বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকা। প্রায় প্রতি বছরই ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস এ দেশের মানুষের জীবনকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এতে যোগাযোগব্যবস্থা, ঘর-বাড়ি, শস্যক্ষেত্র, গবাদিপশু ইত্যাদির ক্ষতির সঙ্গে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কাও থাকে। বন্যার সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটে থাকে। কখনও কখনও রোগগুলো মহামারি আকারও ধারণ করতে পারে।
এ সময় যেসব স্বাস্থ্য সমস্যা হয়
- ডায়রিয়া, কলেরা
- ডিসেন্ট্রি (আমাশয় ও রক্ত আমাশয়)
- টাইফয়েড
- ভাইরাল হেপাটাইটিস
- বুকের প্রদাহ : কফ, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস প্রভৃতি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।
- জ্বর : নানা রকম ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়াল জ্বর হয়ে থাকে।
- চর্মরোগ : যেমন- খোস পাঁচড়া, ছত্রাকঘটিত সংক্রমণ প্রভৃতি চর্মরোগ হয়ে থাকে।
- চোখের প্রদা হ: যেমন- কনজাংটিভাইটিস, আইরাইটিস ইত্যাদি।
- সর্প দংশন : নানান রকম সর্প দংশনের ঘটনাও ঘটে থাকে।
- বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া: বন্যার সময় শিশুরা অনেক সময় সাঁতার না জানার দরুন পানিতে ডুবে মারা যায়।
আমাদের করণীয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য ব্যবহার করা। বিশুদ্ধ পানি ও টাটকা খাবারই বিভিন্ন রোগ থেকে রক্ষা করতে পারে। পানিকে ছেঁকে কমপক্ষে আধাঘন্টা ফোটাতে হবে। তাছাড়া, ফিটকিরি, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দিয়েও পানি বিশুদ্ধ করা যায়। প্লেট, গ্লাস, হাত ভালো করে বিশুদ্ধ পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। বাসি বা নষ্ট খাবার পরিহার করতে হবে।
- পানিতে বেশি হাঁটা-চলা, গোসল করা পরিহার করতে হবে। এতে করে জ্বর, বুকের প্রদাহ, চর্মরোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- শিশুদের বিশেষ যত্ন নিতে হবে। অসাবধানতার কারণে পানিতে যাতে পড়ে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের শুষ্ক পরিবেশে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন অবস্থায় রাখতে হবে।
- ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে খাবার স্যালাইন খেতে হবে। ডায়রিয়া বা বমি বেশি হলে শিরায় স্যালাইন দিতে হবে। অতিমাত্রায় পাতলা পায়খানা, বমি হলে, রক্ত গেলে, জ্বর থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
- বৃষ্টি, ঝড়, বন্যার কারণে ঠান্ডা লেগে অনেকসময় কফ-কাশি, শ্বাসকষ্ট, জ্বর প্রভৃতি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে কিছু উপসর্গ নিরাময়ের ওষুধ সেবনের পরও উপকার না পেলে ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে।
- এ সময় চর্মরোগ দেখা দিলে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসকের সহযোগিতা নিতে হবে।
- সাপে কামড়ালে আক্রান্ত স্থানের উপরে মোটা কাপড় দিয়ে হালকা করে বেঁধে ক্ষতস্থান ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। আক্রান্ত স্থানের নড়াচড়া যাতে কম হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।