কোথা থেকে পদত্যাগের ইমেইল পাঠালেন মুরাদ?
নায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে অশ্লীল ও যৌন হয়রানিমূলক কথোপকথনের কল রেকর্ড, বিকৃত, বর্ণবাদী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নারী নেত্রীদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন ডা. মো. মুরাদ হাসান। যিনি আজ মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিতে সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ইমেইলে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরের পর থেকেই ডা. মুরাদের হদিস মিলছে না। তবে কোথায় অবস্থান নিয়ে তিনি আজ পদত্যাগপত্রের ইমেইল পাঠিয়েছেন, এই প্রশ্নের উত্তর জানা নেই কারো!
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল সোমবার (৬ ডিসেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন তিনি। তবে এটিও শতভাগ নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা দেশের প্রথম সারির একটি অনলাইন নিউজপোর্টালকে বলেন, ডা. মুরাদ চট্টগ্রামের উদ্দেশে গতকাল সোমবার দুপুরেই ঢাকা থেকে রওনা দিয়েছিলেন। সেখানে তার একজন বন্ধুর বাসায় ওঠার কথা। বর্তমানে তার ফোন বন্ধ রয়েছে। তাই তার সঠিক অবস্থান জানি না।
এদিকে, গতকাল সোমবার এবং আজ মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরেও আসেননি প্রতিমন্ত্রী। তাছাড়া তিনি ঢাকার নিজ বাসায়ও নেই। এদিন বিকেল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর তোপখানা রোডে অবস্থিত বাংলাদেশ শিশুকল্যাণ পরিষদে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানেও আসেননি তিনি।
আরটিভি নিউজের পক্ষ থেকে দিনভর একাধিকবার ফোন করা হলেও ধরেননি ডা. মুরাদ। তবে সর্বশেষ রাত ১১টায় তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসানকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার রাতে তাকে পদত্যাগের এ নির্দেশ দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের বিষয়ে প্রতিমন্ত্রীকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছেও বলে জানান তিনি। কাদের জানান, আগামীকাল মঙ্গলবারের মধ্যে মুরাদ হাসানকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
সম্প্রতি একটি ভার্চুয়াল টকশোতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যাকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন ডা. মুরাদ। এরপর তার সমালোচনা করেন অনেকে। এছাড়া তার পদত্যাগের দাবিও ওঠে।
এছাড়া ডা. মুরাদ হাসান ও চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির মধ্যকার কথোপকথনের যে কল রেকর্ড ফাঁস হয়েছে তা ইতোমধ্যে টক অব কান্ট্রিতে পরিণত হয়েছে। অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায়, এই নায়িকাকে অশ্লীল ইঙ্গিত দিয়ে ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে তাৎক্ষণিক তার কাছে যেতে বলছেন ডা. মুরাদ। নায়িকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও গুলি করার হুমকি দিচ্ছেন তিনি। এ ছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যদের দিয়ে নায়িকা মাহিকে ধরিয়ে হয়রানির হুমকিও দেন এই প্রতিমন্ত্রী।
মূলত, ওই কল করা হয়েছিল চিত্রনায়ক ইমনের ফোনে। ওই মুহূর্তে একটি সিনেমার বিষয়ে মিটিং করছিলেন ইমন ও সেই নায়িকা। সঙ্গে ছিলেন পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমনও। ফোনকল রেকর্ড নিয়ে যখন তোলপাড়, তখন স্বাভাবিকভাবেই ইমনের নামটিও উঠে আসছে আলোচনায়। তবে ওই পরিস্থিতিতে মন্ত্রীকে কেবল সামাল দিতে চেয়েছিলেন বলেই আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন ইমন।
ইমন বলেন, কল রেকর্ডে তো পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, আমি হয়তো শুটিংয়ে ছিলাম, ব্যস্ততার জন্য তার (প্রতিমন্ত্রী মুরাদ) ফোন ধরতে পারিনি। এ কারণে তিনি সে রাতে ফোন দিয়ে রাগারাগি করেন। ওই সময়ে আমি আর ও (নায়িকা) ‘ব্লাড’ সিনেমা নিয়ে একটা মিটিং করছিলাম পরিচালক সুমন ভাইয়ের সঙ্গে। তখন তিনি (প্রতিমন্ত্রী) আমাদেরকে যেতে বলেন। এখন পরিস্থিতি সামাল তো দিতে হবে। আমরা তো একটি মিটিংয়ে ছিলাম। এ জন্য বারবার বলছিলাম, ‘ভাইয়া দুই মিনিট, নামতেছি।’
ইমন আরও বলেন, উনার মতো একজন মন্ত্রীর সঙ্গে তো আমি ভদ্রভাবে ছাড়া খারাপভাবে কথা বলতে পারি না। আমার এখানে কী দোষ? একজন মন্ত্রী যদি ফোন দেয়, আমি কী বলতে পারি? এত বড় একজন মানুষ, আমি থতমত খেয়ে গেছি।
ইমন জানান, এই ঘটনা ২০২০ সালের মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহের। ওই রাতে মিটিং শেষ করে ইমন ও নায়িকা নিজ নিজ বাসায় চলে যান। এর কিছুদিন পরই শুরু হয় করোনার প্রকোপ। লকডাউনের কারণে সবার মতো ঘরবন্দি হয়ে যান তারাও।
কেএফ/টিআই
মন্তব্য করুন