নরসিংদীর শিবপুরে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে থানায় যাওয়া ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় শিক্ষক নার্গিস সুলতানা কণিকার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে উপপরিদর্শক আফজাল মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মৃত্যুর আগে থানায় ওই ছাত্রীর বক্তব্য মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।
নিহত প্রভা আক্তার (১৩) শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের জয়মঙ্গল গ্রামের প্রবাসী ভুট্টো মিয়ার মেয়ে। তিনি শিবপুর সরকারি পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রভার সহপাঠীরা জানান, বৃহস্পতিবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রভা বিদ্যালয়ের নির্ধারিত পোশাকের সঙ্গে ট্রাউজার পরে আসেন। বিষয়টি শিক্ষক নার্গিস সুলতানা ওরফে কণিকার নজরে আসে। তিনি প্রভাকে শ্রেণিকক্ষে দাঁড় করিয়ে রাখেন এবং বেত দিয়ে কয়েকটি আঘাত করেন। ওই সময়ই শ্রেণিকক্ষ থেকে বেরিয়ে যায় প্রভা। পরে ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে শিবপুর থানায় চলে যায়।
থানায় গিয়ে প্রভা জানায়, ‘ক্লাসে কণিকা ম্যাডাম তাকে মেরেছে, তাই ইঁদুর মারার ওষুধ কিনে খেয়েছেন তিনি।’ এরপরই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে থানা থেকে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হলে শিক্ষকরা এসে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
কিশোরীর স্বজনরা জানান, ছোটবেলা থেকেই প্রভা কারও কথা শুনতে চাইতো না। পাঁচ মাস আগেও মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে একবার ইঁদুর মারার বিষ খেয়ে ছিলেন। সেবার বেঁচে যাওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে প্রভা। কারও সঙ্গে ঝগড়া লাগলে প্রভা ব্লেড দিয়ে নিজের হাত কাটত। পরিবারে একমাত্র বাবাকে ভয় পেলেও সেও ৬ মাস ধরে প্রবাসে।
নিহত কিশোরীর মা জানান, আমরা এই ঘটনায় কোন আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাই না। শুধু শুধু কারেও বিরুদ্ধে দোষ দিয়ে লাভ নেই। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধেও আমাদের কোনো অভিযোগ নেই।
এদিকে শিক্ষক নার্গিস সুলতানার বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। তার মুঠোফোনও বন্ধ। প্রতিবেশীরা জানান, গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নূর উদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
শিবপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মিয়া বলেন, ওই কিশোরীর ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। ওই ছাত্রী মৃত্যুর আগে থানায় এসে ঘটনার যে বর্ণনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী আমরা একটা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে রেখেছিলাম। পরে ছাত্রীর বক্তব্য এজাহারে উল্লেখ করে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা হয়েছে। ওই শিক্ষককে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।