• ঢাকা শনিবার, ২৫ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১
logo

হাসপাতাল যেন নিজেই রোগী, চিকিৎসক ও জনবল সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি, আরটিভি নিউজ

  ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৫:৩৭
ছবি : আরটিভি

খুলনার পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে আবাসিক মেডিকেল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), অর্থপেডিক, পেডিয়াট্রিক্স, ইএনটি, ওগো, সাভারি, কার্ডিওলজি, অফযালমোলজি, স্ক্রিন অ্যান্ড ভিডি, এ্যানেসথেটিষ্ট, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইমার্জেন্সি মেডিকেল অফিসার, মেডিকেল অফিসার, সহকারী সার্জনসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে ২৪ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও আছে মাত্র ৭ জন। বাকি ১৭ জন চিকিৎসকের পদ শূন্য রয়েছে। ৭ জন্য চিকিৎসকের মধ্যে অন্য হাসপাতালে সংযুক্তিতে ৩ জন কর্মরত। ৪ জন ডাক্তার দিচ্ছেন প্রায় ৩ লাখ মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের জনদুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। দক্ষিণ অঞ্চলের মধ্যে ঐতিহ্যবাহী ও ব্যস্ততম হাসপাতাল পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি জনবল সংকটে নিজেই এখন রোগীতে পরিণত হয়েছে। ফলে হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা ডাক্তার দেখাতে না পেরে বাধ্য হয়ে শহর বা ক্লিনিকমুখো হচ্ছে। প্রতিদিন আউটডোরে ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন। ১০০ জন রোগী ভর্তি থাকে।

উপজেলায় ৩ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র ভরসা এই হাসপাতাল। এ ছাড়াও আশপাশের জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি ও তালা, খুলনার দাকোপ উপজেলা থেকেও এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে আসেন অনেক রোগী। এত বিপুলসংখ্যক জনগণের চিকিৎসাসেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের।

এ ছাড়া, স্বাস্থ্য সহকারীর বেশিরভাগ পদ দীর্ঘদিন শূন্যসহ আল্ট্রাসনোলজিস্ট, মালী না থাকায় বাগানের পরিচর্যা করতে পারছে না। অত্র কমপ্লেক্সের যেখানে মোট কর্মকর্তা কর্মচারীর পদ রয়েছে ২৩৭, সেখানে রয়েছে, ১৪০ জন, পদ শূন্য রয়েছে ৯৭ জন। দীর্ঘদিন শূন্যপদ রয়েছে ১৫টি। এ ছাড়াও সার্জারি যন্ত্রপাতির অপ্রতুলতা, অপরিচ্ছন্নতা, ওয়ার্ডে পানি ও বিদ্যুতের সমস্যা, ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত বাথরুম, খাবারে অনিয়মাসহ নান্য সমস্যায় জর্জরিত হাসপাতালটি। তেলের অভাবে ঠিকমতো চলে না জেনারেটর।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন, একটি পৌরসভার অন্তত চার লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবার একমাত্র সরকারি হাসপাতাল এটি। ২০১৫ সালের ৫ মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও সেবার মান বাড়েনি। দেওয়া হয়নি চাহিদামত জনবল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তায় পদে একজন রয়েছে। জুনিয়র কনসালট্রয়ন্টের পদ ৪টি, রয়েছে ৩টি, আবাসিক মেডিকেল কর্মকর্তার পদ ১টি, যাহা শূন্য, মেডিকেল কর্মকর্তার পদ ৩টি, রয়েছে ১টি, নার্সিং সুপার জইজারের পদ ১টি, যা শূন্য, সিনিয়র স্টাফ নার্সের পদ ৩২টি, রয়েছে ২৩টি। মিডওয়াইফ-এর পদ ৪টি, রয়েছে ৩টি, মেডিকেল টেকনোলজিস্টের পদ ৭টি, রয়েছে ৩টি, ফার্মাসিস্টের পদ রয়েছে ২টি, রয়েছে ২টি, স্যালমো পদ ২টি, রয়েছে ২টি, স্বাস্থ্য পরিদর্শকের পদ ৪টি, রয়েছে ১টি, সহস্বাস্থ্য, পরিদর্শক পদ ১৩টি, রয়েছে ৮টি, কার্ডিওগ্রামার পদ ১টি, রয়েছে ১টি, ড্রাইভারের পদ ১টি, রয়েছে ১টি, স্বাস্থ্য সহকারীর পদ সংখ্যা ৬৫টি, রয়েছে ৪৫টি, হারবাল অ্যাসিসট্যান্ট এর পদের সংখ্যা একটি, রয়েছে ১টি, অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক পদের সংখ্যা ৪টি, রয়েছে ২টি, টিএলসি এ এর পদের সংখ্যা ১টি, রয়েছে ১টি, কুক/মশালাটির পদের সংখ্যা ২টি, রয়েছে ১টি, অফিস সহায়ক পদের সংখ্যা ৭টি, রয়েছে ১টি। এ ছাড়া কম্পিউটার অপারেটর ১টি, প্রধান সহকারীর পদ একটি, হেলথ এডুকেটরের পদ ১টি, ক্যাশিয়ারের পদ ২টি, প্রধান সহ কাম কম্পিউটার অপারেটর পদ ১টি, পরিসংখ্যানবিদ ১টি, স্টোর কিপারের পথ ২টি, সহ, নার্সের পদ ১টি, কম্পাউন্ডার পদ ১টি, নিরাপত্তা প্রহরী পদ ১টি, জুনিয়র মোনিকের পদের সংখ্যা ১টি, মালীর পদের সংখ্যা ১, আয়া পদের সংখ্যা ২, পরিচ্ছন্নতা কর্মীর পদ ৪ শূন্য আছে ৪ জনের পদ।

ফরিদা বেগম জানান, জরুরি বিভাগ থেকে ডাক্তার কয়েকটি টেস্ট দিয়েছেন। সেগুলো বাইরে থেকে করিয়ে আনতে বলেন। আমরা গরিব মানুষ। বেশি টাকা দিয়ে বাইরে থেকে টেস্ট করানোর অবস্থা নেই। হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ও ডাক্তার থাকলে আমাদের খুবই উপকার হতো।

গদাইপুর গ্রামের রাশিদা বেগম বলেন, অসুস্থ মাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য সকাল ৮টার দিকে হাসপাতালে এসেছি। সাড়ে ১০টা বাজল। এখনো ডাক্তাররা আমার মাকে দেখেনি। আউট ডোরে টিকিট নিয়ে বসে আছি। সেবা নিতে এসে সেবা পাচ্ছি না।

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. মাহবুবর রহমান বলেন, ৩০ সজ্জার হাসপাতালটি ৫০ সজ্জায় উন্নীত করা হলেও প্রয়োজনীয় জনবল বাড়ানো হয়নি। হাসপাতালের ডাক্তার, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনদন সংকট রয়েছে। অপ্রতুল সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি। জরুরি ভিত্তিতে শূন্যপদের জনবল পূরণ, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জামাদির ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব হবে না। হাসপাতালে যে পরিমাণ রোগীর চাপ তাতে করে ৫০-১০০ সজ্জায় উন্নীত করা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আশা করি, কর্তৃপক্ষ বিবেচনায় নেবেন।

আরটিভি/এএএ

মন্তব্য করুন

Bangal
rtv Drama
Radhuni
  • দেশজুড়ে এর পাঠক প্রিয়
আরও পড়ুন
তারেক রহমানের পক্ষে পাইকগাছায় শীতবস্ত্র বিতরণ 
পাইকগাছায় পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ইটভাটা
পাইকগাছায় সড়কে বেপরোয়া খড়বোঝাই নছিমন, ঘটছে দুর্ঘটনা
পাইকগাছায় ১৪ মামলার আসামি গ্রেপ্তার