রাজনৈতিকভাবে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে নির্বাচনের ৬ দিন আগে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির মুখ্য নির্বাচনী কর্মকর্তা অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সোলায়মানসহ ৫ নির্বাচনী কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন।
মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে একযোগে পদত্যাগ করেছেন তারা। এ কারণে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন পণ্ড হয়ে যায়। সমিতির পক্ষে থেকে অ্যাডহক কমিটি গঠন করবে।
এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি নির্বাচন উপলক্ষে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছিল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটি। ভোটাধিকার প্রয়োগের কথা ছিল মোট ৫ হাজার ৪০৪ আইনজীবীর। নির্বাচনে ২১টি পদে বিএনপি জামায়াত সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ ও আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ থেকে ৪০ জন প্রার্থী হয়েছিলেন।
৫ নির্বাচনী কর্মকর্তার পদত্যাগ করার কারণ হিসেবে চিঠিতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ নির্বাচনে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী ও বিজিবি মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশন ও জেলা আইনজীবী সমিতিতে দরখাস্ত দেয়।
অপরদিকে, বিএনপি ও জামায়ত জোট সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ নির্বাচন কমিশন বরাবর এক দরখাস্ত দিয়ে সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানান।
পদত্যাগপত্রে বলা হয়, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ও বিএনপি ও জামায়ত জোট সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের দুটো দরখাস্তই সমিতির গঠনতন্ত্র পরিপন্থী। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশন চায় না চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একজন সদস্যও সম্ভাব্য কোনো পরিস্থিতির কারণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বা সেনাবাহিনীর হাতে লাঞ্ছিত হোক।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদ্য পদত্যাগ করা নির্বাচনী কর্মকর্তারা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন সম্ভব বলে মনে হয়নি। দুইটি প্যানেলই গঠনতন্ত্রবিরোধী দাবিতে অনড়। আমরা চাই না চট্টগ্রামের শতবছরের আইনজীবীদের সম্প্রীতিতে ফাটল ধরুক বা নির্বাচনকে ঘিরে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা ঘটুক। তাই আমরা পাঁচ নির্বাচনী কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগ করেছি।
নির্বাচনের বিষয়ে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ১৩২ বছরের চট্টগ্রামের বারের ইতিহাসে এই প্রথম নির্বাচন হচ্ছে না। এটি খুবই দুঃখজনক। এটির জন্য আমরা সিনিয়ররা দায়ী। দলমত নির্বিশেষে সবার মধ্যে যে ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল, সেটি হারিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনী কর্মকর্তাগণ পদত্যাগ করায় নির্বাচন পণ্ড হয়ে গেছে। বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ায় আগামী ১১ কিংবা ১২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সভায় পাঁচ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি গঠিত হবে। আগামী দুই মাসের মধ্যে তারা নির্বাচনের ব্যবস্থা করে নির্বাচিত কমিটির কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
নির্বাচনে প্রতিপক্ষকে বাধা দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার বলেন, পরাজয় জেনে অনেকে পিছু হটেছে। আমরা প্রচারে কাউকে বাধা কিংবা ভয়ভীতি দেখাইনি। আমরা সবসময় সুষ্ঠু ভোট ও গণতন্ত্রের পক্ষে বলেও মন্তভ্য করেন তিনি।
অন্যদিকে, সমন্বয় পরিষদের সভাপতি প্রার্থী অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ বলেন, গত ২৬ জানুয়ারি আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদের প্রার্থীদের প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও যাতে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা। পরিকল্পিতভাবে নির্বাচন পণ্ড করা হয়েছে। পরাজয় জেনে অনেকে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
আরটিভি/কেএইচ