কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলায় প্রেমঘটিত বিরোধে যুবক সাবু মিয়া (২০)’কে হত্যার দায়ে দুই আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অভিযোগ ছিল দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. বাপ্পি প্রামাণিক ও আলামিন সরদার শ্বাসরোধ করে ওই যুবককে হত্যা করেন।
যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে দুজনকেই আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (৩০ মে) দুপুরে কুষ্টিয়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ এক আদালতের বিচারক মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম এ রায় দেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন- কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চাঁপাইগাছি গ্রামের আজিম প্রামাণিকের ছেলে মো. বাপ্পি প্রামাণিক ও একই ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর গ্রামের গোলাপ সরদারের ছেলে আলামিন সরদার।
তাদেরকে দণ্ডবিধি ১৯৬০ এর ৩০২ ধারা ও ৩৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সঙ্গে সাজা পরোয়ানা এবং জরিমানা আদায়ের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৮৬ (১) (ক) ধারায় পরোয়ানা ইস্যু করা হয় এবং পূর্বের হাজতবাস থেকে বর্তমান সাজার মেয়াদ বাদ দেওয়ার আদেশ দেন আদালত।
আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দ্বী আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, রায় ঘোষণার সময় কারাদণ্ড প্রাপ্ত দুই আসামি মো. বাপ্পি প্রামাণিক ও আলামিন সরদার আদালতে উপস্থিত ছিলেন। রায় ঘোষণার পর তাদেরকে কুষ্টিয়া জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
মামলার বিবরণ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর বিকেল ৫টার দিকে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের মো. স্বপন মণ্ডলের বড় ছেলে সাবু মিয়া জগন্নাথপুর এলাকার নিজ বাড়ি থেকে চাঁপাইগাছি বাজারের উদ্দেশ্যে তার ব্যবহৃত বাইসাইকেল ও মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে বের হন। এরপর সাবু রাতে বাড়ি ফিরে না আসায় সম্ভাব্য স্থানে খোঁজখবর নিয়ে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। পরের দিন ১৩ সেপ্টেম্বর সকালে কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার জগন্নাথপুর ইউনিয়নের চাঁপাইগাছি এলাকার কাদের বিশ্বাসের কলা বাগানে রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকার খবর শুনে নিহত সাবুর বাবা মো. স্বপন মণ্ডল, সাবুর স্ত্রী ও মেয়ে মোছা. শাপলা খাতুন এবং প্রতিবেশীরা গিয়ে সাবুর মরদেহ শনাক্ত করে। পরে পুলিশ এসে মরদেহ উদ্ধার করে। সাবুকে মারধরের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। প্রেমঘটিত বিরোধকে কেন্দ্র করে সাবু মিয়াকে নির্মমভাবে নির্যাতন করে শ্বাসরোধে হত্যা করেন আসামিরা।
এ ঘটনায় নিহত সাবু মিয়ার বাবা মো. স্বপন মণ্ডল বাদী হয়ে কুমারখালী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
দীর্ঘ তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা আসামি মো. বাপ্পি প্রামাণিক ও আলামিন সরদারের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
১৮ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণ শেষে ৩০ মে রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন আদালত। অপরাধ প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালতে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির উপস্থিতিতে এই রায় ঘোষণা করা হয়।