৩ ধর্মের মানুষদের জন্য পবিত্রতম স্থান রহস্যময় আদম পাহাড়
শ্রীলঙ্কার আদম পাহাড়, যা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য পবিত্রতম স্থান। বলা হয় এই পাহাড়েই হজরত আদম (আ.) বেহেশত থেকে অবতরণ করেছিলেন। যেহেতু এটা মুসলামানদের পবিত্র স্থান তাহলে এ পাহাড়ে মন্দিরই বা কেন আবার ৩ ধর্মের মানুষদের জন্য পবিত্রতম স্থানই বা কী কারণে হলো। কী রয়েছে এই রহস্যময় পাহাড়ে এবং কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে এই মন্দিরে যে ছবি থেকে ভিডিও ধারণ করার ওপর রয়েছে কড়াকড়ি নিষেধাজ্ঞা! চলুন সেই রহস্য উন্মোচন করার চেষ্টা করি।
আদম পাহাড়, যেখানে এক বিরাট আকারের পায়ের ছাপ, যা যুগ যুগ ধরে রহস্যে ঘেরা। এই পায়ের ছাপ মুসলমানদের কাছে নবি হজরত আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন হিসেবে পরিচিত, যা তিনি প্রথম পৃথিবীতে পদার্পন করেছিলেন। কিন্তু এর পাশাপাশি, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং হিন্দুরাও এই পদচিহ্নকে তাদের ধর্মের অংশ হিসেবে মনে করেন।
ভেবে দেখেছেন, সেই প্রথম মানব আদম (আ.)-কে যেখানে নামানো হয়েছিল, সেই পবিত্র স্থানটি আজও কত রহস্যময় ও মায়াময়? শ্রীলঙ্কার আদম পাহাড়, এমন এক জায়গা, যা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ধর্ম, ইতিহাস আর কিংবদন্তির আখ্যান হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
শ্রীলঙ্কার দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তে শ্রীপাডা প্রদেশের এই পাহাড়টি শুধু তার পায়ের ছাপের জন্য নয়, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও বিখ্যাত। সবুজে ঘেরা এই পাহাড়ের চারদিকে ছোট নদী ও পাহাড়ি ঝর্ণার সৌন্দর্য মানুষকে মুগ্ধ করে। এই রহস্যময় পায়ের ছাপের আকার ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি দীর্ঘ এবং ২ ফুট ৬ ইঞ্চি চওড়া। বৌদ্ধ ধর্মমতে, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দে এই পদচিহ্ন আবিষ্কৃত হয় এবং তারপর থেকে এটি হাজারো পর্যটকের গন্তব্যস্থল হয়ে ওঠে।
মুসলমানদের কাছে এটি হজরত আদম (আ.)-এর পদচিহ্ন হিসেবে শ্রদ্ধা পায়, কারণ তারা বিশ্বাস করেন যে, পৃথিবীতে প্রথম পা রাখার সময় তিনি এই পাহাড়েই পদার্পণ করেছিলেন। কিন্তু বৌদ্ধরা মনে করেন, এটি বুদ্ধের বাম পায়ের চিহ্ন, আর হিন্দুরা একে শিবের পদচিহ্ন হিসেবে পূজা করেন। খ্রিস্টানদের ধারণা, এটি সেইন্ট থমাসের চিহ্ন, যিনি এই পাহাড় থেকে স্বর্গে যাত্রা করেন।
এই পাহাড়ে আরোহণ করা কিন্তু মোটেও সহজ নয়। জঙ্গলের ভেতর দিয়ে আঁকাবাঁকা পথ, বিষধর সাপ এবং পাহাড়ের খাড়া ধাপ সব মিলিয়ে চূড়ায় পৌঁছানো বেশ কঠিন কাজ। চূড়ায় পৌঁছাতে প্রায় ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা সময় লাগে, যেখানে ৪০০০ ধাপের একটি ধাতব সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। তবে যারা এই চূড়ায় পৌঁছাতে পেরেছেন, তারা সেই বিশাল পদচিহ্ন দেখে বিস্মিত হয়েছেন। আর এই পায়ের ছাপ বছরের মাত্র তিন থেকে চার মাসই স্পষ্ট দেখা যায়, বাকি সময় এটি মেঘের আড়ালে লুকিয়ে থাকে।
অনেক ইতিহাসবিদ ও পর্যটক এই রহস্যময় পাহাড় নিয়ে লিখেছেন। মারকুস অকসল্যান্ডের বই ‘দ্য স্যাক্রেট ফুটপ্রিন্ট’ এ বলা হয়েছে, আদম পাহাড়ের উচ্চতা ২ হাজার ২৪৩ মিটার এবং এটি এমন এক জায়গায় অবস্থিত, যা ভারত মহাসাগর থেকে পরিষ্কার দেখা যায়। আসলে আদম পাহাড় শুধু একটি জায়গা নয়, এটি সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া নানা কাহিনি, কিংবদন্তি, আর ধর্মীয় বিশ্বাসের এক সমাহার। যারা এখানে ওঠার সাহস দেখায়, তারা শুধু পাহাড় জয় করেন না; তারা যেন অতীতের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যান।
আরটিভি/এফআই-টি
মন্তব্য করুন