শাফিন আহমেদের মৃত্যুতে স্তব্ধ শিল্পীরা
আর কখনও মঞ্চে ফেরা হবে না ব্যান্ড তারকা শাফিন আহমেদের। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় ভোর ৬টা ৫০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে আমেরিকার ভার্জিনিয়ার একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
শাফিন আহমেদের এভাবে চলে যাওয়ার খবরে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সংগীতাঙ্গনে। গায়কের মৃত্যুর খবরটি মানতে পারছেন না তার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সহকর্মী এবং ব্যান্ড আন্দোলনের সহযোদ্ধারা।
রেনেসাঁ ব্যান্ডের শিল্পী, গীতিকার, সুরকার নকীব খান বলেন, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে এরকম একটা খবর পাব কখনও কল্পনাও করিনি। আমাদের জন্য তার মৃত্যুর খবর মেনে নেওয়া কঠিন। কিছু বলার ভাষা নেই ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।
শাফিনের অনেক কনট্রিবিউশন আছে ব্যান্ড মিউজিকে। সে নিজে গান লিখত, সুর করত, নিজেই গাইত। সে খুব ভালো একজন মিউজিশিয়ান ছিল। ভালো গিটার বাজানো থেকে শুরু করে সে নিজেই একটা ব্যান্ড ছিল। আমাদের মাঝ থেকে থেকে এ ধরনের প্রতিভা চলে যাওয়া এটা আসলে ভাবতে পারছি না। আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করছি।
ফিডব্যাক ব্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সংগীত পরিচালক ফোয়াদ নাসের বাবু বলেন, সকাল সকাল এমন একটা খবর পাব, যেটা খুবই মর্মাহত করেছে আমাদের। প্রথম শোনায় বিশ্বাস হয়নি। এখনও মনে হচ্ছে খবরটা হয়তো ভুল হতে পারে। শাফিন আহমেদের গান শ্রোতাদের হৃদয় ছুঁয়েছিল। তার আকস্মিক মৃত্যুতে ভীষণ শোকাহত আমরা।
নব্বই দশকে ব্যান্ড সংগীতে মাইলসের পাশাপাশি জনপ্রিয় ছিল ব্যান্ডদল ‘সোলস’। ব্যান্ডগুলোর গড়ে ওঠা, বেড়ে ওঠা, যোগাযোগ, একসঙ্গে স্টেজ পারফরম্যান্সের অনেক স্মৃতিই রয়েছে দুই দলের। শাফিন আহমেদের মৃত্যুর খবরে শোকাহত সোলসের পার্থ বড়ুয়া। তিনি বলেন, এই মুহূর্তে তার কিছু বলার ভাষা নেই।
বাংলাদেশের সংগীত অঙ্গনের দুই মহারথী সংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগম এবং সুরকার কমল দাশগুপ্তের ছেলে শাফিন আহমেদ। পারিবারিক ঐতিহ্যের কারণে ছোটবেলা থেকেই গানের আবহে বেড়ে ওঠেন তিনি। বাবার কাছে উচ্চাঙ্গ সংগীত আর মায়ের কাছে নজরুলগীতি শিখেছেন।
বড় ভাই হামিন আহমেদের সঙ্গে ইংল্যান্ডে পড়তে গিয়ে পশ্চিমের সংগীতের সঙ্গে সখ্য হয় শাফিন আহমেদের। শুরু হয় এই গায়কের ব্যান্ড সংগীতের যাত্রা। ১৯৭৯ সালে একরকম শখের বশেই গড়ে তোলেন ব্যান্ড দল ‘মাইলস’। প্রথম কয়েক বছর বিভিন্ন পাঁচতারা হোটেলে ইংরেজি গান গাইতেন তারা। পরে মাইলসের বাংলা গানের প্রথম অ্যালবাম বের হয় ১৯৯১ সালে।
মাইলসের সঙ্গে তিন দশকের পথচলার সমাপ্তি টেনে ২০১০ সালের জানুয়ারি মাসে বেরিয়ে আসেন শাফিন আহমেদ। তবে তার সংগীত যাত্রা চলতে থাকে। তার বিভিন্ন সলো অ্যালবামও জনপ্রিয় হয়।
পরে নিজের ব্যান্ড দল ‘ভয়েস অব মাইলস’ গড়ে তোলেন তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সেই দলকেই এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছিলেন শাফিন। তবে খুব বেশি দূর যাওয়ার আগেই সবাইকে কাঁদিয়ে চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
মন্তব্য করুন