আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ও জামায়াতের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলামকে নিজেদের দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। তিনি রংপুর-২ (তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ) আসনে দলের হয়ে লড়বেন।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুরে রংপুরের তারাগঞ্জে এক সমাবেশ থেকে তাকে প্রার্থী ঘোষণা করেন দলের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম।
পরে এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, যারা বলেছিল অমুকের বেটি দেশ ছেড়ে পালায় না, তারাই আজ পালিয়েছে। তাদের ঠিকানা অন্যখানে, একটু শব্দ হলেই তারা সেখানে পালিয়ে যায়। যাদের ঠিকানা অন্যখানে তাদের দিয়ে দেশ ও দেশের মানুষের কোনো উপকার সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের জুলুম-অত্যাচারে শুধু জামায়াতে ইসলামী ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি, যারাই মতের বিপক্ষে গেছে তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জামায়াতে ইসলামের নেতারা মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেও এ দেশ ছেড়ে পালায়নি। যারা জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে, তারাই পালিয়েছে।
জুলাই গণহত্যার বিচার চেয়ে এই জামায়াত নেতা বলেন, এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যারা যেখানে যেভাবেই জড়িত ,সরকারকে জানাতে চাই তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি দেওয়া হোক। তা না হলে বাংলাদেশ আইনের শাসন থাকবে না। আজকে মানুষ আদালতকে বিশ্বাস করতে শুরু করেছে। আগে আদালত দলীয়ভাবে চলত। এখন আদালত দলীয়মুক্ত হয়েছে। আমার তো রায় হয়ে গিয়েছিল শুধু ফাঁসি কার্যকর করা বাকি। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমি মুক্ত হলাম। আর আমাকে ফাঁসির আসামি হিসেবে ঝোলানোর চেষ্টা করল যে বিচারপতিরা কোথায় আজকে তারা। তাদের আজ খুঁজে পাওয়া যায় না।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন না উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আজ আমি মুক্ত ও স্বাধীন। আমি আপনাদের কাছে বলতে চাই, যে অপরাধে আমাকে ফাঁসির রায় দেওয়া হয়েছে; আল্লাহর কসম সে অপরাধী আমি সামান্যতম জড়িত ছিলাম না। আমাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
এটিএম আজহারুল ইসলাম বলেন, সরকার বলেছে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচন দিক। মানুষ ১৫ বছর ভোট দিতে পারে নাই। এজন্য অনেকের মধ্যে ভোটের প্রতি বিতৃষ্ণা আছে। আমি অনুরোধ করব, এবার ভোট বিপ্লব ঘটাতে হবে। আমরা যদি যোগ্য জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করতে ভুল করি, তাহলে বিপদে পড়তে হবে।
তিনি বলেন, আমি ১৯৯৬, ২০০১ ও ২০০৯ সালে নির্বাচন করেছি। আপনারা চাননি বলে আমি এমপি হতে পারি নাই। জামায়াতে ইসলামী জোর করে ভোট সেন্টার দখল, ভোটারদের টেনে নিয়ে গিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করতে চায় না। আগামী নির্বাচনে আমি তারাগঞ্জ-বদরগঞ্জ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।
এই জামায়াত নেতা বলেন, আমি কথা দিচ্ছি যদি আমি এমপি নির্বাচিত হতে পারি, তাহলে হারামের কোনো টাকা আমার পেটে যাবে না। বিগত সময়েও আমি কোন হারামের টাকা খাইনি। আমার সম্পদ নেই, তবু আল্লাহ আমাকে ভাল রেখেছেন। বিগত দিনের মত ভবিষ্যতেও আমি জনগণের কল্যাণে কাজ করে যেতে চাই।
তারাগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির এসএম আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, মাহবুবুর রহমান বেলাল, রংপুর মহানগরীর আমির এটিএম আজম খান, জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, মহানগর ছাত্রশিবিরের সভাপতি নুরুল হুদা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এর আগে, আজ সকালে কারাভোগের ১৪ বছর পর নিজ জেলায় ফেরেন এটিএম আজহারুল ইসলাম। পরে বিকেল ৫টায় বদরগঞ্জ উপজেলার শাহাপুর মাঠে আয়োজিত গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিনি।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ের ভিত্তিতে গত ২৮ মে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলাম কারাগার থেকে মুক্তি পান। এ সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ শীর্ষ নেতারা তাকে স্বাগত জানান।
আরটিভি/আইএম