক মফস্বল শহর থেকে ফোনটা ফেরত পাব– এটা তো অকল্পনীয়। 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission