কয়েক মাস আগে ঋণ করে জমিতে কলাগাছ লাগিয়েছিলেন। ইতোমধ্যেই রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে প্রায় ৭০ হাজার টাকা খরচও করেছেন। তিন মাস পরই ফল দেওয়ার কথা। ফলনের জন্য প্রহর গুনছিলেন টাঙ্গাইল মধুপুর গড়ের গারো নারী বাসন্তী রেমা। কিন্তু অঙ্কুরিত হবার আগেই বিনাশ হয়ে যায় বাসন্তীর সেই স্বপ্ন।
সম্প্রতি (১৪ সেপ্টেম্বর) বন বিভাগ বিনা নোটিশে বাসন্তী রেমার ৪০ শতাংশ জমির আবাদী কলাবাগান কেটে দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমাজ সচেতন অনেকেই এর প্রতিবাদ জানায়।
শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে কলাবাগান পরিদর্শন করে এবং বাসন্তী রেমার পাশে দাঁড়ান সামাজের বিশিষ্টজনেরা। বাসন্তী রেমার বাড়িতে এক প্রতিবাদ সমাবেশ আয়োজন করা হয়। সভায় বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, লেখক, কলামিস্ট ও আধিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং, লেখক ও গবেষক অদিতি ফাল্গুনী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জোবাইদা নাসরিন কণা, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য ও প্রচার সম্পাদক দীপায়ন খীসা, জনউদ্যোগের সমন্বয়কারী তারেক মিঠুল প্রমুখ।
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘মাঝে মাঝে আমরা খবর পাই যে, বন্য হাতি এসে ফসল তছনছ করে দেয়। কলাবাগান দেখে আমার মনে হয়েছে, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বন্য হাতির মতোই কলাবাগান নষ্ট করেছে। এটি কি একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান করতে পারে?
কলাগাছের কষের মধ্যে আমি আদিবাসীদের রক্ত দেখতে পাই মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘বাসন্তীদি খুব আশা নিয়ে দুই থেকে তিনটি এনজিও থেকে ঋণ করে বাগানটি করেছিলেন। আজকে কলাগাছকে হত্যা করেছে পরে আধিবাসীদের হত্যা করবে।
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের সংবিধানে প্রত্যেকের সমান অধিকার রয়েছে। কাজেই সবাই বুক ফুলিয়ে চলবেন। আপনাদের বাপ দাদার মাটি ছেড়ে কেউ যাবেন না। যত কষ্ট হোক যন্ত্রণা হোক যাওয়া কোন সমাধান না। আমাদের তাৎক্ষণিক দাবি হচ্ছে, তাকে যথার্থ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।’
সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘যেকোন অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে হবে। সবাইকে এক থাকতে হবে। এই বার্তাই আমরা দিতে আসছি যে, বাসন্তীদি একা না, আমরা সাবাই মিলে আপনাদের পাশে আছি। আমরা কথা দিয়ে যাচ্ছি। যতবার অন্যায় হবে ততবারই আমরা আসবো। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে এটি আমাদের দায়িত্ব।’
সঞ্জীব দ্রং বলেন, জাতিসংঘের এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, পৃথিবীতে আদিবাসী জনগোষ্ঠী ৫ ভাগ। এই ভাগ মানুষই শতকরা ৮০ ভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করে। এই বাংলাদেশেও পাহাড়, নদী, জীববৈচিত্র্যকে সংরক্ষণ করে? এই মধুপুর বনকে সংরক্ষণ করে? বন লাভ বা মুনাফার কোনো বিষয় না। অরণ্য হলো জীবনের প্রতীক। মধুপুর বনকে মান্দি বা গারোরা বলেন আদি মা, মাটির মা। এই সংস্কৃতি তো আমাদের রাষ্ট্র বা বন বিভাগ জানে না। আজকে বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তিনি এই ঘটনায় ব্যথিত হতেন। বাসন্তী দিদির জন্য আমি নিশ্চিত তাঁর আত্মা হাহাকার করছে। কারণ তিনি গরীব দুখী মানুষের কথা ভাবতেন।
পি