ব্যবসায়ী সুমন হত্যার প্রতিবাদে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ
নওগাঁর পত্নীতলায় ব্যবসায়ী সুমন হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবিতে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৯ নভেম্বর) দুপুরে নজিপুর বাসস্ট্যান্ড গোলচত্ত্বরে ছাত্র-জনতার ব্যানারে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন।
এ সময় অন্যান্যদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আলীমুজ্জামান মিলন, পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পত্নীতলার মারুফ মোস্তফা প্রমুখ।
সমাবেশে সুমন হত্যার খুনিদের ফাঁসির দাবি জানানো হয়। হত্যার সঙ্গে জড়িত খুনিদের দ্রুত আটক করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানানো হয়। বিকেলে নজিপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বণিক কমিটির উদ্যোগে একই স্থানে সুমন হত্যার বিচারের দাবিতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিক্ষোভ করেন।
সুমন নজিপুর মসজিদ মার্কেটের সুমন কম্পিউটার অ্যান্ড ফটোস্ট্যাট দোকানের স্বত্বাধিকারী এবং মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের উত্তর বিলছাড়া (চকপাড়া) গ্রামের মৃত ময়েন উদ্দীনের ছেলে।
গত রোববার (১৭ নভেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার পথে সুমনকে খুন করা হয়েছে অভিযোগে সুমনের বোন মৌসুমী বাদী হয়ে বুলবুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৯ থেকে ১০ জনকে আসামি করে সোমবার (১৮ নভেম্বর) রাতে পত্নীতলা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, সুমন হোসেন ও বুলবুল ইসলামের মধ্যে টাকা পয়সা নিয়ে পূর্বথেকেই বিরোধ চলছিল। বুলবুলের কাছে সুমন সুদের ওপর ৭০ হাজার টাকা ধার করেন। ১ হাজার টাকায় প্রতিদিন ২০ টাকা হিসেবে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। ফাঁকা স্ট্যাম্প ও চেকের ভয় দেকে মোট ৭ লাখ টাকা আদায় করে বুলবুল ইসলাম। এরপরও সুমনের কাছে ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে মামলা হামলার ভয়ভীতি এবং প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন। সুমন মান সম্মানের ভয়ে তার চাহিদা মতো টাকা দিতে সম্মত হয়।
ঘটনার দিন বুলবুলকে টাকা দেওয়ার জন্য সুমন মহাদেবপুর থেকে ১০ লাখ টাকা নিয়ে সিএনজি করে নাদৌড় মোড়ে নামলে আগে থেকে সেখানে অবস্থান করা কিছু লোক সুমনকে অনুসরণ করা শুরু করে। সুমন বাঁচার তাগিদে পালিয়ে একটি জঙ্গলে লুকিয়ে তার ফেসবুক আইডিতে লাইভ করে ঘটনার বর্ণনা দেন। পরে তার চাচাতো ভাই রুবেলের মোবাইলের মেসেঞ্জারে ফোন দিয়ে তাকে নাদৌড় রাস্তার ওপর আসামিসহ ৯ থেকে ১০ জন টাকার ব্যাগ নেওয়ার জন্য খোঁজাখুঁজি করছেন বলে জানান।
তৎক্ষণাৎ রুবেলসহ কয়েকজন মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়ে দেখেন নাদৌড় সড়কের নাপিত পকরা থেকে ৩০০ গজ পূর্বদিকে রাস্তার পাশে কাঁঠাল গাছে সুমনকে মেরে দুর্বৃত্তরা ঝুঁলিয়ে রেখে গেছে। নিচে একটি চাকু পড়ে আছে। স্থানীয়রা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
সমাবেশে সুমনের বোন মৌসুমী বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মারুফ মোস্তফা বলেন, ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আসামি আটক না হলে ছাত্র-জনতা আবারও মাঠে নামবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
পত্নীতলা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মো. এনায়েতুর রহমান বলেন, এটি একটি আলোচিত ঘটনা। এটি নজিপুর বা পত্নীতলা নয়, সারাদেশে আলোচিত ঘটনা। এ ঘটনায় আপনাদের সঙ্গে আমরাও মর্মাহত। যে মারা গেছেন সুমন তার বোন থানায় একটি এজাহার দায়ের করেছেন, সেই এজাহারের প্রেক্ষিতে একটি নিয়মিত হত্যা মামলা রুজু করেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত আছে তাদের খুব দ্রুত আইনের আওতায় আনবো।
পত্নীতলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলীমুজ্জামান মিলন বলেন, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলাটি যেন জেলা প্রশাসনের মনিটরিং সেল থেকে যেন নিয়মিত মনিটর করা হয় সেই অনুরোধ করছি। আর একটা বিষয় এখানে যে সুদের কারবার যে কারণে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। সমবায়ের যতগুলো কোঅপারেটিভ সোসাইটি আছে সবগুলো দেখবো। তাদের কার্যক্রম সঠিক আছে কি না, আইনের ব্যত্যয় ঘটলে ব্যবস্থা নেবো। আমরাও সঠিক বিচার চাই।
আরটিভি/এমকে
মন্তব্য করুন