ঢাকামঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১০ আষাঢ় ১৪৩২

ঘূর্ণিঝড়ের রাতে কবর খোড়াতে হয়েছে রোজিনাকে  

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২০ , ১১:৪১ এএম


loading/img
রোজিনা আক্তার সংগৃহীত ছবি আরটিভি নিউজ

করোনার মতো মহামারি ভাইরাসের সময়ে অনেক জনপ্রতিনিধি যখন চুপটি করে বাসায় বসে ‘ইয়া নফসি-ইয়া নফসি’ করেছেন তখন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছেন রোজিনা আক্তার। এ পর্যন্ত ৪৮ জন নারীকে গোসল করিয়েছেন তিনি। আম্পানের মতো ঘূর্ণিঝড়ের রাতে কবর খোড়াতে হয়েছে এ নারীকে।

বিজ্ঞাপন

পদ বিবেচনায় তৃণমূল পর্যায়ের একজন জনপ্রতিনিধি রোজিনা আক্তার। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার এনায়েতনগর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য রোজিনা। এ পর্যন্ত দুই দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। এলাকার মানুষ কেউ ডাকেন রোজিনা মেম্বার বলে কেউবা বলেন মেম্বারনি। স্থানীয়রা জানান, এতদিন তার পরিচিতি শুধু ওয়ার্ড আর ইউনিয়নেই সীমাবদ্ধ ছিল। করোনাকালে তা ছাড়িয়ে যায় অনেক দূর পর্যন্ত। শুরুতে কেউ মারা গেলে লাশ গোসল-দাফন তো দূরের কথা পরিবারের সদস্যরাও ছুঁয়ে দেখতো না। চিরচেনা মানুষ করোনায় আক্রান্ত না হয়েও মারা গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মরদেহ পরে থাকতো। সেই বিভীষিকাময় সময়ে কিছু মানুষ সাহস করে এগিয়ে আসেন। রোজিনা আক্তার তাদের মধ্যে অন্যতম। বলা চলে, সারা বাংলাদেশে তিনিই একমাত্র নারী জনপ্রতিনিধি যে এ পর্যন্ত ৪৮ জন নারীকে গোসল করিয়েছেন। জানামতে, এ রেকর্ড বিশ্বেও বিরল।

শুরুতেই তিনি ঘোষণা দেন কোন মা বোন যদি মারা যায় তাদের গোসলের দায়িত্ব নেবেন তিনি। এরপর শুরু হয় কর্মকাণ্ড। একের পর এক মৃত নারীকে গোসল করাতে শুরু করেন তিনি। রোজিনা আক্তার জানান, প্রতিটি গোসলে নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন হয় তার। ঢাকায় বিশালাকার বাড়ির এক ফ্ল্যাটের একজন নারী যখন করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন তখন আশপাশের কেউ এগিয়ে আসেননি। ওই বাড়ির নীচে গোসল করাতে গেলেন তখনও এলো বাঁধা। শেষ দিকে ওই নারীর ফ্ল্যাটের ওয়াশরুমে গোসল করাতে হয়েছে।  আম্পান ঝড়ের সময়ে রাত আড়াইটা পর্যন্ত ফতুল্লায় এক নারীকে গোসলে ব্যস্ত ছিলেন। আম্পানের আরেক রাতে মাসদাইর কবরস্থানে সারা রাত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

রোজিনা আক্তার আরেক আলোচিত করোনা যোদ্ধা মাকসুদুল আলম খন্দকার খোরশেদের টিম এ পর্যন্ত ৪৮ নারীকে গোসলসহ ১১৮ জনকে দাফন করেছে। রোজিনা আক্তার জানান, তার টিমের সদস্যরা কবরের মাটি খোঁড়ার কাজটি স্বেচ্ছাশ্রমে করেন। এজন্য কোনো পারিশ্রমিক নেন না তারা। 

ঝুঁকি জেনেও কেন এমন কাজে এগিয়ে এলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে আরটিভি নিউজকে রোজিনা আক্তার জানান, স্বামী মারা গেছে। সন্তানরা বিয়ে করে সংসারী হয়েছে। পরিবারে আমার দায়িত্ব যতখানি আমি মনে করি একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে মানুষের প্রতি আরও বেশি দরদ থাকা দরকার। এই বোধোদয় থেকেই করোনা ভয়কে উপেক্ষা করে মানবসেবায় এগিয়ে এসেছি। কোনো আক্ষেপ আছে কি- না এমন প্রশ্নের জবাবে রোজিনা আক্তার বলেন, মানুষকে ভালোবেসে মহান আল্লাহকে খুশি করতে কাজ করেছি। তাই কোনো কিছু নিয়ে আক্ষেপ নেই। তবে যখন দেখি কেউ কাজ না করেও কাজের স্বীকৃতি পায়, সম্মাননা পায় তখন কিছুটা রাগ লাগে। তার মতে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারী বলে তাকে অবহেলার চোখে দেখে কেউ কেউ। তবে এসবে ভ্রুক্ষেপ নেই তার। তিনি আরও বলেন, যতদিন বেঁচে আছি ততদিন মানবসেবা করে যাবো।

জিএম/ এমকে

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |