পাগলা মসজিদের দানসিন্দুক নিয়ে মানুষের কৌতুহলের যেন শেষ নেই। টাকা পয়সার পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা ও স্বর্ণালঙ্কার পাওয়া যায়। কিন্তু প্রতিবারই সিন্দুক খোলা হলে কিছু চিঠি গণনার কাজে অংশ নেওয়া লোকজনের নজর কারে।
প্রতিবার আলোচনায় থাকে মসজিদের দানবাক্সে পাওয়া চিঠি নিয়ে। এসব চিঠিতে লোকজন জীবনের প্রাপ্তি, বিরহ-বেদনা, আয়-উন্নতির ফরিয়াদ, চাকরির প্রত্যাশা, মনের মানুষকে কাছে পাওয়া, পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের আশা, রোগব্যাধী থেকে মুক্তি পেতে আকুতি প্রকাশ করে।
এমনই এক চিঠি যেখানে এক প্রেমিকা তার প্রেমিককে পাওয়ার আকুতি জানিয়ে তিনি লিখেছেন, হে আমার আল্লাহ, আজ তোমার হুকুমে আমি এই আপনার পাগলা মসজিদে এসেছি। আমার নিষ্পাপ মন মহসিন রহমান আরমান টুকরা টুকরা করে দিয়েছে। সে আমাকে প্রথমে ভালোবাসা শিখিয়ে অন্য মহিলার কাছে চলে গিয়েছে। আমি এতো বছর তার অপেক্ষা করেছিলাম। আপনার দুরুদ ইব্রাহিম পড়েছিলাম। আমার জীবনে এতো কষ্ট ও দুঃখ দিয়েছেন ও আমার আল্লাহ আমার দুঃখগুলো আমার রুহের শান্তিতে করে দিয়েন।
তিনি আরও লেখেন, মহসিনুর রহমান আরমান যেন অন্য মহিলার কাছে না যায় তাকে আমার কল্যাণে করে দিন। না হলে, আমার মনকে পরিবর্তন করে দিন। আর আমাকে বলেছে সে বিয়ে করেছে সে কথা যেন মিথ্যা হয়। আমিন।
উল্লেখ্য, শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় ৪ মাস ১১ দিন পর পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্দুক খোলা হয়। সিন্দুক খোলার পর টাকা পয়সা ছাড়াও স্বর্ণ, রুপা বৈদেশিক মুদ্রা পাওয়া যায়।
পাগলা মসজিদের ১১টি দানসিন্ধুক খোলে এবার ২৮ বস্তা টাকা পাওয়া গেছে। দেশি টাকার পাশাপাশি সেখানে ছিল স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও। শনিবার (১২ এপ্রিল) সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় সিন্দুক খুলে টাকা গুলো বস্তায় ভরা হয়। পরে মসজিদের ২য় তলার মেঝেতে ঢেলে ৯ টায় শুরু হয় গণনা কার্যক্রম।
এর আগে, গত বছরের ৩০ নভেম্বর সিন্দুক গুলো খোলা হয়েছিল। এ হিসেবে এবার ৪ মাস ১১দিন পর আবারও সিন্দুক খোলা হয়েছে। তখন রেকর্ড ২৯ বস্তায় ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা পাওয়া গেছে।
সিন্দুক খোলার সময় জেলা প্রশাসক ফৌজিয়া খান, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সেনা, পুলিশ ও আনসার সদস্যরা সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। দিনভর গণনা শেষে সন্ধ্যায় মোট টাকার পরিমাণ জানা যাবে।
টাকা গণনা কাজে জেলা প্রশাসনের ২৪ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ২৪৭ জন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ১০ জন শিক্ষক, ১৪ জন সেনা সদস্য, ৩০ জন পুলিশ সদস্য, ১০ জন আনসার সদস্য, ৮০ জন ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশগ্রহণ করেছেন।
প্রচলিত আছে, এখানে দান করলে মনোবাসনা পূরণ হয় এমন বিশ্বাস থেকে মুসলমান ছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজন এ মসজিদে দান করে থাকেন। আর এই জন্য দেশে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষজন দান করতে ছুটে আসেন। শুধু টাকা পয়সা না, এখানে টাকার পাশাপাশি সোনা-রুপার অলঙ্কারসহ বিদেশি মুদ্রাও দান করে থাকেন। প্রতিদিন বিপুলসংখ্যক গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি, ফলফলাদি, মোমবাতি ও ধর্মীয় বই দান করে লোকজন।
আরটিভি/এএএ/এস