• ঢাকা রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১
logo
মাদারীপুরে শেখ হাসিনাসহ ৩২৭ জনের বিরুদ্ধে মামলা
ইতালি যাওয়ার পথে মাদারীপুরের ৩ যুবকের মৃত্যু
অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলারডুবিতে মাদারীপুরের তিন যুবকের মৃত্যু হয়েছে।  বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে এ খবর জানা গেছে। মৃতরা হলেন মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার গোপালপুরের পূর্ব পুবালি গ্রামের একই পরিবারের দুই যুবক মিলন ও আল-আমিন এবং একই গ্রামের খলিল খানের ছেলে শান্ত খান। জানা গেছে, স্থানীয় দালাল ফরহাদ মোল্লার প্রলোভনে পা দিয়ে প্রাণই হারিয়েছেন তারা। ফরহাদ তাদেরকে ১৫ লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধপথে লিবিয়া দিয়ে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরিবারের অভাব দূর করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দালাল চক্রের মাধ্যমে সাত মাস আগে দেশত্যাগ করেন মাদারীপুরের ওই তিন যুবক। তবে গত তিন মাস ধরে খোঁজ মিলছে না তাদের। লিবিয়াতে পুলিশের হাতে আটক হয়ে দেশে ফিরে আসা ইস্রাফিল নামে এক যুবক বলেন, ‘তারা গত তিন মাস আগে নৌপথে ইতালি যাওয়ার সময় ট্রলার ডুবে মারা গেছে। এদিকে এ সংবাদ শুনে দুই পরিবারে চলছে শোকের মাতম।’  মিলন ও আল-আমিনের মা বলেন, ‘পরিবারের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, জমি-জমা বিক্রি করে, ধার-দেনা করে লিবিয়া গিয়েও ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হলো না, আমরা আমাদের মিলন ও আল-আমিনকে ফেরত চাই।’
মাদারীপুরে কুমার নদ থেকে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার
ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ রকিবুলের মৃত্যু
নিখোঁজের ৬ ঘণ্টা পর কলেজছাত্রের মরদেহ উদ্ধার
মাদারীপুরে সাপের কামড়ে অন্তঃসত্ত্বার মৃত্যু
‘আমিরাতের মতো বাংলাদেশেও অপরাধীদের দ্রুত বিচার হবে’
আমিরাতের মতো বাংলাদেশেও অপরাধীদের বিচার দ্রুত হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শনিবার (২৭ জুলাই) দুপুরে মাদারীপুরের খাদগী এলাকায় নাশকতাকারীদের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া বিলাসবহুল বাস ও তেলের পাম্প পরিদর্শন শেষে এ কথা জানান মন্ত্রী। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত আবর আমিরাতে সম্প্রতি কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের ঘটনায় ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাক্ষ্যপ্রমাণ নিয়ে সেভাবে তাৎক্ষণিক বিচার হয়েছে, ঠিক বাংলাদেশেও এমন অপরাধীদের দ্রুততম সময়ে বিচারের আওতায় আনা হবে। সিসিটিভি ফুটেজ ও মোবাইলে ধারণ করা ভিডিওতে এসব সন্ত্রাসীদের চেহারা ধরা পড়েছে। দেশের মধ্যে জঙ্গি কোথায় লুকিয়ে আছে, সেটা বলা যায় না। দৃশ্যমান জঙ্গি নিস্ক্রিয় করা হয়েছে।  আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, গর্তের মধ্যে লুকিয়ে থাকা জঙ্গিদের বিদেশি মদতদাতা রয়েছে। বিদেশি প্রভুদের মদতে যে ধ্বংসযজ্ঞ হয়, সেগুলো একবারে নির্মূল করা সম্ভব হয় না। ভালো মানুষ তারা ভালো চিন্তা করে। খারাপ মানুষের চিন্তা মন্দ হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত দিনে জামায়াত-শিবিরের আন্দোলন যেভাবে শাজাহান খান এমপি প্রতিহত করেছেন, সেই ক্ষোভেই শ্রমিক নেতা শাজাহান খানের মালিকানাধীন যানবাহন ও তেলের পাম্প পুড়িয়ে দিয়েছে, ভাঙচুর করেছে দুষ্কৃতকারীরা। যে যানবাহনে সাধারণ জনগণ চলাচল করে, এগুলো স্বাভাবিক মানুষ কখনই ক্ষতি করতে পারে না। এটা প্রতিহিংসার জের, এতে কোনো সন্দেহ নাই। ১৯৭১ সালে যেভাবে পাক হানাদার বাহিনীদের সঙ্গে এদেশের দোসর রাজাকার, আলবদর, জামায়াত-শিবির যেভাবে তাণ্ডব চালিয়েছে, ঠিক তেমনি কোটা আন্দোলনের নামের যে ঘটনা, ১৯৭১ সালের হুবহু মিল রয়েছে। এ হামলাকারীরা চিহ্নিত সন্ত্রাসী, তাদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান, মাদারীপুরের চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি হাফিজুর রহমান যাচ্চু খান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আলাউল হাসান ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শাহজাহান হাওলাদার প্রমুখ। উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, আওয়ামী লীগ কার্যালয় ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদে ব্যাপক ভাঙচুরের চালায় দুর্বৃত্তরা। তেলের পাম্প, সার্বিক বাস ডিপো, পুলিশ ফাঁড়ি ও পৌর মুক্তিযোদ্ধা কমিউনিটি সেন্টারে আগুন দেয় নাশকতাকারীরা। 
‘ওরে কেন গুলি কইরা মারল, আমারে বাবার কাছে নিয়া যাও’
‘আমার ছেলে দুপুরে খাইয়া কারখানায় যাইতেছিল। ও তো আন্দোলন করে নাই। ওরে কেন গুলি কইরা মারল? আমার একমাত্র ছেলে! আমি এখন কি নিয়া বাঁচমু। আমার বাবার কাছে আমারে নিয়া যাও।’ শুক্রবার (২৬ জুলাই) নিজের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে এভাবেই কান্না করছিলেন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্যাসীরচর ইউনিয়নের রাজারচর আজগর হাওলাদারকান্দি গ্রামের কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার সময় নিহত শিহাবের মা নাছিমা বেগম। জানা গেছে, ঢাকার বাড্ডার লিংকরোড এলাকার ‘হাসান স্টিল অ্যান্ড ফার্নিচার’ এ কাজ করত শিহাব। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে দুপুরের খাবার খেতে যায় সে। খাবার শেষ করে পাশেই কারখানায় (ফার্নিচার) ফিরতে গিয়ে রাস্তা পার হচ্ছিল। এ সময় একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শিহাবের শরীরে। বুকের পাশ দিয়ে বিদ্ধ হয়ে অপর পাশ দিয়ে বেরিয়ে যায় গুলি। তখন ওই এলাকার মসজিদের এক ইমাম শিহাবের সঙ্গে ছিলেন। পরে খবর পেয়ে ফার্নিচার দোকানের মালিক ফুফাতো ভাই মনির মোল্লা স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে শিহাবকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। পরে বনশ্রী এলাকার নাগরিক স্পেশালাইজড প্রাইভেট হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। গত শুক্রবার রাতে গ্রামের বাড়িতে এসে পৌঁছায় শিহাবের মরদেহ। পরে শনিবার (২০ জুলাই) তার দাফন সম্পন্ন হয়। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘শিহাব কীভাবে মারা গেছে জানা নেই। তবে, বিষয়টি দুঃখজনক। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে নিহতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করব।’
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী / এখন মুক্তিযোদ্ধাদের আর নিজেদের কোনো কোটার প্রয়োজন নেই
গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী বলেছেন, ‘কোটা সংরক্ষণের যেমন প্রয়োজন আছে। তেমনিভাবে অযৌক্তিকভাবে যে সমস্ত কোটা সংরক্ষণ আছে সেগুলোকেও একটা যৌক্তিক পর্যায় নিয়ে আসা প্রয়োজন। আমাদের সংবিধানেও কোটার কথা বলা হয়েছে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর অগ্রসরের প্রয়োজনে। এখন মুক্তিযোদ্ধাদের আর নিজেদের জন্য কোনো কোটার প্রয়োজন নেই। তাদের সন্তানরাও কোটার বাইরে চলে গেছে। এখন অন্যদেরকেও কোটা দেওয়া হবে কি না, সেটা আদালত যেভাবে নির্দেশনা দেবে সেভাবে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।’  শনিবার (১৩ জুলাই) দুপুরে মাদারীপুরের শিবচরে পৌরশহরে দাদা ভাই হাউজিং প্রকল্পে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এসব কথা বলেন তিনি।  এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বলব, আপনারা আরেকটু অপেক্ষা করুন, ধৈর্য ধারণ করুন। এভাবে আপনারা পড়াশোনা নষ্ট করে যেভাবে মাঠে আছেন, আপনাদের প্রতি সিমপ্যাথি থাকলেও আমরা মনে করি আপনারা নিজেদের ক্ষতি করছেন।’ গণপূর্তমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আপনারা মাঠ থেকে উঠে আসুন, পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুন। সেই সঙ্গে আপনাদের দাবির ব্যাপারেও সোচ্চার থাকুন। আমরা আপনাদের অভিভাবক, আমরা আপনাদের প্রতি বিরূপ নই। শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ জনগণের প্রতি যথেষ্ট সংবেদনশীল, ছাত্রছাত্রীদের প্রতিও সংবেদনশীল। আমাদের সরকার অবশ্যই সব দিকেই বিচার বিশ্লেষণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, ইনশাআল্লাহ।’ এ সময় বৃক্ষরোপণ অনুষ্ঠানে চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী এমপি প্রধান বক্তা হিসেবে বিশেষ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নবীরুল, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের চেয়ারম্যান অতিরিক্ত সচিব মো. হামিদুর রহমান, মাদারীপুরের জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুনির চৌধুরী, মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ মারুফুর রশিদ খান, মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শফিকুর রহমানসহ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তারা। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এর আগে মন্ত্রী উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে পদ্মানদীর পাড়ে মুজিব আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টারের প্রস্তাবিত স্থান পরিদর্শন করেন। পরে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উপজেলার ‘দাদা ভাই’ উপশহরে তিনি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে যোগদান করেন।
দুই শিশুকে হত্যার পর পাশেই বসে ছিলেন মা
মাদারীপুরে দুই শিশুসন্তানকে হত্যার অভিযোগ উঠেছে মা তাহমিনা বেগমের (২৫) বিরুদ্ধে। বুধবার (১০ জুলাই) বিকেলে মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।  জানা গেছে, মাদারীপুর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার তারা মিয়া ও নার্গিস বেগমের সঙ্গে তাহমিনা বেগম তার দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। তাহমিনার স্বামী সৌদি প্রবাসী মো. হালিম খানের বাড়ি শরীয়তপুর জেলায়। শ্বশুরবাড়ির সঙ্গে ঝগড়া লেগে থাকায় তাহমিনা তার মায়ের সঙ্গেই থাকেন। এক বছর ধরে তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বুধবার বিকেলে ঘরে কেউ না থাকার সুযোগে তাহমিনা তার দুই সন্তান ৩ বছরের জান্নাত ও ১ বছরের মেহেরাজকে হত্যা করে। তাহমিনার মা নার্গিস বেগম ঘরে এসে মেয়ের রুমের দরজা বন্ধ দেখে ডাকাডাকি করেন। কিন্তু তিনি দরজা খোলেন না। এক প্রতিবেশী জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ ফোন দিয়ে পুলিশকে এ তথ্য জানান। এ খবর পেয়ে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মৃত দুই সন্তানের পাশে মাকে বসে থাকতে দেখেন। পুলিশ মা তাহমিনা বেগমকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। দুই শিশুর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মাদারীপুরের ২৫০ শয্যা জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তাহমিনা বেগমের বাবা তারা মিয়া বলেন, ‘আমার মেয়ে অসুস্থ, তার মানসিক সমস্যা আছে। তার চিকিৎসা চলছে। তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়েছিল। তার শ্বশুরবাড়ির মানুষজন তাকে অত্যাচার করে পাগল বানিয়েছে। তাই আমার মেয়ের মানসিক সমস্যা না থাকলে এই ধরনের ঘটনা সে ঘটাতে পারত না।’ মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম সালাউদ্দিন বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে শিশু দুটিকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে পরবর্তীতে হত্যার মূল কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাকে আটক করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাহমিনা আক্তারকে আদালতে পাঠানো হবে।’
নিজ গ্রামে মানবতার ফেরিওয়ালা ছিলেন আবেদ আলী
লাখ লাখ তরুণের স্বপ্ন বিক্রি করে পাহাড় সমান সম্পদ গড়ে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’তে পরিণত হয়েছেন সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানের গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। বিসিএসসহ ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় নিজের দায় স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন তিনি।  জানা গেছে, ছদ্মবেশী ধার্মিক এই আবেদ আলী নিজ গ্রামে মানবতার ফেরিওয়ালা নামে পরিচিত ছিলেন। শুধু নিজগ্রামেই নয়, ডাসার উপজেলাজুড়ে বিচরণ ছিল তার। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হতে চেয়েছিলেন আবেদ আলী। অসহায় মানুষকে সাহায্য করে মন জয় করার আপ্রাণ চেষ্টার কমতি রাখেননি তিনি।  ঈদ ও পূজাকে ঘিরে কয়েক হাজার শাড়ি-লুঙ্গি, নগদ টাকাও বিতরণ করছেন তিনি। গত কোরবানির ঈদে দামি গাড়িতে চড়ে ১০০ জনের মধ্যে এক কেজি করে মাংস বণ্টন করেন। সেই ভিডিও শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। আবেদ আলীর ছেলে সিয়াম শুধু একটি গাড়ি নয়, একাধিক দামি গাড়ি ব্যবহার করেন। সবই দামি, ঝকঝকে। পড়েছেন ভারতের শিলংয়ে। দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও তিনি পড়ালেখা করেন। তিনি ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। প্রভাব জাহির করার জন্য বড় বড় নেতা ও আমলাদের সঙ্গে ছবি তুলে বাবা-ছেলে ফেসবুকে বুস্ট করে ব্যাপকভাবে প্রচার করেন। আবেদ আলী নিজেই তার ফেসবুক পেজে একটি হোটেল নির্মাণের তথ্য তুলে ধরেছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিত্ত-বৈভব ফুলেফেঁপে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে আবেদ আলী মীর পদবি পাল্টে নামের আগে সৈয়দ পদবি ব্যবহার শুরু করেন। বাবার উত্থান নিয়ে ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামও সম্প্রতি একটি সমাবেশে বক্তব্য দেন। বাবার উত্থানের গল্প বলতে গিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা একদম ছোট থেকে বড় হয়েছেন। আমার বাবার বয়স যখন ৮ বছর, তখন পেটের দায়ে তিনি ঢাকায় চলে গেছেন। ঢাকায় গিয়ে কুলিগিরি করে ৫০ টাকা রুজি দিয়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি এখন একটি লিমিটেড কোম্পানির মালিক। তিনি কষ্ট করে বড় হয়েছেন। সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে উঠে আসে আবেদ আলীর ভয়ংকর তথ্য। প্রায় একযুগ আগে থেকে পিএসসির প্রশ্নপত্র ফাঁসের চক্রের সঙ্গে জড়িত এই আবেদ আলী। এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি এসে নেমে পড়েন উপজেলা নির্বাচনের প্রচারণায়। রাজনীতির মাঠে-ময়দানে কোটি টাকার গাড়িতে চড়ে গণসংযোগ করেন আবেদ আলী ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা সোহানুর রহমান সিয়াম। এলাকায় বাবা ছেলে দু-হাত ভরে দান-খয়রাত করতেন। নিজ গ্রামে কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়াও সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন বিপুল সম্পদ। আবেদ আলীর আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার গল্প যেন সিনেমাকেও হার মানাবে। তিনি ৮ বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে পাড়ি জমান ঢাকায়। শুরু করেন কুলির কাজ। একসময় ফুটপাতে ঘুমিয়েছেন। কষ্টের পর কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপর জড়িয়ে পড়েন পিএসসির প্রশ্নফাঁস চক্রের সঙ্গে। আর ফিরে তাকাতে হয়নি। অর্জন করেন বিপুল সম্পদ, সঙ্গে ক্ষমতাও।  এলাকায় শিল্পপতি হিসেবে পরিচয় দিতেন সৈয়দ আবেদ আলী। স্থানীয়রা জানান, সৈয়দ আবেদ আলী মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার পশ্চিম বোতলা গ্রামের মৃত আব্দুর রহমান মীরের ছেলে। আব্দুর রহমান মীরের তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আবেদ আলী মেজ। রহমান মীরের বড় ছেলে জবেদ আলী কৃষিকাজ করেন। ছোট ছেলে সাবেদ আলী এখনও এলাকায় অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। তাদের ভাই আবেদ আলী জীবন। এলাকার মানুষের কাছে তিনি পরিচয় দিতেন শিল্পপতি হিসেবে। আবেদ আলীর ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামও ব্যবহার করতেন দামি গাড়ি। আবেদ আলী নিজেও দামি গাড়িতে চড়তেন। অথচ এলাকার কেউ জানতেনই না তিনি গাড়িচালক। তিনি ঢাকায় রিয়েল স্টেটের ব্যবসা করতেন বলে এলাকায় প্রচার ছিল। কয়েক বছর ধরে এলাকায় ব্যাপক দান-খয়রাতও করেন প্রশ্নফাঁস চক্রের এই হোতা। স্থানীয়রা আরও জানান, এত সম্পত্তির মালিক কীভাবে হলো সেই প্রশ্ন সবার। মানুষকে লাখ লাখ টাকা দান করতেছে। এলাকায় বাড়ি করছে, মসজিদ করেছে। কেউ সৎভাবে উপার্জন করে অল্পদিনে কোটি কোটি টাকার মালিক হতে পারে না। এর তদন্ত হওয়া দরকার। এলাকাবাসী হিসেবে আমরা এর তদন্ত চাই।
এবার আবেদ আলীর ছেলে ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের পদও হারালেন 
দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে এবার মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ছেলে সোহানুর রহমান সিয়ামকে।   মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকালে ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জাহিদ হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ অনিক হোসেন স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে বিসিএসের ক্যাডার এবং নন-ক্যাডার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন সিয়াম। তিনি একই অভিযোগে গ্রেপ্তার আলোচিত ড্রাইভার সৈয়দ আবেদ আলী জীবনের ছেলে। আবেদ আলী সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) সাবেক চেয়ারম্যানের গাড়িচালক ছিলেন। এর আগে সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক সম্পাদকের পদও হারিয়েছেন সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়াম। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছে মাদারীপুরের ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগ। তাকে ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগ কমিটির সহ-সভাপতির পদ থেকেও স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, সিয়ামকে ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।   এতে আরও উল্লেখ করা হয়, সংগঠনের নীতি ও নৈতিকতা পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় ডাসার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক সিয়ামকে ডাসার ছাত্রলীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হলো।