ঢাকাবৃহস্পতিবার, ২৬ জুন ২০২৫, ১২ আষাঢ় ১৪৩২

‘আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে’

স্টাফ রিপোর্টার (চট্টগ্রাম), আরটিভি নিউজ

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪ , ০৫:৪৩ পিএম


loading/img
ছবি : আরটিভি

চট্টগ্রামের বোয়ালখালীতে হেফজখানার শিক্ষার্থী মোহাম্মদ আয়াতুল ইসলামকে পিটিয়ে একটি চোখ নষ্ট করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শিক্ষিকা মোছাম্মৎ শাহিন আক্তারের বিরুদ্ধে। ওই শিক্ষার্থীকে পেটানোর পর বিষয়টি গোপন রেখে নিজেদের মতো করে চিকিৎসা করানোর কারণে চোখ নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

বিজ্ঞাপন

বুধবার (২৬ জুন) চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার পোপাদিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে আয়াতুলদের বাড়ি যেয়ে দেখা যায়। বাড়ি মাথায় তুলে রাখা ছেলেটা এখন নিস্তেজ, চোখের যন্ত্রণায় বিছানায় শুয়ে কাতরাছে।

মায়ের কোলে বসে মোহাম্মদ আয়াতুল ইসলাম বলছেন, ‘মাদরাসায় বেত দিয়ে ম্যাডাম আমাকে মেরেছে। বেতটা বাঁ চোখে লেগেছে। এরপর অনেক ব্যথা শুরু হয়। এখন চোখে দেখছি না। আমি পড়তে চাই, আমার চোখ লাগবে। মা, আমি কি আর চোখে দেখব না?’

বিজ্ঞাপন

শিশু ছেলের এ প্রশ্ন শুনে মায়ের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছিল বেদনার জল। কোনো উত্তর দিতে পারছিলেন না মা স্বপ্না আক্তার। ছেলের এমন অবস্থা দেখে মঙ্গলবার বোয়ালখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দ্বারস্থ হন। ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব তার ছেলের সুচিকিৎসা ও এ ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। 

জানা গেছে, বাগে সিরিকোট তাহফিজুল কুরআন আইডিয়াল মাদরাসায় ২৬ মে হেফজ বিভাগের ছাত্র মো. আয়াতুল ইসলাম (৭) শিক্ষিকার বেতের আঘাতে বাম চোখের দৃষ্টি হারায়, যা গোপন রাখে অভিযুক্ত শিক্ষিকা।

ইউএনওর কাছে অভিযোগপত্রে স্বপ্না আক্তার উল্লেখ করেন, শিক্ষিকা মোছাম্মৎ শাহিন আক্তার আমার ছেলেকে কম পড়ার অজুহাতে বেধড়ক বেত্রাঘাত করে তার বাম চোখের দৃষ্টি নষ্ট করে ফেলেছে। চিকিৎসকরা জানিয়েছে, আমার ছেলের চোখের মণিতে ব্যাপক আঘাত হওয়ায় সে চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। এমতাবস্থায় আমি নিরুপায় হয়ে স্থানীয় চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ গণ্যমান্য ব্যক্তির স্মরণাপন্ন হয়েছি। গত ২৬ মে ওই শিক্ষিকা চোখে আঘাত করে, যা গোপন রাখে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

ইউএনও ইমরান হোসাইন সজীব বলেন, আমি হাসপাতালে গিয়েছি। পরিবারকে ছেলের চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছি। সেই সঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা জানিয়েছি।

বিজ্ঞাপন

আয়াতুল ইসলামের বাবা মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘গত ২৮ মে নাশতা নিয়ে আমারা ছেলেকে দেখতে যায়। তখন মাদরাসা থেকে বলা হয়, আয়াতুলের চোখে রক্ত উঠে লাল হয়ে গেছে। তাই দেখা করা যাবে না। এরপর আমরা চলে আসি। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে হঠাৎ বাড়িতে এসে হাজির হয় ছেলে। তারপর ঘটনা জানাজানি হয়।’

তিনি বলেন, ‘ভোরে মাদরাসার অধ্যক্ষ মো. মহিউদ্দিন মাহমুদ বাসায় হাজির হন। ছেলের জ্বর উঠেছে, এ কথা বলে দ্রুত বের হয়ে যান। এরপর ছেলে জানায়, পড়া না পারার কারণে তাকে মারধর করা হয়েছে। চোখে ড্রপ দেওয়া হয়। এমনকি মারধরের বিষয়টি কাউকে না জানানোর জন্য ভয়ও দেখানো হয়েছে।’

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |