আরও একবার ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর এবং তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ইসলাম পরিপন্থি বক্তব্য প্রদান ও ধর্ম অবমাননা অভিযোগ এনেছেন নেটিজেনরা। সম্প্রতি গণঅধিকার পরিষদে ভাঙ্গনের কারণে আরও একবার সামনে আসে নুরের ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ সংশ্লিষ্ট সমালোচিত নাম মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়টি। তার এই বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য করায় নুর সরাসরি আক্রমণাত্মক মন্তব্য করে বসেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদানের বিরুদ্ধে। আর তাতেই আবারও নুরের বিরুদ্ধে ইসলাম পরিপন্থি ও ধর্ম অবমাননার অভিযোগ করেন নেটিজেনরা।
বাংলাদেশ তার জন্মলগ্ন থেকেই ফিলিস্তিনকে সমর্থন দিয়ে এসেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি যেই সমর্থন প্রদান করেছিলেন তা এখনও বলবৎ রেখেছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমনকি জাতিসংঘের সর্বশেষ অধিবেশনেও ফিলিস্তিনের মানুষের পক্ষেই ভোট দিয়েছে বাংলাদেশ। এ বিষয়টিকে স্বরণ করিয়ে দিয়ে জানুয়ারি মাসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান বলেছিলেন, বাংলাদেশের ৯০ ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। আর এই ৯০ ভাগ মানুষকে বাদ দিয়ে কেউ যদি ইসরাইলের সহায়তায় বড় রাজনীতিবীদ হয়ে যেতে চান, এটা তার বিষয়। অবশ্য বাংলাদেশের মানুষের প্রতি পূর্ণ আস্থা আছে এবং ৯০ ভাগ জনগণ এমন কিছু মেনে নেবে না বলেও দৃঢ় বিশ্বাস পোষণ করেন তিনি।
এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ইসরাইলের মোসাদ সংশ্লিষ্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে নুরের একটি ছবি ভাইরাল হবার প্রেক্ষাপটে ধর্ম অবমাননা ও রাষ্ট্রদোহিতার অভিযোগ ওঠে নুরের বিরুদ্ধে। এ সময় নুর ছবিটিকে 'ভুয়া' বলে প্রচার করলেও বিভিন্ন ফ্যাক্ট চেকের মাধ্যমে ছবিটির সত্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত করেন অনেকেই। কিন্তু সম্প্রতি নুরের কাছে গণ অধিকার পরিষদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা ফান্ড এবং তার হিসেব চেয়ে বসেন দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া। কিন্তু খরচের হিসেবে না দিয়ে উল্টো রেজা কিবরিয়ার বিরুদ্ধে 'সরকারের দালাল' ও 'মাতাল' বলে অভিযোগ তোলেন নুর। বিষয়টিকে কেন্দ্র করে নুরের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন রেজা কিবরিয়া। সেই সঙ্গে বেরিয়ে আসতে থাকে এ সম্পর্কিত নানা তথ্য প্রমাণ। এরই প্রেক্ষিতে নুরের বিরুদ্ধে ইসরাইলি গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তির কাছ থেকে অর্থ গ্রহণের অভিযোগ করেন রেজা কিবরিয়া। পক্ষান্তরে রেজা কিবরিয়াকে সিআইএ-এর এজেন্ট বলে সম্বোধন করেন নুর ও তার সমর্থকেরা। এদিকে নুরের এমন আচরণের কারণে গণ অধিকার পরিষদের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়। অনেকেই নুরের ইসরাইলি সংযোগ ও প্রবাসীদের কাছ থেকে অর্থ গ্রহণ করে তা ফেরত না দেয়ায় নুরের বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলেন। নুর অবশ্য এই সকল প্রশ্ন তোলা ব্যক্তিকে 'সরকারের দালাল' এবং 'বিপথগামী' হিসেবে অ্যাখ্যায়িত করেন।
এর আগে চলতি বছর জানুয়ারি সামাজিত যোগাযোগ মাধ্যমে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুর ও ইসরাইলি গোয়েন্দা সম্পৃক্ত মেন্দি এন সাফাদির ছবি ছড়িয়ে পড়লে তাকে 'এডিটেড' ও গুজব বলে প্রচার শুরু করেন নুরের সহযোগীরা। এ সময় বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বৈজ্ঞানিকভাবে ছবিটি যে এডিট করা নয় তার প্রমাণ প্রদান করেন এবং প্রকাশ করেন তার ফেসবুক পেজে। এর প্রক্ষিতেও ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতার প্রমাণের বিরুদ্ধে যুক্তি প্রদানের বদলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বসেন নুর। তবে এ ঘটনার প্রায় ৫ মাস পর গণ অধিকার পরিষদে অর্থ কেলেঙ্কারি নিয়ে ফাঁটল দেখা দিলে দলটির আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া এবং একাধিক নেতা কর্মীর মুখ থেকে নুরের সঙ্গে মোসাদের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত মেন্দি এন সাফাদির বৈঠকের তথ্যটি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সেই সঙ্গে এর আগে বারবার বিষয়টিকে গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া নুর ও তার সহযোগিদের কথাগুলো যে সঠিক ছিলো না তা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়।
সম্প্রতি নুরের মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান। তিনি জানান, নুরের সঙ্গে সাফাদি একাধিকবার দেখা করেছেন। তিনি এ সময় দেশগুলোর নামও জানান। সেই সঙ্গে জানান, ফিলিস্তিন তার মতো করে খোজ খবর নিয়ে নুরের এই বৈঠকগুলোর সত্যতা পেয়েছে।
এরপরই ফিলিস্তিনের এই রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে 'এজেন্সির টাকা খেয়ে বক্তব্য প্রদান'-এর অভিযোগ করেন নুর। বিষয়টিকে মুসলিমদের জন্য মানহানীকর বলে বর্ণনা করছেন অনেকেই। নুরের বিভিন্ন পোস্টের মন্তব্য ঘরে দেখা যায় নেটিজেনদের এ বিষয়ক আলোচনায় নুরের বিরুদ্ধে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। শুধু নুর নয়, নুরের পক্ষ বক্তব্য রাখা নেতা-কর্মী ও সুশীল সমাজের বেশ কয়েকজনের নাম উল্লেখ করে নেটিজেনরা লেখেন, এ দেশের মানুষ বুকে ধারণ করে ফিলিস্তিনের মানুষকে। সেই দেশের রাষ্ট্রদূত সম্পর্কে এভাবে মন্তব্য কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।
অপর এক নেটিজেন লেখেন, ৯০ শতাংশের মুসলিমের দেশে ইসরাইলের সঙ্গে বৈঠক করে এবং ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতকে এভাবে গালি দিয়ে নুরুল হক নুর কী প্রমাণ করতে চায়? মাথায় টুপি দিলেই মুসলিম হওয়া যায় না।
নুরুল হক নুর মুসলিমদের আবেগ নিয়ে খেলছে বলেও অভিযোগ করেন অনেকে। ফেসবুক পোস্টে লেখেন, মাথায় টুপি পরে ইসলাম রক্ষাকারীর ভাব নেয় নুর। আর লুকিয়ে দেখা করে, টাকা নেয় ইসরাইলের কাছ থেকে। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের মানুষের আবেগকে নিয়ে এভাবেই খেলা করছে নুরেরা।
নেটিজেনেরা নুরের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট করেন, এভাবে যদি ইসরাইলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ের মতো থলের বিড়াল বাহিরে বের হয়ে আসে, তাহলে সরকার পতনের ডাক কিভাবে দেবে তারা!
এর আগে ইসরাইলি গোয়েন্দার সঙ্গে বৈঠকের পক্ষে সাফাই গাইতে দেখা যায় নুরকে। তিনি এ সময় বলেন, মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে দেখা হয়েছে তো কি হয়েছে? মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তাতে কি। বাংলাদেশের আইনে কি কোথাও বলা আছে ছবি তোলার আগে সরকারের পারমিশন নিবে আদালতের অনুমতি নেবে। গোয়েন্দাদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নেবে। তবে আপনারা কেন অতি উৎসাহী অতি কথন গল্প রচনা করছেন।
পৃথক এক লাইভে বিএনপি নেতা আসলামের সঙ্গে ইসরাইলের নাগরিক মেন্দি এন সাফাদির বৈঠকের বিষয়টিকে সমর্থন করে তিনি বলেন, আসলাম চৌধুরীর মতো একজন নেতা বিএনপির মতো একটি দল যারা একাধিকবার ক্ষমতায় ছিল তাদের দলের একটা যুগ্ম মহাসচিব লেভেলের লোক। তার সঙ্গে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার মিটিং হতেই পারে। সেজন্য সরকার তো তাকে গ্রেফতার করতে পারে না।’
এসময় বিএনপির সমালোচনা করে গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব বলেন, ‘বিএনপিও এ বিষয়টি নিয়ে নীরব ভূমিকা পালন করেছিল। সেটা বিএনপির উচিত হয়নি। তাদের দলের একজন নেতা, তার পক্ষে বিএনপির অবস্থান থাকা উচিত ছিল।’
সর্বশেষ গণমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া জানান, অর্থের হিসেব না দেয়ায় নুরের সঙ্গে এই ঝামেলা হয়েছে।