টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট মানেই ব্যাটিংয়ে নেমে বোলারকে দাপট দেখিয়ে দ্রুত রান তোলা। কারণ, সংক্ষিপ্ত সংস্করণের এই ফরম্যাটে উইকেটে গিয়ে সময় নিয়ে খেলার সুযোগ থাকে খুবই কম। ফলে ইনিংসে আক্রমণ করতে হয় শুরু থেকেই। বাংলাদেশ দলের আক্রমণাত্বক ব্যাটিং করেন এমন একজন তরুণ আফিফ হোসেন। এবার এই বাঁহাতি ব্যাটারের সামর্থ্যে মুগ্ধ হয়েছেন টাইগার দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরাম।
আফিফের বাংলাদেশ দলে কার্যকারিতা বোঝাতে অস্ট্রেলিয়ান হার্ডহিটার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের সঙ্গে তুলনা করেছেন শ্রীরাম। মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি আফিফকে নিয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। সেখানে তার আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য নিয়ে মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট।
ভিডিওতে শ্রীরাম বলেন, প্রথম বল থেকে মেরে খেলার সামর্থ্য আছে তার (আফিফ)। আমি তাকে সব সময়ই আমাদের গ্লেন ম্যাক্সওয়েল বলে ডাকি। মাঠে গিয়ে সে ম্যাচের গতি খুব দ্রুত বদলে দিতে পারে। ছন্দ খুঁজে পেতে সে খুবই কম বল নেয়। উপমহাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যা খুবই অনন্য গুণ। আমরা তাকে এমন খেলতে উৎসাহিত করি।
ওই ভিডিওতেই আফিফ সম্পর্কে নিজের ভাবনা তুলে ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজও। আফিফের ব্যাটিং সামর্থ্য বোঝাতে গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলা একটি ওয়ানডে ম্যাচের উদাহরণও টানেন এই স্পিনিং অলরাউন্ডার।
চট্টগ্রামের ওই ম্যাচে আফগানদের ২১৫ রান তাড়ায় পঞ্চাশের আগে ৬ উইকেট হারিয়ে বড় হারের শঙ্কায় পড়েছিল বাংলাদেশ। আফিফ ও মিরাজ মিলে অবিশ্বাস্য ব্যাটিং উপহার দিয়ে ওই ম্যাচে দলকে জেতান।
সাতে নেমে ১ ছক্কা ও ১১ চারে ৯৩ রান করেন আফিফ। ৯ চারে ৮১ রান আসে মিরাজের ব্যাট থেকে। দুজনে গড়েন ১৭৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ওয়ানডেতে সপ্তম উইকেটে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ জুটি। সে বেশ আত্মবিশ্বাসী থাকে। আমাদের দলের সবচেয়ে কনিষ্ঠ ক্রিকেটার সে। সবসময় শট খেলতে পছন্দ করে। সে খুবই তৎপর ক্রিকেটার, সবসময় রানের খোঁজে থাকে।
‘আফগানিস্তানের বিপক্ষে আমাদের সম্ভবত ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ে গিয়েছিল। আমি ও আফিফ ১৭৯ (১৭৪) রানের জুটি গড়ি। আমার ও আফিফের জন্য দারুণ একটি মুহূর্ত ছিল সেটি।’
বাংলাদেশ দলের বোলিং বিভাগের নেতা তাসকিন আহমেদের কাছে আফিফের ব্যাটিং দেখা রোমাঞ্চের। দেশের ক্রিকেটের কিংবদন্তিদের একজন হওয়ার সামর্থ্য ২৩ বছর বয়সী আফিফের মাঝে দেখেন এই পেসার।
‘যখন আফিফ ব্যাটিং করে, দেখতে দারুণ লাগে। কারণ তার হাতে অনেক শট আছে। আমি আশাবাদী, সে যদি ভালো খেলতে পারে, একদিন বাংলাদেশের কিংবদন্তিদের একজন হবে।’
শতভাগ দক্ষ হতে না পারলেও আগ্রাসী ব্যাটিংয়ের ছাপ রয়েছে আফিফের মধ্যে। যেখানে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ম্যাক্সওয়েলের স্ট্রাইক রেট ১৫০.৫৭, সেখানে ৫৮ ম্যাচ খেলে আফিফের স্ট্রাইক রেট ১২০.৯৪।
তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এটা মোটেও খারাপ নয়। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে ২০ ইনিংস বা এর বেশি ব্যাটিং করাদের মধ্যে ১২০ স্ট্রাইক রেটের বেশি আছে কেবল ছয় জনের, তার একজন আফিফ।
বিশেষ করে, আফিফ এখন নজর কাড়ছেন মিডল অর্ডারের দায়িত্ব পালন করে। পাঁচ-ছয়ে নেমে দলের হাল ধরার পাশাপাশি দ্রুত রান তোলার কাজ করছেন তিনি।
পাঁচ নম্বর পজিশনে এখন পর্যন্ত ১৭ ইনিংস খেলে আফিফের স্ট্রাইক রেট ১৩১.১৯। এই পজিশনে বাংলাদেশের হয়ে একাধিক ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার স্ট্রাইক রেটই সর্বোচ্চ।
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে এখন পর্যন্ত তিনটি ফিফটি করেছেন আফিফ। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৭ রান করেন তিনি গত সেপ্টেম্বরে, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে। ৫৫ বলের ইনিংসে মেরেছিলেন ৩ ছক্কা ও ৭ চার।
নিজের প্রথম ফিফটি ছোঁয়া ইনিংস খেলেন আফিফ ২০১৯ সালে। মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২৮ বলে ১ ছক্কা ও ৮ চারে করেছিলেন ৫২। গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩৮ বলে দুটি করে ছক্কা-চারে খেলেছিলেন ৫০ রানের ইনিংস।
চলতি বিশ্বকাপেও ছোট তবে কার্যকর দুটি ইনিংস খেলেন আফিফ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুটি করে ছক্কা-চারে করেন ২৭ বলে ৩৮। পরে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ১৯ বলে ২৯ রান করেন একটি করে ছক্কা-চারে।
উল্লেখ্য, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে টিকে থাকার ম্যাচে আজ অ্যাডিলেটের ওভালে ভারতের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। এই ম্যাচেও আফিফের ব্যাটিংয়ের দিকেই চেয়ে থাকবে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকরা।