স্বামীর লাশ দাফনে স্ত্রীর বাধা

আরটিভি নিউজ

সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫ , ০৬:২৬ পিএম


স্বামীর লাশ দাফন আটকে দিলেন স্ত্রী
ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় স্ত্রীকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করে প্রথমপক্ষের সন্তানরা নিজেদের নামে সম্পত্তি লিখে নেওয়ার অভিযোগে স্বামী মাজেদ বিশ্বাসের দাফনকাজ আটকে দিয়েছেন দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুর বেগমসহ তার আত্মীয়-স্বজনরা। বিষয়টি জানাজানি হলে সালিশ বৈঠকে বসেন এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সিদ্ধান্ত হয়েছে, মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করার পর লাশ দাফন হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৮ এপ্রিল) চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার সুন্দরপুর ইউনিয়নের মরাপাগলা এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে।

জানা যায়, মাজেদ বিশ্বাসের প্রথম স্ত্রী মারা যান প্রায় বিশ বছর আগে। পরে হামফুল বেগম নামে এক নারীকে বিয়ে করেন তিনি এবং এই সংসারে কোনো ছেলে মেয়ে হয়নি। প্রায় ছয় মাস আগে মাজেদ বিশ্বাস শর্য্যাশয়ী হলে পুলিশে চাকরিরত তার দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বার চিকিৎসার কথা বলে তার বাবাকে অন্য জায়গায় নিয়ে যান এবং সেখানে বাবার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে নেন। এর মধ্যে গত ১৬ এপ্রিল মাজেদ বিশ্বাসের তালাকনামা ওকিল নোটিশের মাধ্যমে হামফুল বেগমের কাছে পাঠানো হয় এবং হামফুল বেগম সেটি গ্রহণ করেননি। এ নিয়ে হামফুল বেগম স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর অভিযোগ দিলে আগামী ৫ মে গ্রাম্য সালিশের দিন নির্ধারণ হয়। 

বিজ্ঞাপন

কিন্ত গত রোববার (২৭ এপ্রিল) মাজেদ বিশ্বাস রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। লাশ দাফনের জন্য তার দুই ছেলে গ্রামের বাড়ি নিয়ে এলে মাজেদ বিশ্বাসের দ্বিতীয় স্ত্রী হামফুল বেগম এলাকবাসীকে সাথে নিয়ে দাফনে বাধা দেন। এ ঘটনায় সকাল সাড়ে ৮টার দিকে সালিশে বসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

এলাকাবাসীরা জানান, মারা যাওয়ার কিছুদিন আগে মাজেদ বিশ্বাস আসুস্থ ছিলেন। সে সময় তার ছেলেরা তাকে চিকিৎসা করানোর কথা বলে নিয়ে গিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীকে (সৎ মাকে) তালাক দেওয়ায় এবং তার সব সম্পত্তি ছেলেরা নিজের নামে লিখে নেয়। এর মধ্যে মাজেদ মারা যায় এবং তার ছেলেরা দাফন কাফনের জন্য লাশ নিয়ে আসে। কিন্ত তার ছেলেরা জমি লিখে নেওয়ার কারণে দ্বিতীয় স্ত্রী দাফন কাফনে বাধা দেয়। এ জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা সালিশে বসেছে। সালিশে সিদ্ধান্ত হয়েছে, সব জমি আইন অনুযায়ী বণ্টন হবে। আমরা এলাকাবাসী সুষ্ঠ বিচার চাই এবং লাশ ভালোভাবে দাফন হোক এটাই চাই।

হামফুল বেগমের ভাতিজি বলেন, আমার ফুফুর বিয়ে হওয়ার ২০ বছর হলো। কিছুদিন আগে আমার ফুফাকে চিকিৎসা করার নাম করে নিয়ে গিয়ে আমার ফুফুকে তার সৎ মেয়ের বাড়িতে জোর করে নামিয়ে দেয় এবং সেখানে আটকে রাখে। পরে এশার পরে আমার আব্বা গিয়ে ফুফুকে পুলিশের সহায়তায় উদ্ধার করে নিয়ে আসে। পরে জানতে পারি আমার ফুফুকে আমার ফুফা তালাক দিয়েছে। কিন্ত আমার ফুফার কোনো হুঁশ-জ্ঞান নেই। তাহলে কীভাবে এই অবস্থায় আমার ফুফুকে তালাক দেবে? আমার ফুফুর কেউ নেই। তিনি একজন অসহায় মানুষ। তাই আপনাদের কাছে সঠিক বিচার চাই।

বিজ্ঞাপন

হামফুল বেগম বলেন, ২০ বছর আগে আমার বিয়ে হয়। দ্বিতীয় সংসারে এসে আমার সৎ ছেলেগুলোকে মানুষ করি এবং তারা সরকারি চাকরি পেয়েছে। এখন তারা ভালোভাবে জীবনযাপন করছে। এই সংসারে এসে আমার স্বামীর সেবা-যত্ন ভালোভাবে করেছি। কিছুদিন আগে আমার ছেলেরা প্রায় ১০ লাখ টাকার গাছ বিক্রি করেছে, তাও কিছু বলিনি। তারপরে আমার স্বামীকে হঠাৎ করে ডাক্তারের কাছে নিয়ে চলে গেল এবং সেখানে আমার ছেলেরা জোর করে তাদের নামে মাটি লিখে নিয়েছে। তারপরে আমার স্বামীর হুঁশ না থাকা অবস্থায় আমাকে তালাক দিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি আমার স্বামী তালাক দেবে না। এটা ছেলেরা করিয়েছে। তাই আমি নায্য বিচার চাই।

বিজ্ঞাপন

তবে এই বিষয়ে দুই ছেলে লতিফুর রহমান ও জাব্বারের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তারা বক্তব্য দিতে রাজি হয়নি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্ত (ওসি) মতিউর রহমান বলেন, খবর পেয়ে পুলিশের একটি টিম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। যতটুকু শুনেছি যিনি মারা গেছেন তার দুটি পক্ষ আছে। একটি পক্ষের ছেলেরা তাদের বাবাকে চিকিৎসা করার নাম করে নিয়ে গিয়ে জায়গা জমি লিখে নিয়েছে। এই নিয়ে মাজেদ বিশ্বাস মারা গেলে এক পক্ষ লাশ দাফনে বাধা দেয়। এ নিয়ে দুই পক্ষকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসা করেছে এবং সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে আগামীকাল উভয়পক্ষের অংশীদারদের মাঝে জমি সমবণ্টন করে তারপর লাশ দাফন করা হবে।

আরটিভি/একে-টি

আরটিভি খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিজ্ঞাপন
Advertisement
Advertisement

Loading...


© All Rights Reserved 2016-2025 | RTV Online | It is illegal to use contents, pictures, and videos of this website without authority's permission