বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় একটি ৯৬ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছের দাম লাখ টাকা হাঁকা হয়েছে। তবে মাছটি কেউ এককভাবে কিনতে পারেনি। পরে তা কেটে ১২ শত টাকা প্রতি কেজি হিসেবে বিক্রি করা হয়েছে। এছাড়াও মেলায় ২০ থেকে ৫৫ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ, দুই থেকে ৪ কেজি ওজনের মিষ্টি পর্যন্ত বেচাকেনা হয়েছে।
বুধবার বগুড়ার গাবতলী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলায় এসব বিক্রি হয়েছে। মাছ ও মিষ্টির জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠা এই মেলায় বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে। বেলা গড়াতে থাকার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ভিড়ও বাড়তে থাকে বিকেলের দিকে মেলা পরিণত হয় জনারণ্যে। মেলার পাশের সড়কগুলো কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে যানজট দেখা দেয় ।
গাবতলীর চকমড়িয়া গ্রামের লেবু মিয়া, আবুল কাশেম, লাল মিয়া, আবদুল জলিল, মোস্তাক হোসেনসহ পাঁচ ছয় জন মাছ ব্যবসায়ী জানান, যমুনা নদীর ১০০ কেজি ওজনের বাঘাইড় কেটে বিক্রি হয়েছে ১২শ টাকা কেজি দরে। আর ৫৫ কেজি ওজনের বিশাল আকৃতির মাছটি বিক্রির জন্য দাম হাঁকা হয়েছে ১২শ টাকা কেজিতে। এছাড়াও এই মেলায় ১৭ কেজি ওজনের বোয়াল মাছের দাম হাঁকা হয়েছে প্রতি কেজি ১৬শ টাকা, ১৫ থেকে ১৮ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ২২শ টাকা কেজি, ৮ থেকে ১০ কেজি ওজনের কাতলা মাছ ১২শ’ টাকা, ১০ কেজির উপরে আইড় মাছ ১২শ’ থেকে ১৫শ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া রুই, পাঙ্গাস, ব্রিগেড অন্যান্য জাতের মাছ উঠেছে মেলায়।
গাবতলী উপজেলার মহিষাবান ইউনিয়নের ইছামতির নদীর তীরে পোড়াদহ এলাকায় বসেছিল প্রায় চারশ’ বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী ‘পোড়াদহ’ মেলা।
বুধবার দিনব্যাপী সেখানে মাছ ও মিষ্টির মেলা বসানো হয়। পাশাপাশি খেলনা, কসমেটিক সামগ্রীসহ বরই ও নানান পণ্য পসরা নিয়ে বসেছে দোকানীরা। সেইসঙ্গে ছিল নাগরদোলাসহ গ্রামীণ নানা ধরনের খেলার আয়োজন।
মেলার ইজারাদার মহিষাবান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম। তবে তিনি অসুস্থ হওয়ায় তার পক্ষে আয়োজক কমিটির সদস্য সুলতান মাহমুদ সার্বিক দেখভাল করছেন। তিনি জানান, প্রতি বছরের মাঘ মাসের শেষ বুধবার প্রথম দিকে সন্নাসী মেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে এই মেলা। মেলা কালের বিবর্তনে হয়ে ওঠে পূর্ব বগুড়াবাসীর মিলনমেলা। পোড়াদহ নামকস্থানে হয় বলে এ মেলার নাম হয়ে যায় পোড়াদহ মেলা। আবার অনেকেই এটাকে জামাই মেলা বলেও অভিহিত করেন। মেলাকে ঘিরে আশপাশে প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ মেয়ে ও জামাইকে নিমন্ত্রণ দিয়ে আপ্যায়ন করে থাকে। এ কারণে স্থানীয়রা আবার এ মেলাকে জামাই মেয়ে বলে থাকে।
মেলার জন্য ১০ কেজি ওজনের মাছ আকৃতির মিষ্টি তৈরি করেছেন ব্যবসায়ী বাদশা মিয়া ও আব্দুল লতিফ। মহিষাবান এলাকার ব্যবসায়ী লতিফের দোকানে এ মিষ্টির দাম হাঁকানো হয়েছে ৪ হাজার টাকায়। এছাড়া এক কেজি, দুই কেজি, ৩ কেজি, ৪ কেজি ওজনের মিষ্টিও মেলায় পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন নামে। দুইশ’ মণ মিষ্টি রয়েছে এ দোকানে। এ মেলায় মাছ, মিষ্টি, ফার্নিচার, বড়ই, পান সুপারি, তৈজসপত্র, খেলনা থাকলেও কালক্রমে মাছের জন্য বিখ্যাত হয়ে আসছে। মেলায় নাগরদোলা, চরকি, সার্কাসসহ শিশুদের জন্য অন্যান্য খেলা চলছে।
মেলায় মাছ ক্রয় করতে আসা বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী এলাকার ব্যবসায়ী রাশেদুল আলম জানান, তিনি সকাল সাড়ে আটটার দিকে ৮কেজি ওজনের একটি কাতলা মাছ প্রতি কেজি ১২শ টাকা দরে ক্রয় করেছেন।
স্থানীয় সমাজ সেবক লুৎফর রহমান জানান, হাজার হাজার মানুষের পদচারণা হয়ে থাকে এ মেলায়। জামাই মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে গোটা এলাকা।
এলাকার প্রবীণদের মধ্যে মোখলেছুর রহমান জানান, মেলাস্থল পোড়াদহ এলাকায় ইছামতি নদীর তীরে ছিলো একটি বিশাল বটবৃক্ষ। বটবৃক্ষটি এক সময় মরে যায়। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। কথিত আছে সেখানে সন্ন্যাসীদের সাধনার ফলে মৃত বটগাছটি জীবিত হয়। পরে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। সেই থেকে প্রতি বছর মাঘের শেষ বুধবার সেখানে মেলা বসে।
বগুড়ার পুলিশ সুপার আলী আশরাফ আরটিভি নিউজকে জানান, পোড়াদহ মেলাটি সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার নিরাপত্তায় সাদা পোশাকধারীসহ ২ শতাধিক পুলিশ সদস্য নিয়োজিত রয়েছেন।
জেবি