বয়ঃসন্ধির সময়ে সকলের শরীরে নানারকম বদল আসে। সেই বদলের মধ্যে অন্যতম হলো গলার স্বর বদলে যাওয়া। এই ভোকাল পরিবর্তনের পেছনে কী কারণ রয়েছে সে নিয়ে আলোচনা করেছেন ডক্টর ক্লোডিও মিলস্টেইন। তিনি বলেছেন, ‘বড় হওয়ার সময় ছেলেদের গলার স্বর বদলাতে শুরু করে, এর জন্য নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। অনেকসময় এই কারণে পরবর্তীকালে কণ্ঠস্বর দুর্বল হয়ে যায়।’
এই রকম যদি কোনও সমস্যার সম্মুখীন হন, তাহলে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা দরকার।
বয়ঃসন্ধিতে গলার স্বর বদলানোর কারণ হলো এই সময়েই বাচ্চার কৈশোর থেকে যৌবনে পা দেয়। গলার স্বর বদলে যাওয়াই হলো গৌণ যৌন বৈশিষ্ট্য। ১২-১৬ বছরের ছেলেদের মধ্যে এই পরিবর্তন দেখা যায় আর মেয়েদের ক্ষেত্রে ১০-১৪ বছরের মধ্যেই হয় এই পরিবর্তন। বিভিন্ন শারীরিক পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় গলার স্বরও।
ড. মিলস্টেইন বিষয়টা ব্যাখা করে বলেন, ‘বয়ঃসন্ধির আগে ল্যারিনেক্স বা ভয়েস বক্সটি গলার ওপরে অবস্থান করে কিন্তু বয়ঃসন্ধির সময়ে গলার স্বর ভারী হয়ে আসে। ল্যারিনেক্সটিও চলে যায় ঘাড়ের নিচে। এর ফলে আপনার ভোকাল কর্ডগুলো আরও ঘন ও প্রসারিত হয়।’
মেয়েদেরও কণ্ঠস্বর পরিবর্তিত হয় এই সময়ে, তবে তা খুব বেশি প্রকট হয় না। সাধারণত ১৭ বছর বয়সে এসে পুরো ব্যাপারটা স্থিতিশীল হয়। যদি এই সময়ের মধ্যে কোনও কিশোরের কণ্ঠস্বরের স্বাভাবিক পরিবর্তন না হয়, বা যৌন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ না পায় তাহলে বুঝতে হবে তার হরমোনাল সমস্যা রয়েছে। যেমন ড. মিলস্টেইন বলেছেন যে মেয়েদের ক্ষেত্রে স্তনের বৃদ্ধি বা ছেলেদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষের বৃদ্ধি না হলেও সেটা হয় হরমোনাল সমস্যার জন্য। এই ঘটনাগুলো ঘটলে সঙ্গে সঙ্গেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
শুধু যে বয়ঃসন্ধির সময়ে গলার স্বর বদলায় এমন নয়, বার্ধক্যের সময়েও বদলে যায়। বয়সের কারণে গলায় নমনীয়তা হারিয়ে যেতে পারে। এমনকি ল্যারিঙ্সের জয়েন্টগুলোও কড়া হয়ে যেতে পারে। এর ফলে অনেকেরই কারটিলেজ ক্যালসিফাই হয়। কখনও কখনও গলার পেশিগুলো দুর্বল ও পাতলা হয়ে যায় ফলে বদলে যায় গলার স্বর।
কখনও কখনও অসুস্থতার কারণেও বদলে যায় গলার আওয়াজ। নার্ভের সমস্যা, ম্যালিগন্যান্টে ক্ষত ইত্যাদির কারণেও ভোকাল কর্ডের নানা সমস্যা হয়।
তবে গলার স্বর বদলে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়ার জন্য অনেকেই নিজেকে সমাজবিচ্যুত করে রাখেন। এটা মনের ওপরেও খারাপ প্রভাব ফেলে। ঠিক মতো স্পিচ থেরাপি করলেই সমস্যার সমাধান করা যায়। যেমন, প্রতিদিন অনেক কথা বলা, প্রয়োজনে ভোকাল কর্ডের মাইক্রোসার্জারি। এমনকি ভোকাল কর্ডগুলোকে আগের মতো করে তুলতে নতুন ভোকাল কর্ড প্রতিস্থাপনও করা যায়।
সূত্র: দ্য ওয়াল