সম্পত্তি নিয়ে সালিশি সিদ্ধান্ত না মেনে ইউপি চেয়ারম্যানকে অশ্লীল (মুদ্রণ অযোগ্য) ভাষায় গালাগাল করার জেরে লেবু হোসেন (৪৫) নামে এক ভ্যানচালককে তিন ঘণ্টা ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) দুপুরে জয়পুরহাট সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদে এ ঘটনা ঘটে।
জানা যায়, চেয়ারম্যান সুমন তার কক্ষে ভ্যানচালককে এনে গালে চড়-থাপ্পড় মারেন। এ সময় ভ্যানচালকের ভাতিজা আবু মুসা চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে থেকে তার চাচাকে মারধর করার এ দৃশ্য মুঠোফোনে ধারণ করছিলেন। ইউপি চেয়ারম্যান তার কাছ থেকে মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলেট করে তাকে জুতাপেটা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
চক ভারুনিয়া গ্রামের মনসুর আলী, পার্শ্ববর্তী বিল্লা গ্রামের মামুনুর রশিদ, পেঁচুলিয়া গ্রামের আনিসুর রহমানসহ ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেক এলাকাবাসী জানান, প্রায় ৬ মাস আগে থেকে চক ভারুনিয়া গ্রামে সম্পত্তি নিয়ে আব্দুল মুমিন (৬০) ও লেবু হোসেনের (৪৫) বিরোধ চলছিল। মুমিন তার সম্পত্তির কিছু অংশ লেবুর কাছে বিক্রি করে। পরে মেয়ের বিয়ের জন্য অবশিষ্ট জমি একই গ্রামের শাহ আলমের (৫০) কাছে বিক্রি করতে গেলে লেবু বাধা দেন। তখন থেকে বিরোধের সূত্রপাত হলে উভয় পক্ষ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে মীমাংসার জন্য আবেদন করেন।
সেসময় দলিল, খারিজ ও খাজনাসহ প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র উপস্থাপন করতে উভয়পক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র না থাকলেও সেই সিদ্ধান্ত না মেনে লেবু জোর করে মুমিনের অংশের জমি দখলের চেষ্টা করেন। মুমিনের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে লেবুকে ইউনিয়ন কার্যালয়ে ডেকে আনা হলে তিনি চেয়ারম্যানকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করেন। এ সময় চেয়ারম্যানের কয়েকজন কর্মী-সমর্থক লেবু হোসেনকে জুতা পেটা করে ইউনিয়ন কার্যালয়ের একটি কক্ষে আটকিয়ে রাখেন।
দোগাছি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সামছুল আলম সুমন জানান, এমন খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে এসে লেবুকে মুক্ত করে দেন। এরপর লেবুর স্ত্রী সেখানে উপস্থিত হয়ে জুতা হাতে নিয়ে আমাকে মারতে উদ্যত হলে এলাকাবাসীরা তাকে আটকান।
অন্যদিকে লেবু অভিযোগ করেন, চেয়ারম্যান গ্রাম পুলিশ পাঠিয়ে তাকে বাড়ি থেকে ধরে এনে তিন ঘণ্টা ইউপি কার্যালয়ের একটি কক্ষে তালা দিয়ে আটকে রেখেছিলেন। পরে চেয়ারম্যান এসে চড়-থাপ্পড় মারেন।
ইউপি চেয়ারম্যান সামছুল আলম সুমন আটকে রাখার কথা স্বীকার করলেও মারধরের কথা অস্বীকার করে বলেন, কোনো কাগজপত্র না থাকলেও অন্যের সম্পত্তি দখলকে কেন্দ্র করে মারামারি, খুন করার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে পারে বলে লেবু ও তার ভাতিজাকে শাসন করা হয়েছে। গত নির্বাচনে দলের মনোনয়ন না পেয়ে আমার প্রতিপক্ষ বিভিন্ন জনকে আমার বিরুদ্ধে উসকে দিয়ে আমার ভাবমূর্তি নষ্ট করার অপচেষ্টা করছে। লেবুর এমন অভিযোগ এরই অংশ মাত্র।
জয়পুরহাট সদর থানার পরির্দশক (তদন্ত) গোলাম সারোয়ার বলেন, জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ থেকে কল করে বিষয়টি জানানো হয়েছিল। পুলিশ যাওয়ার আগেই তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ করেননি।