গরু চুরির অভিযোগ, মারধরের পর চুন মেশানো এসিড পানি খাওয়ানোয় যুবকের মৃত্যু
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় গরু চুরির অভিযোগে দিনভর মারধর করে ব্যাটারির এসিডের সঙ্গে চুন-বালু মেশানো পানি খাওয়ানোর পর গুরুতর অসুস্থ হয়ে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার কাকুর বাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার আরেক কিশোর বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিহত যুবকের নাম হেলাল মিয়া (৩৫)। তিনি উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ঘোষগ্রামের মৃত শফিকুর রহমানের ছেলে। গুরুতর আহত কিশোর একই উপজেলার চারগ্রাম চাতল হাওরের বাসিন্দা।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার দুপুরে গরু চুরির অভিযোগে গোয়াইনঘাটের মধ্য জাফলং ইউনিয়নের পাতাতিখেল বাগান এলাকা থেকে এক কিশোর (১৬) ও হেলাল উদ্দিনকে আটক করেন স্থানীয়রা। পরে তাদের ধরে রাধানগর বাজারে নিয়ে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়। খবর পেয়ে মধ্য জাফলং ইউনিয়নের দুজন ইউপি সদস্য রাধানগর বাজারে যান। সেখানে ব্যাপক মারধরের পর একজনের মায়ের জিম্মায় দুইজনকে ছেড়ে দেয়া হয়।
তবে তাদের নিয়ে যাওয়ার সময় আবার আটকে এসিডের পানির সঙ্গে আধা কেজি চুন ও বালু মেশানো হয়। সেই এসিড পানি হেলালকে জোর করে খাওয়ানো হয়। বুধবার সকাল ৬টার দিকে হেলাল বমি করে; তখন তার নাক দিয়ে সাদা পানি বের হয়েছিল। বারবার বাথরুম হচ্ছিল। পরিবারের লোকজন জানিয়েছে, তখন তার পায়খানার সঙ্গে রক্তও গেছে। বুধবার সকালে হেলাল উদ্দিনের পরিবারের লোকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় ওই কিশোরের বাড়ি নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পথেই তার মৃত্যু হয়। ইতোমধ্যে গরু চুরির অভিযোগে দুইজনকে নির্যাতনের চার মিনিট সাত সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, এক যুবক ও এক কিশোরের হাত পেছনে বাঁধা। তাদের ঘিরে রেখেছে একদল মানুষ। হেলালকে মাটিতে ফেলে তার পিঠের ওপর বসে এক ব্যক্তি তার দুই পা উঁচু করে ধরে রেখেছেন, আরেকজন পায়ের পাতায় বেধরক পেটাচ্ছেন। পরে ওই ব্যক্তি হেলালের ঘাড়ের ওপর বসলে আরেকজন পায়ের পাতা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে বাঁশ দিয়ে পেটাতে থাকেন।
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, আহত কিশোর হাঁটতেও পারছিল না। তবুও তাকে বাধ্য করা হয় লাঠি দিয়ে হেলালকে পেটাতে। এ সময় ভিডিওতে একটি লাল গরুও দেখা যায় এবং উপস্থিত জনতা গরু চুরির বিষয় নিয়ে আলাপ করছিলেন।
উপজেলার ডৌবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য হাফিজ উল্লাহ বলেন, মঙ্গলবার সকালে দুইজন চোর আটকের ঘটনা শুনেছি। পরে রাতে তাদের স্বজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেনেছিলাম। শুনেছি তাদের খুব মারধর করা হয়েছে, চুন-বালু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। তাদের উদ্ধারে পুলিশ দুইবার গেলেও স্থানীয় বাসিন্দারা হস্তান্তর করেননি।
ডৌবাড়ী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওর্য়াডের সদস্য নিজাম উদ্দিন বলেন, গতকাল (মঙ্গলবার) ১০টার দিকে আমার কাছে পুলিশের এসআই ফোন দিয়ে জানিয়েছেন, দুজন গরু চোর ধরা হয়েছে। একজন চারগ্রামের, আরেকজন ঘোষগ্রামের। পরে সাবেক মেম্বার বাবুলও আমাকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে বলেন। এর মধ্যে আমি খবর পেয়েছি, তাদের মারধর করে চুন, বালু ও গাড়ির ব্যাটারির এসিড পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়েছে। আমি এসব জানার পর আর ঘটনাস্থলে যাইনি। তাদের বলেছি, মানুষ মেরে ফেলেছ, এখন আমি এসে আর কী করব? ওসমানী মেডিকেলে ভর্তি কিশোরের অবস্থাও ভালো না, সেও মারা যাবে মনে হয় বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
ঘটনাস্থলে পুলিশ যাওয়ার বিষয়ে গোয়াইনঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সরকার তোফায়েল আহমেদ বলেন, মঙ্গলবার দিনের কোনো এক সময় স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের গরু চুরির অভিযোগে আটক করেন। আমাদের বিট পুলিশের কর্মকর্তা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা জানান যে বিষয়টি সমাধান হয়ে গেছে এবং স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তাই আর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়নি।
তবে ভিডিও দেখে ইতোমধ্যে আমরা দোষীদের শনাক্ত করে আটক করতে অভিযান শুরু করেছি। আশা করছি, দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় গুরুতর আহত উপজেলার চারগ্রাম চাতল হাওরের এক কিশোরকে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
আরটিভি/কেএইচ
মন্তব্য করুন