চলে এসেছে গরমের সময়। এ সময় অতিরিক্ত গরমে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়, যা শরীরে দুর্গন্ধ সৃষ্টি করে। শরীরের দুর্গন্ধ একটি সাধারণ সমস্যা, তবে অনেকের কাছেই এটি বিব্রতকর। তবে এই দুর্গন্ধের পেছনে শুধু গরম ছাড়াও খারাপ স্বাস্থ্যবিধি, অপরিষ্কার পোশাক এবং বিভিন্ন শারীরিক অবস্থা দায়ী হতে পারে। তবে, একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ যা বেশিরভাগ সময় উপেক্ষিত হয়, তা হলো শরীরে কর্টিসলের মাত্রা। উচ্চ কর্টিসল স্তর অতিরিক্ত ঘাম সৃষ্টি করতে পারে, যা শরীরে দুর্গন্ধের কারণ। জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন এনে এই হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
কর্টিসল কী?
কর্টিসল একটি স্ট্রেস হরমোন যা অ্যাড্রিনাল গ্রন্থি থেকে উৎপন্ন হয়। এটি শরীরের বিপাক, রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, এবং স্ট্রেসের প্রতি শরীরের প্রতিক্রিয়া পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে দীর্ঘসময় স্ট্রেস বা অন্যান্য কারণে কর্টিসলের মাত্রা বেড়ে গেলে, শরীরে অতিরিক্ত ঘাম, দুর্গন্ধ, ওজন বৃদ্ধি এবং হজমে সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই, জীবনযাপন এবং খাদ্যাভ্যাসে সঠিক পরিবর্তন এনে এই হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে তা করা যায়:
- সূর্যের আলোর সংস্পর্শে দিন শুরু করুন
সকালের সূর্যালোক শরীরে সার্কাডিয়ান রিদম এবং কর্টিসল উৎপাদনে সাহায্য করে। সূর্যালোক শরীরের সেরোটোনিনও বৃদ্ধি করে, যা সারাদিনের স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। প্রতি সকালে কমপক্ষে ১৫ মিনিট সূর্যের আলোতে থাকুন। - স্বাস্থ্যকর ফ্যাট দিয়ে দিন শুরু করুন
বাদাম এবং আখরোটের মতো স্বাস্থ্যকর ফ্যাট কর্টিসলসহ হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এই ধরনের খাবার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা এবং শরীরের সামগ্রিক স্বাস্থ্যকেও ভাল রাখে। - খাবারের আগে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিন
খাওয়ার আগে কয়েকবার গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং শরীরকে শিথিল করে। - ক্যামোমাইল চা পান করুন
ক্যামোমাইল চা চাপ কমাতে এবং কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। বিশেষ করে সন্ধ্যায় এটি পেটে আরাম দেয় এবং ভাল ঘুম নিশ্চিত করে। - ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
ম্যাগনেসিয়াম শরীরকে শিথিল করে এবং কর্টিসল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কলা, কুমড়ার বীজ, এবং বাদাম এই উপাদানে সমৃদ্ধ, যা চাপ কমাতে সাহায্য করতে পারে। - নিয়মিত ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান
ঘুমের অভাব কর্টিসল উৎপাদন বাড়ায়, যা মানসিক চাপের সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন যাতে শরীরের দুর্গন্ধ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। - সারাদিন হাইড্রেটেড থাকুন
পর্যাপ্ত পানি পানে শরীরের তাপমাত্রা এবং ঘাম নিয়ন্ত্রণে থাকে। ডিহাইড্রেশন শরীরের দুর্গন্ধ বাড়াতে পারে, তাই সারা দিন পর্যাপ্ত পানি পান করার চেষ্টা করুন।
এছাড়াও শরীরকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে সাহায্য করে আরও কিছু অভ্যাস। যেমন—
- সঠিক খাদ্যাভ্যাস মেনে চলা
খাবারের মাধ্যমে শরীরে দুর্গন্ধ আসতে পারে। অতিরিক্ত মসলাযুক্ত বা তেলযুক্ত খাবার এবং ভাজাপোড়া খাবার থেকে বিরত থাকুন। পানি বেশি করে পান করুন, এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সাহায্য করে। - ডিওডোরেন্ট এবং অ্যান্টি-পারস্পিরেন্ট ব্যবহার করা
শরীরের দুর্গন্ধ কমাতে ডিওডোরেন্ট বা অ্যান্টি-পারস্পিরেন্ট ব্যবহার করা অত্যন্ত কার্যকরী। এটি শরীরের গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে এবং দীর্ঘ সময় ধরে সতেজতা বজায় রাখে। - প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করা
এলাচ, তুলসী পাতা, বা লেবুর রস শরীরের গন্ধ কমাতে সহায়ক হতে পারে। এক কাপ গরম পানিতে এলাচের গুঁড়া দিয়ে পান করলে তাজা অনুভূতি আসে এবং দুর্গন্ধ কমে। - ভাল মানের সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করা
গোসলের সময় শরীরের সমস্ত অংশ ভালভাবে পরিষ্কার করার জন্য একটি ভাল মানের সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন। এতে দুর্গন্ধের কারণগুলি দূর হয় এবং শরীর সতেজ থাকে। - সুগন্ধি তেল বা স্প্রে ব্যবহার করা
শরীরের বিভিন্ন অংশে সুগন্ধি তেল বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করুন, কারণ এটি ত্বকের ক্ষতি করতে পারে। - মানসিক চাপ কমানো
মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ শরীরের ভেতরে বিভিন্ন হরমোনের পরিবর্তন ঘটাতে পারে, যা দুর্গন্ধের কারণ হতে পারে। নিয়মিত যোগব্যায়াম বা শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমে এবং শরীরের দুর্গন্ধও দূর হয়।
এই সহজ উপায়গুলো অনুসরণ করে শরীরের দুর্গন্ধ অনেকটা কমানো সম্ভব।
আরটিভি/জেএম