‘স্ট্রেস ইটিং’ ভুলেও নয়, আটকাবেন যেভাবে
খাবারের সঙ্গে মানসিক যোগ রয়েছে। কিছু কিছু খাবার রয়েছে যা খেলেই আপনার মন নিমেষে ভালো হয়ে যায়। আবার অনেক সময় কোনও নির্দিষ্ট খাবারের জন্য ক্রেভিং তৈরি হয়। অন্যদিকে, আবার যখন আপনি বেশি মানসিক চাপে থাকেন, তখন নোনতা, মিষ্টি ইত্যাদি খাবারের ক্রেভিং বেড়ে যায়। এটা খুব সাধারণ একটা বিষয়। একে আমরা বলি স্ট্রেস ইটিং। মানসিক চাপের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা খাদ্যের সাহায্য নিই। যদিও এর একটা নিউট্রিশনাল ব্যাখ্যাও রয়েছে যে, এই মানসিক চাপের রকম পরিস্থিতিতে কেন আমাদের নোনতা বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়া প্রবণতা বেড়ে যায়। আমরা দৈনন্দিন জীবনে এমন অনেক মানুষকেই দেখেছে যে, কাজের মাঝে ব্যাগ থেকে চিপসের প্যাকেট বার করে খাচ্ছে কিংবা সময়ে অসময়ে চকলেট খাচ্ছে। এটা তখন হয়, যখন তার মধ্যে স্ট্রেস বেড়ে যায়।
পুষ্টিবিদের ভাষ্যমতে, যখন আপনার স্ট্রেস হয়, তখন আপনার মধ্যে খাবার খাওয়ার তীব্র চাহিদা তৈরি হয়। তখন হয় আপনি নোনতা জাতীয় খাবার খাবেন কিংবা মিষ্টি জাতীয় খাবার।
এর পাশাপাশি আরও জানা যায়, যে আমরা যখন মানসিক চাপের মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমরা শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম ক্ষয় হয়। অতএব, মিনারেলের ঘাটতিগুলো সম্পর্কে আমাদের জানানোর জন্য শরীর উপায় হিসাবে খাবারের চাহিদা তৈরি করে।
এই বিষয়ে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন যে, চাপের পরিস্থিতিতে আমাদের বেশি করে সবুজ শাকসবজি খাওয়া উচিত। যাতে আমরা এই প্রক্রিয়াতে হারিয়ে যাওয়া সমস্ত মিনারেলের চাহিদাকে পূরণ করতে পারি। তিনি আরও বলেছেন যে, যদি শরীরে মিনারেলের ঘাটতি দেখা দেয়, তাহলে আমরা যে ভিটামিনগুলো গ্রহণ করেছি তাও শোষিত হবে না।
আর এভাবে অতিরিক্ত খাওয়া শরীরে জন্য মোটেই ভালো নয়। ঘন ঘন বাইরের খাবার খাওয়ার কারণে অন্য সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই অভ্যাসে রাশ টানা জরুরি।
‘স্ট্রেস ইটিং’ আটকানোর উপায়গুলো জেনে নিন—
অন্য কাজে মন দিন: নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখুন। এমন কিছু করতে পারেন, যা আনন্দ দেয়। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া হোক কিংবা সিনেমা দেখা— তা হলেও মানসিক চাপ অনেকটা কাটবে। ধ্যান কিংবা শরীরচর্চা করলেও উপকার পাওয়া যাবে।
পানি বেশি পান করুণ: শরীর তৃষ্ণার্ত থাকলে খাবার খেতে বেশি ইচ্ছা করে। তাই শরীরে পানির ঘাটতি তৈরি হতে দেওয়া যাবে না। বেশি করে পানি পানে ঘনঘন খাবার মুখে তুলতেও ইচ্ছা করবে না। তা ছাড়া পানি বেশি খেলে মানসিক চাপ কমে।
ক্যাফেইন একেবারেও নয়: রাগ হলে ক্যাফেইন সমৃদ্ধ খাবার একেবারেই খাবেন না। কফি, এনার্জি ড্রিঙ্ক, ব্ল্যাক টি ও সোডা যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। এগুলো আপনার স্নায়ুতন্ত্রকে উদ্দীপিত করতে পারে। এতে আপনার বিরক্তি, অস্থিরতা ও উদ্বেগ আরও কয়েক গুণ বেড়ে যাবে।
মিষ্টি খাবার-দাবার: বেশি চিনিযুক্ত কোনও খাবার মোটেও খাবেন না। রেগে থাকলে ক্যান্ডি, চকলেট, মিষ্টি ড্রিঙ্কস ভুলেও নয়। এ সব খাবারের জেরে রক্তে শর্করার মাত্রা ওঠানামা করতে পারে। যা থেকে অস্বস্তি আরও বাড়বে।
ফাস্ট ফুড এড়িয়ে যাবেন: প্রসেসড বা ফাস্ট ফুডে প্রচুর পরিমাণে ফ্যাট মজুত থাকে। তাই এ সব খেলে শরীরে জ্বালাপোড়া ভাব হতে পারে এবং নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যও বিঘ্নিত হতে পারে। তাই স্ট্রেসের সময় মুখ ফেরান ফাস্ট ফুড থেকেও।
শরীরচর্চা করতে পারেন: মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে রেস্তরাঁয় না গিয়ে, বরং শরীরচর্চায় মনোনিবেশ করতে পারেন। হাঁটাচলা, যোগাসন, ঘরোয়া ব্যায়াম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। মানসিক চাপ হাতের মুঠোয় রাখলে খাওয়া-দাওয়ার প্রতিও ঝোঁক কমবে।
আরটিভি/এফআই
মন্তব্য করুন