ঢাকাশনিবার, ২৮ জুন ২০২৫, ১৪ আষাঢ় ১৪৩২

‘৩০০ টাকা মজুরিতে এখন আর সংসার চলে না’

রাজিউল হাসান পলাশ, ধামরাই প্রতিনিধি

বৃহস্পতিবার, ২৯ মে ২০২৫ , ০৫:৩০ পিএম


loading/img
ছবি: আরটিভি

এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী ধামরাইয়ের গহনাশিল্প আজ হুমকির মুখে। বিদেশি গহনার দাপট ও স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছেন এখানকার কারিগররা। মাত্র ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করে সংসার চালানো দায়। বাপ-দাদার পেশা ছাড়া অন্য কোনো কাজ না জানায় বাধ্য হয়েই রয়েছেন এ পেশায়। অনেকেই আবার পেশা বদল করেছেন।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) এভাবেই কাজ এবং মজুরি নিয়ে বলছিলেন ধামরাইয়ের স্বর্ণ কারিগর বিষ্ণু মণ্ডল। তিনি বলেন আগে সাধারণ মাসেও মজুরি পেতাম প্রায় ২০ হাজার টাকা বিয়ের সিজনে কখনও কখনও দ্বিগুণ আয় হতো। এখন মাসে আয় হয় ৭-৮ হাজার টাকা। এ দিয়ে সংসার চালানো কষ্ট হয়ে পড়েছে। 

ধামরাই পৌর এলাকার পুরনো গলির স্বর্ণ পট্টিতে আজো শোনা যায় হাতুড়ির টুংটাং শব্দ। বহু প্রজন্ম ধরে এখানকার কারিগরেরা বানিয়ে আসছেন সোনার চেইন, বালা, কানের দুল, নথ, পায়েলসহ নানা অলংকার। কিন্ত এখন সেই ছন্দ হারিয়েছে তার জৌলুস। ছোট ছোট কারখানাগুলোতে এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে গয়না তৈরির যন্ত্রপাতি। তাপে গলছে সোনা-রূপা, ঢালা হচ্ছে ছাঁচে। ঠান্ডা হলে হাতুড়ি দিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আকৃতি। সূচের ধারালো প্রান্ত দিয়ে খোদাই করা হচ্ছে নিখুঁত নকশা।

বিজ্ঞাপন

ব্যবসায়ী গৌতম জানান, বিয়ের মৌসুম এলে আগে দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করতো কারিগরেরা। সাধারণ মাসেও ছোট কারখানাগুলোতে কাজ হতো ১০-১৫ ভরি অলংকারের কিন্তু বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২-৩ ভরিতে। বিদেশি গয়নার চাহিদা বাড়ায় আমরা টিকে থাকতে পারছি না।

ব্যবসায়ী সোহেল জানান, এক সময় সোনার গয়নার জন্য পরিচিত ধামরাইয়ের কারিগরেরা এখন তৈরি করছেন রূপা, পিতল, ও তামার গয়না। নকশা ঠিকই আছে, কিন্তু ক্রেতা নেই। বর্তমানে সোনার দাম দেড় লাখ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো বিয়ে বা বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া আর গয়না তৈরি করছে না। এতে করে দেশের ছোট ছোট সোনার দোকানগুলো পড়েছে বেচাকেনার সংকটে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বর্ণ আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধিও এই খাতে প্রভাব ফেলেছে। দ্রুত সহায়তা না পেলে হারিয়ে যাবে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প। প্রয়োজন রাষ্ট্র ও বেসরকারি খাতের সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এটা শুধু পেশা নয় এটা বাংলাদেশের ঐতিহ্য। সরকারি-বেসরকারি সহায়তা না পেলে এই শিল্প একদিন মেশিনের দখলে চলে যাবে। 

বিজ্ঞাপন

ধামরাই উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা এস এম হাসান বলেন, যদি কেউ পেশা পরিবর্তন করতে চায় তাহলে তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার সুযোগ রয়েছে। এছাড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর লোকজনকে সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে স্বল্প সুদে ও সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার সুযোগ আছে।

বিজ্ঞাপন

আরটিভি/এএএ 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |