মহান বিজয় দিবস ও সাপ্তাহিক ছুটিসহ টানা তিন দিনের ছুটিতে পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেছে রুপের রানী খ্যাত পার্বত্য জেলা রাঙামাটি। জেলা শহরের মূল পর্যটন কমপ্লেক্সসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে পর্যটকদের সরব উপস্থিতি। খালি নেই শহরের হোটেল-মোটেলগুলো। বাসের টিকেটও হয়ে গেছে অগ্রিম বুকিং।
বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার (১৭ ডিসেম্বর) ঝুলন্ত ব্রিজ, পলওয়েল পার্ক, রাঙামাটি পার্ক, শহীদ মিনার, ডিসি বাংলো, আরণ্যক হলিডে রিসোর্টসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা যায়, বহু লোকের সমাবেশ পর্যটন স্পটগুলো। ছুটির দিন হওয়াতে পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। তবে শহরের বাহিরের থেকে আগত পর্যটকদের সংখ্যায় তুলনামূলক বেশি। পর্যটকদের বিষয়টা মাথায় রেখে অপরূপ সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পর্যটনকেন্দ্রগুলো।
ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটক কায়সার আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন কোথাও ঘুরতে যেতে পারিনি। টানা তিনদিন ছুটি পাওয়াতে পরিবার পরিজন নিয়ে রাঙামাটি বেড়াতে এসেছি। তবে এত বেশি পর্যটকদের ভিড় থাকবে সেটা ধারণা করতে পারিনি। তবে রাঙামাটির সৌন্দর্য্য দেখার পর অন্যান্য অসুবিধাগুলোর কথা ভুলে গিয়েছি।
রাজশাহী থেকে আসা পর্যটক রাহুল রাহা আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা পরিবার সহ এসেছি রাঙামাটি ভ্রমণে। তবে আবাসিক হোটেলগুলোতে সিট পেতে আমাদের অনেক কষ্ট পেতে হয়েছে। রাঙামাটি শহরকে আরও পর্যটনবান্ধব করতে আবাসিক হোটেলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের আহ্বান জানান তিনি।
পর্যটকদের মূল আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম কাপ্তাই হ্রদ। পাহাড় ঘেরা হ্রদের সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ছোট-বড় বোট ভাড়া করে ভ্রমণে বের হচ্ছেন। অনেকের কাপ্তাই হ্রদ ঘেষা স্পটে রাত্রিযাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।
রাঙামাটি পর্যটন ঘাটের ইজারাদার মো. রমজান আলী আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, করোনার ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য বিজয় দিবসের এই ছুটিকে সামনে রেখে আমরা আগাম প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। হ্রদ ভ্রমণসহ বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্রগুলো নৌপথে ভ্রমণের জন্য আমরা ছোট-বড় ট্যুরিস্ট বোটগুলো প্রস্তুত রেখেছিলাম। পর্যটকদের উপস্থিতি যথেষ্ট।
পর্যটকদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে শহরের টেক্সটাইল মার্কেটগুলোতেও। পর্যটক আকর্ষণে স্থানীয়ভাবে তৈরি বিভিন্ন পাহাড়ি পোশাক, পণ্য ও খাদ্য সামগ্রীর পসরা সাজিয়েছেন দোকানিরা। বুনন টেক্সটাইলের স্বত্বাধিকারীরা তুলি চাকমা আরটিভি নিউজকে জানিয়েছেন, শীত মৌসুমকে মাথায় রেখে আমরা বিভিন্ন পোশাক, ব্যাগ, আচার ও হাতে তৈরি পণ্য তুলেছি দোকানে। কাল থেকে যথেষ্ট পর্যটক আসছেন এবং বিক্রিও মোটামুটি ভালো।
আবাসিক হোটেলগুলোতে পর্যটকদের রুম না পাওয়া সম্পর্কে রাঙামাটি হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মঈনুদ্দিন সেলিম আরটিভি নিউজকে বলেন, তিন দিনের টানা বন্ধের কারণে শহরের সিংহভাগ হোটেলের রুমগুলোর শতভাগ বুকিং অনেক আগেই হয়ে গিয়েছিল। যারা বুকিং না করে শহরে প্রবেশ করেছেন তাদের রুম পেতে কষ্ট হচ্ছে। রাঙামাটি শহরে ৫৪টি হোটেল রয়েছে যা ১০ হাজার পর্যটক ধারণে সক্ষম। কিন্তু ছুটির কারণে পর্যটক সমাগম বেশি হওয়াতে অনেক পর্যটক রুম পাচ্ছেন না। তবে আশা করছি, এই সংকট খুব দ্রুতই কেটে যাবে।
রাঙামাটি পর্যটন কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৃজন কান্তি বড়ুয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, দীর্ঘদিন করোনা মহামারির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে পর্যটকরা আবারও রাঙামাটিতে আসতে শুরু করেছেন। এই ধারা অব্যাহত থাকলে দীর্ঘদিনের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়ে রাঙামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. হাসান ইকবাল আরটিভি নিউজকে বলেন, আমরা পর্যটকদের নিরাপত্তায় সর্বদা সচেষ্ট রয়েছি। জেলা পুলিশের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে পর্যটকদের।
এমআই/এসকে