শিশুর পেটে ব্যথা হলে কী করবেন?
শিশুদের একটা খুব পরিচিত সমস্যা হচ্ছে পেটে ব্যথা। এটা অনেক কারণেই হতে পারে। তাদের শরীর সংবেদনশীল। এজন্য তারা খুব সহজেই নানান রোগে আক্রান্ত হয়। রোগ জীবাণুর সংক্রমণ ছাড়াও খাবার, পরিবেশ ও নানান কারণে এসব রোগব্যাধি হতে পারে। আরটিভি অনলাইন পাঠকদের জন্য এ বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন পুষ্টিবিদ ডা. আয়েশা সিদ্দিকা।
তিনি বলেন, বিভিন্ন কারণেই শিশুদের পেটে ব্যথা হতে পারে। ঠাণ্ডা, জ্বর, কাশি হলে সহজে বোঝা যায়। কিন্তু বদহজম হলে তা বুঝা কিছুটা কষ্টকর। বড়দের মতো শিশুরা শারীরিক সমস্যার কথা প্রকাশ করতে পারে না। পা টান টান করে কান্না করা, পেট শক্ত হয়ে যাওয়া, খাওয়ার পর কান্না করা, অতিরিক্ত নড়াচড়া ইত্যাদি লক্ষণ শিশুদের মধ্যে দেখা যায়।
শিশুর পেটে ব্যথার কারণ সম্পর্কে পুষ্টিবিদ ডা. আয়শা সিদ্দিকা মনে করেন, গ্যাসজনিত ব্যথা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাকস্থলীতে ভাইরাসের ইনফেকশন, খাবারে এলার্জি ছাড়াও ভ্রমণজনিত সমস্যায় শিশুর পেটে ব্যথা হতে পারে।
গ্যাসজনিত ব্যথা
শিশুদের বিভিন্ন রকমের খাবার খাওয়ানো শুরু করলে গ্যাসজনিত ব্যথা বেশ প্রচলিত। এছাড়া পাকস্থলীর পরিপাকনালীতে গাট মাইক্রোবায়োম নামক ব্যাক্টেরিয়াল কলোনি গড়ে উঠা সম্পূর্ণ হবার আগে (ভয় পাবেন না, এরা উপকারী ব্যাকটেরিয়া) এ সমস্যা দেখা দিতে পারে যা গাট ইমম্যাচিউরিটি নামে পরিচিত।
এ ধরনের ব্যথার ক্ষেত্রে শিশুর বুকে ও পিঠে হাত দিয়ে মালিশ করলে, তলপেটের দিকে চেপে ধরলে আরাম বোধ হয়। তবে ব্যথা প্রকট হলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়ে পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য
যেসব শিশু মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি সদ্য অন্য কঠিন খাবার খেতে শুরু করেছে তাদের পেটে ব্যথার অন্যতম কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য। দুই কিংবা তিনদিন ধরে ঠিকমতো পায়খানা না হলে তা পেটের ভেতর জমে থেকে ব্যথার সৃষ্টি করে। এজন্য শিশুকে নরম খাবার দিতে হবে। অবস্থা জটিল হলে শক্ত খাবারের পরিবর্তে তরল জাতীয় খাবার যেমন- সাগুদানা, মাতৃদুগ্ধ বেশি বেশি খাওয়াতে হবে। এছাড়া কিছু ব্যায়াম করানো যেতে পারে যেমন সাইকেলের মতো শিশুর পা দুটোকে চালনা করা।
খাবার কিংবা দুধে অ্যালার্জি
শিশুর কোনও খাবারে অ্যালার্জি থাকলে তা খাওয়ানোর ফলে পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, বমি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক শিশুর ক্ষেত্রে গরুর দুধ বা গুড়ো দুধের ল্যাক্টজেনের প্রতি অ্যালার্জি থেকে থাকে। অ্যালার্জি আছে বিষয়টা সন্দেহ হলে বা নিশ্চিত হলে তা খাওয়ানো বন্ধ করে দেয়া উচিত। এ ধরনের জটিলতায় অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ইনফেকশন
পাকস্থলীতে নানা ধরনের ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসজনিত কারণে ইনফেকশন দেখা দিতে পারে। এগুলোর মধ্যে আছে রোটাভাইরাস যা পেট ব্যথার সাথে ডায়রিয়ার কারণ।
এছাড়া স্ট্রেস্পটোকক্কাসনামক ব্যাকটেরিয়া, অ্যাডেনোভাইরাস, বটুলিজম এসবের মাধ্যমেও শিশু পেটব্যথা এবং পেটের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে। ইনফেকশনজনিত সমস্যায় বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী সঠিক চিকিৎসায় এসব ইনফেকশন পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়।
ভ্রমণজনিত অসুস্থতা
অনেক শিশুর মাঝেই ভ্রমণের ফলে খাওয়ায় অরুচি, বমিভাব, পেটব্যথা এসব লক্ষণ দেখা দেয়। এ ধরনের সমস্যায় শিশুকে ভ্রমণের চাপ কাটিয়ে উঠার জন্য সময় দিতে হবে। এছাড়া খেয়াল রাখতে হবে যাতে একেবারে খালি পেটে কোথাও ভ্রমণ করা না হয়।
ফিডের পর ঢেঁকুর তোলান
প্রতি খাওয়ানোর সেশনের পরে বাচ্চার ঢেঁকুর তোলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাচ্চাদের খাওয়ার সময় বাতাস গিলে ফেলার ঝোঁক থাকে। এই বায়ুটি আটকে যায় এবং তীব্র পেট ব্যথার কারণ হতে পারে। এটি এড়ানোর জন্য, শিশুকে সোজা অবস্থানে রাখুন এবং প্রতিবার খাওয়ানোর পরে আস্তে আস্তে তার পিঠে ও পেটে টোকা দিন।
হাঁটু বাঁকানোর মৃদু ব্যায়াম
শিশুদের পেট ব্যথা উপশম করাতে হাঁটু বাঁকানো বা ঠেলার ব্যায়াম খুব কার্যকর। বাচ্চাকে চিত করে শোয়ান এবং তার পাগুলোকে হাঁটুর দিকে বাঁকান এবং তারপর সেগুলোকে পেটের দিকে ঠেলুন। এই ব্যায়ামটি দিনে চার থেকে পাঁচ বার পুনরাবৃত্তি করতে পারেন।
এস/সি
মন্তব্য করুন