ঢাকাসোমবার, ১৬ জুন ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

আজ চকলেট খাওয়ার দিন

লামিয়া তানজিন মাহমুদ

বুধবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ১২:৫৯ পিএম


loading/img

আজকাল রাস্তায় বেরোলেই মন-মেজাজের বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা হয়ে যায়। ডানে-বায়ে তাকিয়ে বিশাল গাছের শাখা-প্রশাখা না দেখে এর বদলে লতানো কুমড়োর চারা, পুঁই-ডগা, নয়নতারা কিংবা পর্তুলিকার চারা দেখে চিন্তায় মাথা চুলকাতে হয়। এত বিশাল জনসংখ্যার শহরে অক্সিজেনের চাহিদা এইটুকুন গাছ সামাল দিতে পারবে তো!

বিজ্ঞাপন

চিন্তার এখানেই শেষ নয়। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে ডানে-বায়ে মাথা ঘোরাতে পারলেও যে যানবাহনে চড়ে আপনি গন্তব্যে পৌছাবেন, তার হয়তো নড়ে ওঠার সাধ্যিও নেই। যে জ্যাম! বুকভরে ‘ফ্রেশ এয়ার’ টানার বদলে ময়লার গন্ধ, গাড়ির কালো ধোঁয়া টেনেই আপনাকে খুশি থাকতে হবে। এই জ্যামে হয়তো সেটাও সম্ভব নয়। কী করবেন যখন খুঁজে পাচ্ছেন না, তখন হয়তো মন চাইবে ঊর্দ্ধাকাশে তাকিয়ে এই শরৎ-হেমন্তের শুভ্র-নীলাভরঙা মেঘের খেলা দেখে সময় পার করতে। কিন্তু আশ্চর্য! আপনি সেটাও করতে পারছেন না কারণ বহুকাল আগেই আকাশ ঢেকে গেছে বহুতল দালানে। সামান্য ফাঁক-ফোকর দিয়ে যতটা আকাশ দেখার সুযোগ ছিল সেটাও ঢেকে দেওয়ার একটা প্রয়াস চালাচ্ছে দুমড়িয়ে মুচরিয়ে থাকা কালো তারের গোলক।

তিরতির করে পারদের মতো ঊর্দ্ধমুখী হবে আপনার মেজাজ। এই মেজাজ নিয়ে ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে বিরক্তিকর জ্যাম ঠেলে যখন অফিসে আসবেন, তখন দেখবেন বস দাঁড়িয়ে আছেন ঝাড়ি দেওয়ার জন্য। কেমন লাগবে?

বিজ্ঞাপন

পরিসংখ্যান জানাচ্ছে, চকলেট আপনার মেজাজ নিয়ন্ত্রণে দারুণ কাজ করে। একে বলা হয় ‘মুড বুস্টার’। জীবনে ঝড়-ঝাপটার তো কমতি নেই, তাই বলে মেজাজের পারদকে কি তুঙ্গে উঠিয়ে রাখতে হবে? চকলেট চিবাতে থাকুন, সমস্যাগুলোকেও চিবিয়ে খেয়ে ফেলুন। বড়ো বড়ো মনীষীরাও বলেন সমস্যা নিয়ে বেশিক্ষণ মাথা না ঘামাতে বরং সমাধানের দিকে ‘ফোকাস’ করতে।

আজ সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ। আন্তর্জার্তিক চকলেট ডে। মাঝে মাঝে মুখে একটু স্বাদের পরিবর্তন দরকার হয়, পাশাপাশি দরকার হয় ‘মুড’-এর পরিবর্তনও। ধরুন কাউকে অপেক্ষা করিয়ে রেখেছেন, সে রেগেমেগে বোম হয়ে আছে কিংবা কারও কোন বিশেষ কিছু, আপনি কোন কারণে হয়তো ভুলে গেছেন, কী করবেন? গোটাকয়েক চকলেট উপহার দিন। সাথে যদি কিছু ফুল আর একটা চিরকুট জুড়ে দিতে পারেন তো সোনায় সোহাগা।

সবাই কি চকলেট পছন্দ করেন? অবশ্যই না। তবে সে সংখ্যাটা খুবই সামান্য। বেশিরভাগ মানুষের পছন্দের তালিকায় চকলেট কিন্তু শুরুর দিকে। শিশুদের পর এই ‘বেশি’ সংখ্যাটা নারীদের।

বিজ্ঞাপন

অনেকে সকালে খেতেই পারেন না। চকলেটটা তাদের জন্য দারুন একটা সুপারফুড। দিন যত যাচ্ছে চকলেট তৈরিতে নানান ধরণের পরিবর্তন আসা শুরু হয়েছে। স্বাদেও যুক্ত হয়েছে মজাদার অনুভূতির। চকোলেট ক্যান্ডি, কেক, ব্রাউনিজ, কুকিজ, কাপকেক, আধা-মিষ্টি বা দুধের চকোলেট কোনটা ছেড়ে কোনটার নাম বলবো? বাদ যায়নি আইসক্রিমও। শরীরের চর্বি পোড়ানো বলেন কিংবা সারাদিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমানো বলেন, দুটোতেই কিন্তু চকলেট বেশ পারদর্শী। এ কারণেই হয়তো অনেকের কাছে এই চকলেট একটা ‘অবসেশন’-এর নাম।

বিজ্ঞাপন

ধারণা করা হয় চকলেট গাছ খুব আদিমতম উদ্ভিদের একটি। হয়তো কেউ দেরিতে আবিষ্কার করেছে গাছটি কিংবা এই গাছ কী ব্যবহারে কাজে লাগে সেটা জানা ছিল না, যে কারণে ৪০০০ বছর আগেও কেউ জানতো না এই চকলেট গাছের আত্মকাহিনি।

চকলেট গাছের ফলকে কোকো বিন বলে, এই কথা এখন আর অজানা নেই তেমন কারও। একটা সময় এই কোকো বিনকে পানীয় হিসেবে ব্যবহার করা হতো। চকলেট বানানোর কথা ভাবেইনি কেউ। অনেকে আবার একে ব্যবহার করতেন ঔষধ হিসেবে।

প্রাচীন দুই প্রজাতি, অ্যাজটেক এবং মায়ানরাও ব্যবহার করতো এই কোকো বিনকে। অ্যাজটেকরা এই কোকো বিনকে ব্যবহার করতো মুদ্রা হিসেবে। লেনদেন সহজ ছিল এই মুদ্রা ব্যবহারে। তাছাড়া ব্যবসা করে ভালো মুনাফা পাওয়ার কারণে এই কোকো তাদের কাছে খুব মূল্যবান হয়ে উঠেছিল। আর মায়ানরা এই কোকোর নাম দিয়েছিল “drink from the gods” মানে দেবতার কাছ থেকে এই পানীয় এসেছে বলে ধারণা ছিল তাদের। এছাড়াও যুদ্ধের সময়ে কোকো বিন দিয়ে বানানো পানীয় উদ্দীপক হিসেবে কাজ করত বলে বেশ গুরত্ব ছিল চকলেট গাছের।

১৬০০ শতকের সময়ে ইউরোপে ঢুকে যায় চকলেটের বিষয়টি। যদিও স্প্যানিশরা চাচ্ছিলেন একটু রাখঢাক বজায় রাখতে। চকলেটের মতো দারুণ এই পানীয়কে কোনভাবেই দুনিয়ার সামনে আনতে চাননি তারা। কিন্তু গোপন থাকেনি। এরপর তো চলেই এলো চকলেট প্রেস। ১৮০০ দশকের মাঝামাঝি ইউরোপেই চকলেট কোম্পানিগুলো চকলেট বানানো শুরু করে। নেসলে, জে.এস. ফ্রাই অ্যান্ড সন্স এবং লিন্ডট এর মতো কোম্পানিগুলি ওই সময়েই চালু হয়েছিল। পরবর্তীতে হার্শে, ক্যাডবেরি, মার্স এর মতো আরও অনেক কোম্পানি যাত্রা শুরু করে।

অনেকের পছন্দ মিল্ক চকলেট। এজন্য সুইজারল্যান্ডের ড্যানিয়েল পিটারকে একটা ধন্যবাদ দিতেই হয়। ১৮৭৫ সালে তার কারণেই প্রথম মিল্ক চকলেট বাজারে আসে।

এবার সময় একটু সুর বদলের। নিজে যা খান, শখ করে পোষা প্রাণিকেও তাই খাওয়াতে চান অনেকে। বিশেষ করে কুকুরকে। মাংস, ভাত, ফল যা-ই খাওয়ান, ভুলেও চকলেট যেন খাওয়াতে যাবেন না। অনেক কুকুরেরই চকলেট হজম হয় না। আবার চকলেটে থাকা সব উপাদান কুকুরের জন্য ভালোও নয়। আরও একটা ব্যাপার, বেশি চকলেট খাওয়া অনেকক্ষেত্রেই কোষ্ঠকাঠিন্য সৃষ্টি করে। কারণ চকলেট হজম প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। এ কারণে খেয়াল করে দেখবেন, চকলেট খেলে অনেকক্ষণ ক্ষুধা লাগে না। সর্বশেষ তথ্যটি হলো- চকলেটেও ক্যাফেইন আছে। চকলেট যত গাঢ়, ক্যাফেইন তত বেশি।

মোদ্দা কথা, পরিমাণ বুঝে একটু আধটু চকলেট আপনি খেতেই পারেন। এতে দোষ নেই। হয়ত চকলেট দেওয়ার কেউ নেই, তাতে কী? নিজেকে নিজে উপহার দেওয়াটা কিন্তু মন্দ না। একটু সময় করে খুব ছোটোখাটো কিছু মূহুর্ত আপনি পালন করতেই পারেন। নিজেকে ভালোবেসে একটা ফুল, চকলেট দিতেই পারেন। এই যে নিজেকে একটু ‘বিশেষ কেউ’ ভাবা, এটা কিন্তু খারাপ না। জীবন তো একটাই, কাটুক না কিছু উদযাপনে; ক্ষতি কী?

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, আরটিভি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৬-২০২৫ | RTV Online |