ঢাকাবৃহস্পতিবার, ০১ মে ২০২৫, ১৮ বৈশাখ ১৪৩২

গীতা রাণীর স্বামীকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা তুলছে একটি চক্র 

গাইবান্ধা প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

সোমবার, ০৫ জুন ২০২৩ , ১১:০৬ পিএম


loading/img
ছবি : আরটিভি

শারীরিক প্রতিবন্ধী গীতা রাণী এবং তার স্বামী গৌতম চন্দ্র প্রামাণিক জীবিত আছেন। তবে, জেলা সমাজসেবা অফিসের তালিকায় গৌতম চন্দ্র মৃত। তাকে মৃত দেখিয়ে একটি চক্র তিন বছর ধরে গীতা রাণী প্রামাণিকের নামে বিধবা ভাতা তুলে আত্মসাৎ করছে একটি চক্র।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, শারীরিক প্রতিবন্ধী গীতা রাণীর এক আবেদনের প্রেক্ষিতে গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে তার নামে ২০২১ সালে মার্চ মাসের ২১ তারিখে কার্ড ইস্যু করা হয়। যার নম্বর ১৯৭৮৬৮৯৪৩৪১৪০০-০২। দীর্ঘদিন অপেক্ষার পর চলতি বছর অন্যান্য প্রতিবন্ধীদের মতো এ বছর গীতা রাণীর নামেও প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে সরকারিভাবে অর্থ ছাড় করে মন্ত্রণালয়। অনেকেই ভাতার টাকা উত্তোলনও করেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় নাম থাকলেও মোবাইলের বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা পাননি গীতা রাণী। সরকারের দেওয়া প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা মোবাইল অ্যাকাউন্টে না আসায় খোলাহাটী ইউনিয়ন তথ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা ও জেলা সমাজসেবা অফিসে যোগাযোগ করেন গীতা রাণী ও তার স্বামী। সেখানে গিয়ে গীতা রাণী জানতে পারেন তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে তিন বছর আগে থেকেই বিধবা ভাতা প্রদান করে আসছে সমাজসেবা অধিদপ্তর। ওই টাকা অন্য একটি মোবাইল অ্যাকাউন্টে জমা হচ্ছে। যে কারণে প্রতিবন্ধীর ভাতার টাকা তার মোবাইলে জমা হয়নি। তখন জীবিত স্বামীর মৃত্যুর কথা শুনে হতবাক হয়ে যান গীতা রাণী। 

সরকারি নিয়ম অনুযায়ী যেকোনো ব্যক্তি (প্রতিবন্ধী, বিধবা, গর্ভবতী, বয়স্ক ইত্যাদি) সরকারি একটি প্রকল্পের অধীনে ভাতা পাবেন। একাধিক ভাতা ইস্যু হলেও তিনি একটির বেশি ভাতা পাবেন না, যেহেতু গীতা রাণীর স্বামী জীবিত। তারপরও তাকে মৃত দেখিয়ে বিধবা ভাতা ইস্যু করা হয়েছে। তাই গীতা রাণী প্রতিবন্ধী হয়েও ভাতা পাচ্ছেন না। 

বিজ্ঞাপন

স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে গীতা রাণী বলেন, এই যে দেখেন আমার স্বামী জীবিত। আমার হাতে শাখা, সিঁথিতে সিঁদুর। আমি একজন প্রতিবন্ধী মানুষ, আমার স্বামী দিনমজুর, আমরা গরিব। আমার স্বামী অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। আমার প্রতিবন্ধী ভাতা চালু করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার। কিন্তু আমি প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা এখনও পাই নাই। আমার স্বামীকে যারা মৃত দেখিয়ে আমার নামে তিন বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা তুলে খাচ্ছেন আমি তাদের শাস্তি চাই। সেই সঙ্গে আমার প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা যাতে পাই সে দাবি জানাই।

গীতা রাণীর স্বামী গৌতম চন্দ্র প্রামাণিক বলেন, আমাকে মৃত দেখিয়ে আমার স্ত্রীর নামে বিধবা ভাতা করল কে? আমি তার বিচার চাই। 

খোলাহাটী ইউনিয়ন পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইলিশ চন্দ্র সরকার বলেন, একজন গরিব প্রতিবন্ধী মহিলার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে যারা তিন বছর ধরে বিধবা ভাতা তুলেছেন তাদের শাস্তি হওয়া দরকার।

বিজ্ঞাপন

গাইবান্ধা সদর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন শাহ্ বলেন, বিষয়টি জানার পর গীতা রাণীর নামে বিধবা ভাতা বাতিল করে সেখানে অন্য একজন বিধবাকে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া গীতা রাণীর নামে প্রতিবন্ধী ভাতার টাকা ছাড় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তিন বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা যিনি উত্তোলন করছেন তাকে শনাক্ত করা হয়েছে।

জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, বিষয়টি জানার পর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন এখনও জমা হয়নি। প্রতিবেদনে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া গত তিন বছর ধরে বিধবা ভাতার টাকা যার অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে খুব শিগগিরই সেই টাকা উদ্ধার করে সরকারি কোষাগারে জমা করা হবে।

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |