প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ ২৬ বছর পরও ছয়তলা একাডেমিক ভবনে একটি মাত্র লিফটই এখনো গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের (গবি) একমাত্র ভরসা। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষার্থী এবং দুই শতাধিক শিক্ষক–কর্মকর্তাকে যাতায়াত করতে হচ্ছে এই একটি পুরনো, ধীরগতির ও সীমিত ধারণক্ষমতাসম্পন্ন লিফটে। ফলে প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হচ্ছে ভয়াবহ ভিড়, ভোগান্তি ও দেরির ঘটনা। এমনকি মাঝে মাঝেই লিফটে আটকে পড়ার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিও তৈরি হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান, কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল, ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস এবং কৃষি অনুষদ—এই পাঁচটি অনুষদের অধীনে মোট ১৭টি বিভাগে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। প্রতিটি বিভাগেই শ্রেণিকক্ষ ছাড়াও রয়েছে ল্যাবরেটরি ও প্রশাসনিক কক্ষ, যেগুলো অধিকাংশই ভবনের উপরের তলায় অবস্থিত।
বর্তমানে ব্যবহৃত একমাত্র লিফটটির ধারণক্ষমতা কাগজে-কলমে ১৬ জন হলেও, ৮ থেকে ১০ জন উঠলেই ওভারওয়েট সতর্কবার্তা দেখা যায়। লিফটটির গতি ধীর এবং কার্যক্ষমতাও অনেকাংশে কমে গেছে। এর ফলে কেবল সময় অপচয়ই নয়, বরং ক্লাসে সময়মতো উপস্থিতি নিশ্চিত করাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য। ইতোমধ্যে লিফটে আটকে পড়ার একাধিক অভিযোগও পাওয়া গেছে, যা নিরাপত্তা নিয়েও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বহুদিন ধরেই নতুন লিফট স্থাপনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে প্রশাসন, কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। ফলে দিনদিন ভোগান্তি শুধু বাড়ছেই।
সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থী সুমাইয়া বলেন, একটি মাত্র লিফট থাকায় অনেকে একসাথে উঠতে পারেন না, ফলে ভিড় বেঁধে যায়। যেহেতু অতিরিক্ত লিফট স্থাপনের জায়গা ইতিমধ্যেই নির্ধারণ করা আছে এখন শুধু স্থাপন করা বাকি। পাঁচ-ছয় তলায় উঠতে আমাদের খুব কষ্ট হয়। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত এর সমাধান করবে।
রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী দিব্যজ্যোতি চক্রবর্তী বলেন, এই তীব্র তাপদাহে প্রতিদিন লিফট ছাড়াই পাঁচ তলায় দৌড়ে উঠতে হয়। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লিফটে জায়গা পাওয়া যায় না। যদিও বা পাওয়া যায় অনেক সময় দেখি আমাদের শ্রদ্ধেয় শিক্ষক-শিক্ষিকারা দাঁড়িয়ে আছেন, তাদের সম্মানার্থে আমি নেমে দাঁড়াই। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও অনেক সময় পায়ে হেঁটে চলে যান কারণ তাদের বিভিন্ন ক্লাস নিতে হয়। শারীরিক সমস্যা নিয়েও অনেকেই কষ্ট করে উপরে ওঠেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন বলেন, আরেকটি লিফট স্থাপনের বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা রয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে যৌক্তিক দাবি। যাদের ক্লাস দ্বিতীয় বা তৃতীয় তলায়, তাদের হয়তো লিফটের প্রয়োজন নেই; কিন্তু পঞ্চম ও ষষ্ঠ তলার জন্য প্রয়োজনীয়।
আরটিভি/এএএ/এআর