লাতিন আমেরিকার অন্যতম ফুটবল পরাশক্তির দেশ ব্রাজিল। যুগে যুগে এই দেশে তৈরি হয়েছে পেলে, জিকো, রবার্তো কার্লোস, রিভালদো, রোনালদো, রোনালদিনহো, কাকার মতো বিশ্বমানের তারকা। এসব তারকাদের হাত ধরেই রেকর্ড পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন সেলেসাওরা। সেসব কিংবদন্তিদের দেখানো পথে গত এক যুগ ধরে নিজেকে প্রমাণ করে চলেছেন নেইমার জুনিয়রও।
এরই মধ্যে ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ড থেকে দুই ধাপ পিছনে রয়েছেন তিনি। তবে বিশ্বকাপের মঞ্চে গেলেই যেন ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার ভড়কে যান। অন্তত অতীতের ২০১৪ ও ২০১৮ বিশ্বকাপ ইতিহাস নেইমারের জন্য সেই কথাই বলে। কিন্তু আগের সেই হতাশা থেকে শিক্ষা নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারে নিজের সেরা ফর্ম প্রমাণে অনেক দিন থেকেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন ৩০ বছর বয়সী এই ফরওয়ার্ড।
২০১৭ সালে বার্সেলোনা থেকে ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে যোগ দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফুটবলার বনে যায় নেইমার। কিন্তু কখনো কখনো প্রত্যাশার চাপ ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তবে এই ফর্মহীনতার একটি মূল কারণ ছিল ইনজুরি। নিজ দেশ ব্রাজিল বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়েছিলেন। আবার ক্লাব ক্যারিয়ারে পিএসজিতে যোগ দেবার পর ইনজুরির মিছিলে নিয়মিত ছিলেন তিনি।
যার কারণে সম্প্রতি নেইমার নিজেও জানিয়ে দিয়েছিলেন কাতার বিশ্বকাপই বিশ্বমঞ্চে তার শেষ আসর হতে যাচ্ছে। ওই সময়ে মূলত সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে ধরে রাখতে লড়াই করা নেইমার অনেকটাই হতাশা থেকেই এই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। চলতি মৌসুমের শুরু থেকে ফর্ম ও শারিরীক ভাষায় নেইমার অন্তত এটুকু প্রমান করেছে বিশ্ব মঞ্চে ব্রাজিলীয় সমর্থকরা নি:সন্দেহে তাদের প্রিয় তারকাকে অন্যরূপে দেখতে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যেই ফরাসি চ্যাম্পিয়ন পিএসজির হয়ে ১৯ ম্যাচে ১৫টি গোলও করে ফেলেছেন নেইমার। শুধু গোল নয়, সতীর্থ লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দিয়ে করিয়েছেন বেশ কিছু গোল। যার কারণে ২০০২ সালে সবশেষ বিশ্বকাপজয়ী দলটিকে নিয়ে হেক্সা মিশনের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত নেইমার।
গতকাল সোমবার (৭ নভেম্ভর) ব্রাজিল কোচ তিতে কাতার বিশ্বকাপের জন্য ২৬ সদস্যের চূড়ান্ত দল ঘোষণা করে দিয়েছে। এই দলের অন্যতম মূল এই তারকা হিসেবে নেইমারকে প্রশংসায় ভাসিয়েছে। তাকে নিয়ে দারুন আশাবাদীও তিতে। স্কোয়াড ঘোষণার পর তিনি বলেন, ‘নেইমার এখন উড়ছে। বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে সে যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলেছে তার ফল মাঠে পাওয়া যাচ্ছে।’
কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে পুরো ব্রাজিল দল ছিল অপ্রতিরোধ্য। দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে সবার আগে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছিল তারা। বাছাইপর্বে নেইমার নিজে আট গোল করার পাশাপাশি সতীর্থদের দিয়েও করিয়েছেন আরো আট গোল। আর এর মাধ্যমে জাতীয় দলের দুই সতীর্থ রিচার্লিসন ও লুকাস পাকুয়েতার সাথে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
ব্রাজিলের সাবেক লিজেন্ড কাফু বলেছেন, ‘নেইমার যেহেতু ভালো ফর্মে আছে সে কারণে এবার আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনাও আছে। কারণ সে এমন একজন খেলোয়াড় যে সহজেই প্রতিপক্ষের সাথে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।’
শেষ পর্যন্ত নেইমার যদি সফল হন তবে হয়তোবা ব্যালন ডি’অরের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে, কিন্তু মূলত তার লক্ষ্য অতীত বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতিগুলো ক্যারিয়ার থেকে মুছে ফেলা। গত বছর ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকায় তিনি দলে ফিরেছিলেন। কিন্তু মারাকানা স্টেডিয়ামে চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ফাইনালে দলকে জয় উপহার দিতে পারেননি।
এ পর্যন্ত ক্যারিয়ারে জাতীয় দলকে ২০১৩ কনফেডারেশন্স কাপ ও ২০১৬ রিও অলিম্পিক গেমসে স্বর্ণ উপহার দেয়া ছাড়া আর কোনো সাফল্য নেই নেইমারের। ফলে বিশ্বকাপের শিরোপা উঁচিয়ে ধরতে কোনো কমতি রাখছেন না এই তারকা। তাই বিশ্বকাপে কি হয়, এটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে ১৮ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।