ঢাকাশনিবার, ২২ মার্চ ২০২৫, ৮ চৈত্র ১৪৩১

১১ বছরেও বিচার পায়নি রেজাউলের পরিবার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

বৃহস্পতিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ , ০৩:৩৪ পিএম


loading/img
ছবি সংগৃহীত

ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার মুরারীদহ গ্রামের মৃত গোলাম আকবরের ছেলে রেজাউল ও তার বড় ভাই আদিল উদ্দিনের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল একই এলাকার মৃত রহিম বক্সের ছেলে বসির উদ্দিনের।

বিজ্ঞাপন

এ নিয়ে বসির উদ্দিন রেজাউল ও আদিল উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা, হুমকি ও মারধর করে আসছিল।

বিচার পেতে আদালতের দারস্ত হয় আদিল উদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

এ ঘটনা নিয়ে ২০০৮ সালের ১৬ আগস্ট আদিল উদ্দিন বসিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সদর থানায় হামলা ও মারপিটের এজাহার দায়ের করে।

এছাড়াও পরের বছর ২০০৯ সালের ২১ অক্টোবর রাজ্জাক, বসির ও কবিরের বিরুদ্ধে যেকোনো সময় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুন জখমের বিষয়ে থানায় জিডি করেন।

এরপরই ক্ষিপ্ত হয় বসির ও তার সহযোগীরা। শুরু করে হত্যার পরিকল্পনা। ভ্যানচালক রেজাউলকে হত্যা করতে ৫০ হাজার টাকা চুক্তি করেন শহরের আরাপপুর মাঝিপাড়া এলাকার অজিত বিশ্বাসের ছেলে রণজিত বিশ্বাসের।

বিজ্ঞাপন

চলে হত্যার পরিকল্পনা। ঘটনার দিন ২০১০ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ১০টার দিকে মোবাইলে রেজাউলকে ডেকে নিয়ে ক্যাডেট কলেজের পেছনের জনৈক দেলোয়ার হোসেনের বাগানে নিয়ে যায় রঞ্জিত।

সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো আরাপপুর মাঝিপাড়ার মৃত নুর আলীর ছেলে আকতার, সদর উপজেলার হুদাপুটিয়া গ্রামের শহর আলীর ছেলে মঞ্জুর আলম, আরাপপুর এলাকার কুদ্দুস আলী শেখের ছেলে রাজু শেখ, আরাপপুর বিশ্বাস পাড়ার মহিন আলী বিশ্বাসের ছেলে আরিফ হোসেন।

বশির রেজাউলকে হত্যা করতে ৫০ হাজার টাকা চুক্তি করেছে এ নিয়ে ওই ৫ জনের মধ্যে আলোচনা চলে।

রেজাউল ঘটনাস্থলে পৌঁছালে রঞ্জিতের কাছে থাকা পাইপগান কিভাবে চালাতে হয় তা শেখায়।

মানুষ হত্যা করতে কিভাবে হাত-মুখ বাঁধতে হয় তা শেখানোর জন্য রেজাউলকে হাত বাঁধে রঞ্জিত।

হাত বাঁধার পর গামছা গলায় পেঁচিয়ে রেজাউলকে মাটিতে ফেলে দেয় রঞ্জিত। বাঁচার জন্য রেজাউল হাত-পা ছুড়লে আরিফ ও মঞ্জুর রেজাউলের দুই পা চেপে ধরে।

এ অবস্থায় আকতার ধারালো ছুরি দিয়ে রেজাউলের হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করে গামছা খুলে মাটিতে পুতে দেয় আরিফ। রেজাউলের মোবাইল নেয় আকতার। পাশের পুকুর থেকে রক্ত ধুয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে সবাই। হত্যার এই লোমহর্ষক বর্ণনা উঠে এসেছে রাজু, আরিফ ও মঞ্জুরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে।

এ ঘটনার পরদিক সকালে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে বশির উদ্দিন, একই গ্রামের রাজ্জাক হোসেনের ছেলে আবুল কাশেম ও আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে কবির হোসেনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ঝিনাইদহ সদর থানার তৎকালীন এস আই নিরব হোসেন বশিরসহ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এদের মধ্যে বশির বাদে অন্যদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রঞ্জিত বাদে রাজু, আরিফ ও মঞ্জুর হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

এরপরই মামলাটি মোড় নেয় অন্যদিকে। মামলার বাদী নিহত রেজাউলের স্ত্রী আনজিরা খাতুন ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে ২০১২ সালের ৩০ জুন আপস মীমাংসা করে।

যা দেখিয়ে প্রধান পরিকল্পনাকারী বশির জামিন পায়। জামিনে মুক্ত হয়ে প্রধান হত্যাকার রঞ্জিতও ঢাকায় পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর মামলাটি ঝিমিয়ে পড়লে নিহতের ভাই আদিল উদ্দিন আদালতে পুনরায় পিটিশন দিয়ে চার্জশিটে না রাজি করলে মামলার তদন্তভার যায় সিআইডি পুলিশের হাতে। সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক হুমায়ুন কবীর ২০১৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ওই ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে। ঘটনার ১১ বছর হলেও মামলাটির রায় এখনও হয়নি। বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ঘুরতে ভাই আদিল উদ্দিন ও তার পরিবার।

নিহতের ভাই আদিল উদ্দিন বলেন, বাদী লিখিত এজাহারে নাম উল্লেখ করে মামলা করে। পরবর্তীতে সাক্ষ্য প্রদানের সময় আদালতে তাদের নাম এড়িয়ে গেছে। আমার ভাইয়ের বউ টাকা নিয়ে হত্যা মামলাটির অপমৃত্যু ঘটিয়েছে বলে নোটারি পাবলিকে দেওয়া তার শপথ নামায় প্রমাণিত হয়েছে। যে কারণে আমরা বিচার পাচ্ছি না। থানায় একাধিকবার জীবননাশের আশঙ্কা করে জিডি ও মামলা দায়েরের পরও বসির ও তার সহযোগীদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি আমার ভাই ভ্যানচালক রেজাউল। তাদের হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করেই ক্ষ্যান্ত হয়নি। এখন বাদিকে টাকার বিনিময়ে ম্যানেজ করে আলোচিত রেজাউল হত্যা মামলাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমি আমার ভাই হত্যার বিচার চাই। আমি আদালতের মাধ্যমে বাদীর পরিবর্তন চায়। আমার ভাইয়ের বউ টাকা নিয়ে মামলা চালাচ্ছে না। আমি তার স্থানে বাদি হতে চায়।

এ ব্যাপারে মামলার বাদী আনজিরা খাতুনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি এ ব্যাপারে কিছু জানি না। আমি কোন আপস করিনি। আসামিদের সঙ্গে কথাবার্তা চলছে।

বিচারাধীন এ মামলার নিয়োজিত পি পি ইসমাইল হোসেন বলেন,  এখনও ডাক্তার, ম্যাজিস্ট্রেট ও কেসের আইও এই তিন জনের সাক্ষী বাকি আছে। সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে রায় হবে। দেরিতে হলেও আইনি জটিলতা কাটিয়ে এ মামলার রায়ে প্রমাণিত হত্যাকারীর জেল হবে বলে রাষ্ট্রপক্ষ মনে করেন।

জেবি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |