ঢাকাসোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২

জীবনের প্রথম সুপারহিরো ‘বাবা’

লামিয়া তানজিন মাহমুদ

রোববার, ১৮ জুন ২০২৩ , ১১:১৩ এএম


loading/img

‌‘পৃথিবীতে অনেক খারাপ মানুষ আছে, কিন্তু খারাপ বাবা একটাও নেই’ কথাগুলো কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

আজ ১৮ জুন, রোববার। ঘটা করে বিশ্বজুড়ে পালিত হবে একটা দিবস। দিবসের নাম বাবা দিবস।

কিছু বাবা যেন শুধু বাবা না, হিরো। ছোটোবেলায় যারা ছিলেন অনেকের দেখা প্রথম সুপারহিরো। যে সব পারে। মা বকেছে? বাবার কাছে বিচার। মা কোথাও যেতে দেয়নি, বাবার কাছে বিচার। মায়ের কাছে যতটা শাসন ঠিক তার উল্টো যেন বাবা। অনেকের বোধহয় এ কারণেই বাবা বেশি প্রিয়। অনেকের আবার বাবা মানেই ভীতি।

বিজ্ঞাপন

অপুর সংসার সিনেমাটি অনেকেই দেখে থাকবেন। মুগ্ধ করা দৃশ্যের পাশাপাশি সাবলীল সংলাপে আটকে আছে তখন থেকে এখনের দর্শকরাও। এমনকী অপু আর অপর্ণার সংসারের গল্পের অংশও আমাদের মুখস্ত কিন্তু সিনেমার শেষের দিকে অপুর সন্তানের কথা মনে পড়ে? ৫ বছরের একরত্তি এক ছেলে, কী সাহস নিয়ে বলে, ‘আমার বাবা আছে, কলকাতায়!’

অথচ সন্তান জন্মের পর থেকে ৫ বছর পর্যন্ত বাবা হিসেবে অপু কেবল টাকাটুকুই দিয়ে গেছে। শুধু অপু না, অপুর মতো অনেক বাবাই দায়িত্ব বলতে কেবল সংসারে টাকা দেওয়া বোঝেন। সন্তানের সাথে মনস্তাত্ত্বিক মিলের বিষয়টা বাবারা বোঝেন না। বয়স হতে হতে একাকীত্বে ডুবে যাওয়া বাবারা হয়তো হিসাব মেলে ধরেন একা হওয়ার। দায়িত্ব মানেই আর্থিক লেনদেন যে নয়, বরং মনেরও লেনদেন, এটা অনেক বাবারাই বুঝেন না, বুঝতে চানও না হয়তো।

এদিক থেকে অনেক সিনেমা কিংবা নাটকেও বাবা সন্তানের খুব সুন্দর সম্পর্ক দেখানো হয়েছে। বাবার সাথে সন্তানের যে বন্ধন এটা যেন মায়ের সাথে সম্পর্কের ঠিক উলটো। বাবা মানেই সাহস। ‘কীসের ভয়? বাবা আছে তো!’ এটুকু সান্ত্বনা যাদের কপালে জোটে তাদের হয়তো দুনিয়াকে আর ভয় পাওয়া লাগে না।

বিজ্ঞাপন

গর্বভরে অনেকেই বলেন ‘বাবাদের আবার দিবস কী? সবদিনই বাবাদের।’ অথচ চারপাশে নেপথ্যে থাকা কিছু বাবারা যেন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে প্রশ্ন করে ওঠে- 'আসলেই কি সবদিন বাবাদের?

বাবাদের তো খুব একটা কাঁদতে দেখা যায় না। তবে হ্যাঁ, ঘামতে দেখা যায়। ঘামে ভেজা শার্টটা বুঝিয়ে দেয় বাবাদের সারাদিনের ধকল। কেউ রিকশা চালিয়ে, ভ্যান কিংবা ঠেলাগাড়ি চালিয়ে সংসার চালান। ভাড়ার সামান্য এদিক-ওদিক হলে আমাদের অনেকে যাকে দুটো অকথ্য শব্দ শুনিয়ে দেন। তিনিও কারও না কারও বাবা। আবার কিছু বাবাদের দেখা যায় ভিক্ষা করতে। শীর্ণকায় তনু যে ওজন বহন করতেই পারছে না, অথচ দণ্ডায়মান সে তনু হাত পাতছে আমাদের দুয়ারে। কেউ দয়াপরবশ হয়ে হাত ভর্তি করে দেন, কেউ খালি হাত ফিরিয়ে গলায় সুর তোলেন ‘আহারে, দেশটায় ভিক্ষুকের সংখ্যা আর কমলো না...’।

বাবাদের সংখ্যা কম নেই এ শহরে, নগরে, গ্রামে বা দেশ ছাড়িয়ে মহাদেশে। আরও এক জায়গায় বাবাদের পাওয়া যায়। বৃদ্ধাশ্রমে। ঘটা করে বাবা দিবস পালন করা দেশগুলোতে বৃদ্ধাশ্রম থাকার কথা না থাকলেও আছে। এবং সেখানে বাবারাও আছে। অপেক্ষায় আছে সন্তানের ফিরে আসার।

মাঝে মাঝে সংবাদপত্রসহ মিডিয়াগুলো ফলাও করে ছাপে 'সম্পত্তির জের ধরে সন্তানের হাতে পিতা খুন! অমুক কারণে সন্তান পিটিয়েছে বাবাকে!' এ ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন বললেও বিরলের তালিকায় কিন্তু মোটেও ফেলা যাবে না। ঘটনা ঘটেছে, ঘটছেও। যাদের সাথে ঘটছে তারা কারও না কারও বাবা।

তবুও বছর ঘুরে বাবা দিবস আসবে। লেখালেখি চলবে। বাবা নিয়ে অনেক কল্পকথার গল্প চলবে। তারপর দিনশেষে তারিখটা হয়ে যাবে কেবলই জুন মাসের তৃতীয় রোববার হিসেবে।

 

লেখক:  কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, ডিজিটাল অ্যান্ড সোশ্যাল মিডিয়া, আরটিভি 

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |