ঢাকাসোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ৩ চৈত্র ১৪৩১

শাহরাস্তিতে মাদরাসার সাবেক সভাপতি ও অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

আরটিভি নিউজ

মঙ্গলবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ , ১০:৩১ এএম


loading/img

চাঁদপুরের শাহরাস্তির রাজাপুরা আল আমিন সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও অধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নাদিমুর রশিদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও মাদরাসার ভূমি দাতা পরিবারের এক সদস্য মো. মাহবুব আলম এলাকাবাসীর পক্ষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।

বিজ্ঞাপন

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, মাদরাসার বর্তমান এডহক কমিটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাদিমুর রশিদ একক আধিপত্য বিস্তারের মাধ্যমে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই মাদরাসার কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। মাদরাসাকে ভূমি দান না করেই বিগত ২০১৫ সালে অসদুপায়ে অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠাতা বনে যান নাদিমুর রশিদ। সেই থেকে অদ্যাবধি অর্থের জোরে বিগত সরকারের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকৃত ভূমিদাতাদের বাদ দিয়ে নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। বিগত সময়ে মাদরাসার অধ্যক্ষদের সঙ্গে যোগসাজসে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অনুদান ও সার্বিক বিষয়গুলো নিজেই কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তার একগুঁয়েমির কারণে মাদরাসার শিক্ষক-অভিভাবকদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার মানসহ স্থানীয় শিক্ষার্থীরা মাদরাসা বিমুখ হতে শুরু করেছে। এমন বাস্তবতায় ইতোপূর্বেও স্থানীয় বাসিন্দা ও অভিভাবক সদস্যরা অভিযোগ করেও কোনো লাভ হয়নি। 

সম্প্রতি এলাকাবাসীর পক্ষে ভূমি দাতা পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দা মো. মাহবুব আলম জানান, আমরা রাজাপুরা মাদরাসাটির ভূমি দাতা। আমার বাবা-দাদা ও স্থানীয় অনেক হিতৈষী ব্যক্তি মাদরাসাটি প্রতিষ্ঠাকালীন সময় হতে ভূমি দান করে গেছেন। দীর্ঘ সময় ধরে আমরা দাতা পরিবারের কেউ মাদরাসাটির উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত কোনো বিষয়ে জানতে কিংবা সম্পৃক্ত হতে পারিনি। নাদিমুর রশিদ বাবু একক ক্ষমতা বলে বিগত সরকারের আমলে নেতাদের অর্থের বিনিময়ে বারবার নিজেকে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাজিয়ে সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করছেন। আমরা দাতা সদস্য হয়েও বলতে পারব না তিনি কখন, কীভাবে মাদরাসার জন্য কিঞ্চিত পরিমাণ ভূমি দান করেছেন। 

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, নিয়ম বহিঃর্ভূতভাবে নাদিমুর রশিদ অর্থের বিনিময়ে সবসময় প্রতিষ্ঠাতা সদস্য দাবি করে সভাপতি হয়েছেন। এমনকি বর্তমান এডহক কমিটিতেও তিনি গোপনে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে অন্তর্ভূক্ত রয়েছেন। আমি এলাকাবাসীর পক্ষে তার বিগত দিনের অনিয়মের ফিরিস্তি উল্লেখ করে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দায়ের করি।

এ ছাড়া বর্তমান অধ্যক্ষ ছায়েদুল ইসলাম গত মার্চে দাখিল পরীক্ষায় নকল সরবরাহের দায়ে ২ বছর কারাদণ্ড ও এক হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন বলেও জানান মাহবুব আলম।

তিনি বলেন, ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসক অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (আইসিটি) তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে তদন্ত করে গিয়েছে। আমরা আধিপত্য বিস্তারকারী অবৈধ প্রতিষ্ঠাতা সদস্যের হাত থেকে প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা ও তার কাছ থেকে বিগত সময়ে প্রতিষ্ঠানের সকল আর্থিক হিসেব এবং দণ্ডপ্রাপ্ত এমন অধ্যক্ষকে অপসারণ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের আইনি সহযোগিতা কামনা করি।

বিজ্ঞাপন

d909e118-62dc-46d5-9a84-e055ffdf6bea

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মাদরাসার এক শিক্ষক জানান, মাদরাসাটিতে যেন সকল অনিয়মই নিয়মে পরিণত হয়েছে। শিক্ষকরা প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা, হুমকি এমনকি লাঞ্ছিত হতে হয়। কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। তাই প্রতিবাদ না করে দায়সারাভাবে চাকরি করাটা এখন নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় হয়ে গেছে।

বোস্তা গ্রামের অভিভাবক মো. ইউসুফ তালুকদার জানান, এটা শিক্ষা গ্রহণের স্থান নয়, ব্যবসায়িক জায়গা হয়ে গেছে। তারা টাকা ছাড়া কিছুই বুঝে না। আমি আমার মেয়ে ও ছেলের জন্য একাধিকবার মাদরাসায় গিয়েছি। আমার মেয়ের উপবৃত্তি দেওয়ার কথা বলে অধ্যক্ষ ও অফিস সহকারী দুইবার টাকা নিয়েছে অথচ উপবৃত্তি পাওয়া সম্ভব হয়নি। তাছাড়া পরীক্ষা ফি ও মাদরাসার বেতন তারা তাদের খেয়াল-খুশি মতো আদায় করে। কেউ কিছু করার বা বলার সাহস নেই।

অভিভাবক রুস্তম আলী জানান, আমার একটি মেয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছে। আরেকটি মেয়ে দুই বছর পড়ছে এই মাদরাসায়। উপবৃত্তির জন্য অনেকবার চেষ্টা করেছি। টাকা দেওয়ার পরও ব্যবস্থা করেনি। একাধিকবার জিজ্ঞেস করলে শিক্ষকরা খারাপ আচরণ করে। বর্তমানে এখানে পড়ালেখার মান খুবই খারাপ অবস্থা। চাইলেও আমি আমার মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারব না। কারণ, তারা কোন ছাত্র-ছাত্রীকে অন্যত্র যাওয়ার জন্য ছাড়পত্র দেয় না। 

মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, আমি ২০১৪ সালে ওই প্রতিষ্ঠান থেকে এসে বর্তমানে মুদাফফরগঞ্জ এ ইউ ফাজিল মাদরাসায় কর্মরত। বর্তমান অধ্যক্ষ ছায়েদুল ইসলাম এই প্রতিষ্ঠান থেকে রাজাপুরা মাদরাসায় যোগদান করেছেন। তবে, তিনি আমার প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো ছাড়পত্র নেননি। তার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোনো সমস্যা না থাকলেও তার বিল উত্তোলনের ক্ষেত্রে ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক। সেটি কিভাবে কার্যকর হচ্ছে বা বিল উত্তোলন করছেন তা মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ভালো বলতে পারবেন। 

মাদরাসার অধ্যক্ষ ছায়েদুল ইসলাম জানান, আমি ২০২৩ সালে যোগদান করেছি। যোগদানের পর থেকেই বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি কিছু লোকজন মাদরাসার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি জানি না নাদিমুর রশিদ কোনো ভূমি দান করেছেন কি না! তবে এটুকু জানি তিনি মাদরাসায় এককালিন অর্থ দিয়ে দাতা সদস্য হয়েছেন। এছাড়া তিনি মাদরাসার উন্নয়নে ব্যক্তিগতভাবে আরও অর্থের যোগান দিয়েছেন। তাছাড়া তিনি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী এককালীন অর্থ মাদরাসায় জমা দিয়ে প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন মর্মে রেজুলেশন রয়েছে। 

নকল সরবরাহের বিষয়ে তিনি বলেন, ভ্রাম্যমাণ আদালত আমাকে সাজা দিয়েছে সেটি সঠিক। তবে এটি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ছিল। পরবর্তীতে আইনের কাছে আমি সেটি প্রমাণ করে আদালত থেকে মুক্তি পেয়েছি। এ ছাড়া অধ্যক্ষকে মাদরাসার প্রয়োজনীয় অনেক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি সকল কিছুই সাবেক সভাপতি জানেন বলে অবহিত করেন।

মাদরাসা পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সভাপতি নাদিমুর রশিদ জানান, আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো সঠিক নয়। আমার বাবা মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্ত পর্যন্ত মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তার মৃত্যুর পর আমি বিধি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হয়েছি। এ ছাড়া আরও যে সকল অভিযোগ করা হয়েছে তার সঠিক কোনো প্রমানাধি উপস্থাপন করলে আমি স্বেচ্ছায় যেকোনো শাস্তি মেনে নেব। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হওয়ার পর মাদরাসার উন্নয়নে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসংখ্য কাজ করেছি। তারপরও কিছু অসাধু লোক আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছে।

আরটিভি/আরএ/এস

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |