চলনবিলে বাউত উৎসবে চলছে মাছ ধরার ধুম
বনার চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর উপজেলার চলনবিল, বগা বিল, চতরার বিল, গমবিল ও রুহুল বিলের অভিমুখে বিভিন্ন বয়সী হাজারও মানুষের দীর্ঘ লাইন। কারো হাতে পলো আবার কারো হাতে নানারকম জাল। কি শিশু, কি বৃদ্ধ, হাজারও মানুষ বিলে নেমে পড়েছেন মাছ ধরার জন্য। আঞ্চলিক ভাষায় দল বেঁধে মাছ শিকারের এই আয়োজনের নাম বাউত উৎসব। গ্রামীণ ঐতিহ্য হিসেবে এখনও পাবনাসহ চলনবিল অঞ্চলে প্রতি বছর চলে আসছে বাউত উৎসবে মাছ শিকার। সপ্তাহে দুইদিন চলে এই উৎসব। তবে দিন দিন জলাশয় ও বিল প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় আর আয়তন কমে যাওয়ায় মিলছে না আগের মতো মাছ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, কারও কাঁধে পলো, আবার কারও হাতে ঠেলা জাল, বাদাই জালসহ মাছ ধরার নানান উপকরণ। বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। দূর-দরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে এক স্থানে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, বিভিন্ন বয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিল পাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মেতে ওঠেন তারা।
এ চিত্র চলনবিলের পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার রুহুল বিলের। আঞ্চলিক ভাষায় দল বেধে মাছ শিকারের এই আয়োজনের নাম বাউত উৎসব। আর এখন এই উৎসবে মেতেছেন চলনবিল অঞ্চলের মানুষ। প্রতি বছরের মতো অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সপ্তাহে দুইদিন শনি ও মঙ্গলবার চলে এই মাছ শিকার। মাসব্যাপী এই মাছ ধরার বাউত উৎসবে যোগ দেন পাবনা ছাড়াও আশপাশের জেলার হাজার হাজার মানুষ। তাদের জালে পলোতে ধরা পড়ছে রুই, কাতলা, শোল, গজার, বোয়াল, চিতল, শিং, পুঁটি, খৈলসা, টেংড়াসহ বিভিন্ন রকম মাছ। মাছ যাই মিলুক, সবাই মিলে মাছ ধরার আনন্দটাই সবার কাছে মুখ্য বলে জানান মাছ শিকারিরা।
এসব এলাকার বাসিন্দা আকবর প্রামাণিক, কিসমত আলী, রেজাউল ইসলামসহ অনেকেই জানান, প্রভাবশালীদের দখলদারিত্বের কারণে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে চলনবিলের খাল-বিল। দখলে চলে যাচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম। তাই মেলে না আগের মতো মাছ। এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ চান স্থানীয়রা।
পাবনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুর রউফ জানান, বাউত উৎসবে দল বেধে মাছ ধরতে গিয়ে পক্ষান্তরে মাছের প্রজননক্ষেত্র নষ্ট হয়। এজন্য দেশি প্রজাতির মাছ ও প্রজননক্ষেত্র রক্ষায় মৎস্য শিকারিদেরও ভূমিকা রাখতে হবে।
তবে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে খাল-বিল ও জলাশয় খনন করে মাছের প্রাকৃতিক অভয়াশ্রম গড়ে তুলবে সরকার-এমনটাই প্রত্যাশা চলনবিলবাসীর।
জেবি
মন্তব্য করুন