যমুনা রেলসেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চলল ট্রেন

মঙ্গলবার, ১৮ মার্চ ২০২৫ , ০১:২৫ পিএম


যমুনা রেলসেতু দিয়ে ১২০ কিলোমিটার গতিতে চললো ট্রেন
ছবি: আরটিভি

১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচলের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয়েছে বহুল প্রতীক্ষিত দেশের বৃহত্তম যমুনা রেলসেতু।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে টাঙ্গাইল প্রান্তে পূর্বপার ইব্রাহিমাবাদ রেলস্টেশনে এ উদ্বোধন করা হয়।

এর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। একই সঙ্গে দু’অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য বদলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হলো।

বিজ্ঞাপন

এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ফাহিমুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত সাইদা শিনিচি ও জাইকার সাউথ এশিয়া ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল ইতো তেরুকি।

ট্রেন চলাচলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মাসুদুর রহমান।

তিনি বলেন, মঙ্গলবার আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে সেতুর আপ ও ডাউন দুটি লেন দিয়ে ব্রডগেজ ও মিটারগেজ সব ট্রেন পূর্ণমাত্রায় চলাচল শুরু হয়েছে। একসময় রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের শিল্পসমৃদ্ধ জেলাগুলো থেকে সিরাজগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করে অবহেলিত ও উন্নয়নবঞ্চিত করে রাখা প্রমত্তা যমুনা দু’অঞ্চলবাসীর কাছে এখন শুধু কল্পনা মাত্র।

বিজ্ঞাপন

জানা যায়, দেশের দীর্ঘতম এ রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের প্রথম নির্মাণ ব্যয় ৯ হাজার ৭৩৪ কোটি ৭ লাখ টাকা নির্ধারিত হলেও পরে তা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি ৯৬ লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ অর্থায়ন করেছে দেশি উৎস থেকে এবং ৭২ দশমিক ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। দেশের সর্ববৃহৎ এ রেলওয়ে সেতুর নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করেছে জাপানি কোম্পানি ওটিজি ও আইএইচআই জয়েন্টভেঞ্চার। জাপানি ৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিশাল এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে। জাপান, ভিয়েতনাম, নেপাল, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও বাংলাদেশের ৭ হাজারেরও বেশি কর্মীর ৪ বছরের পরিশ্রমে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়।

সেতুটিতে ৫০টি পিলার, প্রতি দুই পিলারের মাঝে একটি করে মোট ৪৯টি স্প্যান রয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার হলেও দুদিকে ৭ দশমিক ৬৬৭ কিলোমিটার রেলওয়ে অ্যাপ্রোচ এমব্যাংকমেন্ট এবং লুপ, সাইডিংসহ মোট ৩০ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন করা হয়েছে। 

চলতি বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী থেকে ঢাকাগামী আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেন পারাপারের মধ্য দিয়ে দেশের বৃহত্তম এই রেলসেতু দিয়ে বাণিজ্যিকভাবে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ওইদিন সাধারণ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ৫০ কিলোমিটার গতিতে ৬ মিনিটে ট্রেন সেতু পার হলেও আজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে উভয় লেনে ট্রেন চলছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে।

এ বিষয়ে যমুনা রেলসেতু প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী তানভীরুল ইসলাম বলেন, সমান্তরাল ডুয়েল গেজ ডাবল ট্র্যাকের এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের ওপর জাপানিদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রেললাইন বসানো হয়েছে। এর ফলে সেতুর ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতিতে ট্রেন চলাচল করতে পারছে।

উল্লেখ্য, প্রমত্তা যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু ১৯৯৮ সালে চালু হওয়ার পরই ঢাকার সঙ্গে উত্তর-দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি রেল যোগাযোগও স্থাপিত হয়। চালু হওয়ার প্রায় ১০ বছর পর ২০০৮ সালে সেতুটিতে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় ট্রেনের গতি কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ঘণ্টায় ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পারাপার হচ্ছিল।

আরটিভি/এমকে/এআর

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission