চট্টগ্রাম আসন ১
আ.লীগের অবস্থান শক্ত, বিএনপিতে একাধিক প্রার্থীতে দ্বিধাদ্বন্দ্বে কর্মীরা
চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে বড় দু’দলের মনোনয়ন দৌড়ে রয়েছেন, একাধিক প্রার্থী। তবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড কাজে লাগিয়ে শক্ত অবস্থান আওয়ামী লীগে বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোশররফ হোসেনের। অপরদিকে বিএনপি’র চার সম্ভাব্য প্রার্থী নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে তৃণমূল কর্মীরা।
মিরসরাই উপজেলা ও দু’টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম এক আসন। বেশ কয়েকটি শিল্প কারখানা, অর্থনৈতিক অঞ্চল ও পর্যটন স্পট রয়েছে মিরসরাইয়ে। গুরুত্বপূর্ণ আসনটির বর্তমান এমপি গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। স্বাধীনতার পর পাঁচবার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এবারো পেতে চান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। কোনও কারণে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ নির্বাচন করতে না পারলে তার ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলও আছেন মনোনয়নের প্রত্যাশায়।
এছাড়া নৌকার টিকেট পেতে জোর তদবির চালাচ্ছেন, আওয়ামী লীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন ও ব্যবসায়ী নিয়াজ মোরশেদ। সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সামনে রেখে জনগণের কাছে যাচ্ছেন তারা।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচন সামনে রেখে এ আসনে দলীয় কোন্দল নতুন কোনও ঘটনা নয়। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে হারিয়ে এমপি হন বিএনপির প্রার্থী এম এ জিন্নাহ। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধ এমনই তুঙ্গে ওঠে যে বিএনপি থেকে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ আসনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। পরে অবশ্য উপনির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী এম এ জিন্নাহকে পরাজিত করেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন।
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির এম এ জিন্নাহ পুনরায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০০৪ সালে তিনি বিএনপি ছেড়ে এলডিপিতে যোগ দিলে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হওয়ায় হালে হাওয়া পাননি বিএনপির প্রার্থী প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী। ওই নির্বাচনে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এমপি হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে দলের 'অটো চয়েস' ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তবে এবার ফের নির্বাচন করলে দলীয় কোন্দল ফ্যাক্টর হতে পারে হেভিওয়েট এই প্রার্থীর জন্য। বিকল্প হিসেবে ছেলে মাহবুবুর রহমান রুহেলকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছেন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ।
বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে বাবার পাশাপাশি সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে রুহেলের। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ বেড়েছে তার।
গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন বলেন, মানুষ অবশ্যই আওয়ামী লীগকে আবার ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবে। কারণ মানুষ এখন দু’বেলা খেতে পারছে। মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে। মানুষ এখন শান্তিতে ঘুমাতে পারছে।
আসনটিতে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন বলেন, মিরসরাইয়ের মানুষ আমাকে এমপি হিসেবে দেখতে চায়, দলীয় নেত্রী যদি আমাকে নমিনেশন দেয় তাহলে আমি অবশ্যই জিতব।
এদিকে বিএনপির টার্গেট হারানো আসনটি পুনরুদ্ধার করা। তবে
বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় অনেক ভাগে বিভক্ত তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তবে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে তৃণমূল থেকে প্রার্থী ঘোষণা করা হবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
এরই মধ্যে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। জাসাসের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী ও প্রফেসর কামালও দল থেকে নমিনেশন চাইবেন জানা যায়।
বর্তমান মিরসরাই উপজেলার চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে মিরসরাই আসটিতে বিজয় এনে দলীয় নেত্রীকে উপহার দেব। যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপির বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। কিভাবে জিততে হয় তা আমাদের জানা আছে।
মিরসরাই জাসাসের সাধারণ সম্পাদক শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, আমি দলীয় মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জিতব। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মিরসরাই এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাব।
এই আসনটির মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৯ হাজার ৫৪৫ জন। এলাকার জনগণ বলছে, এলাকার উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে এমন জনপ্রতিনিধি চান তারা।
আরও পড়ুন :
- খালেদা জিয়াকে মুক্ত করেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করব: মওদুদ
- উসকানিতে পা দিয়ে পাল্টা কর্মসূচি দেবে না আওয়ামী লীগ
এসএস
মন্তব্য করুন